Advertisement
E-Paper

আরব সাগরের তীরে রো-হিট ঝড়ে কুপোকাত ক্যারিবিয়ানরা

রোহিত শর্মার শত্রু শিবিরের কাছে যে তা মোটেই সুখকর নয় , বরং বেশ ক্ষতিকর, তা সোমবার সন্ধে হতেই বোঝা গেল। যখন স্কোরবোর্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাশে দেখা গেল ৭৭-৭।

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৩৩
রোহিতের পারফরম্যান্স মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখল তাঁর ‘আমচি মুম্বই’। ছবি: এএফপি।

রোহিতের পারফরম্যান্স মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখল তাঁর ‘আমচি মুম্বই’। ছবি: এএফপি।

ওরলির সবচেয়ে উঁচু অ্যাপার্টমেন্ট আহুজা টাওয়ারে ২৯ তলার যে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি, তার বিশাল ড্রইংরুমে একটা পিয়ানো রয়েছে। যা কখনও বাজাননি রোহিত শর্মা। কারণ, তিনি পিয়ানো বাজাতে পারেন না।

কে বলল, তিনি পিয়ানো বাজাতে পারেন না?

সোমবার আরব সাগর পাড়ে ক্রিকেট মঞ্চে রোহিত হাজার পঁচিশ ক্রিকেটপ্রেমীর সামনে যে পারফরম্যান্স দেখালেন, তা নিখুঁত পিয়ানো বাজানোর চেয়ে কম শৈল্পিক নয়। ব্যাট হাতে রোহিতের এই পারফরম্যান্স মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখল তাঁর ‘আমচি মুম্বই’। ছ’হাজার বর্গফুট ফ্ল্যাটের বারান্দায় বসে যে আরব সাগরের দিকে তাকিয়ে মন ভাল করেন তিনি, সেই আরব সাগরের তীরেই যেন ঝড় তুললেন ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়ক। কুড়িটা চার ও চারটি ছক্কা-সহ তাঁর ১৩৭ বলে ১৬২ রান দেখে এ দিন ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে থাকা মুগ্ধ সচিন তেন্ডুলকর টুইট করলেন, ‘‘যে রকম সহজে তুমি সেঞ্চুরি করো, তা দেখাটা সত্যিই আনন্দের।’’

আনন্দ তো তাঁর শুভাকাঙ্খীদের। কিন্তু রোহিত শর্মার শত্রু শিবিরের কাছে যে তা মোটেই সুখকর নয় , বরং বেশ ক্ষতিকর, তা সোমবার সন্ধে হতেই বোঝা গেল। যখন স্কোরবোর্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাশে দেখা গেল ৭৭-৭। গ্যালারিতে থাকা কোনও এক দর্শক সেই ছবিটা তুলে নিয়ে টুইটারে পোস্ট করে দিয়ে লিখলেন, ‘‘দ্য ফিগার টু রিমেম্বার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ’। মানে এই সংখ্যাগুলো মনে রেখো, ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২২৪ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সিরিজে ফের এগিয়ে গেল ভারত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে সিরিজ জিততে পারছে না, তা নিশ্চিত করলেন বিরাটরা। তবে তিরুঅনন্তপুরমে সিরিজের শেষ ম্যাচে সিরিজ ড্র করার একটা সুযোগ হোল্ডারদের সামনে রয়েছে। কিন্তু ভারতের এই পারফরম্যান্সের পরে সে কথা আর তাঁরা ভাবতে পারবেন কি না, সেটাই প্রশ্ন।

চতুর্থ ওয়ান ডে-তে ভারতের ৩৭৭ রানের পাহাড়ের নীচে ছটফট করা ক্যারিবিয়ানদের দেখে এ দিন মনে হল, তাঁরা ময়দান ছেড়ে যেতে পারলেই বাঁচেন। এমনকী ভারতে এসে তারকা হয়ে ওঠা শেই হোপ ও শিমরন হেটমায়ারও যথাক্রমে ২ ও ১১ বলের বেশি টিকলেন না। ভুবনেশ্বর কুমার ও যশপ্রীত বুমরার বোলিংয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেন তাঁরা। রাত হওয়ার আগেই ভারতের জয় নিশ্চিত জেনে ঘরে ফিরে গেলেন অর্ধেকের বেশি দর্শক।

গত দুই ম্যাচে ভারতকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছোড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন হোল্ডার ব্যাট হাতে রোহিতের এই ধংসলীলা দেখে শুধু বলে গেলেন, ‘‘আজ ওদের দিন ছিল। আমাদের তাই কিছুই করার ছিল না।’’

গুরু-শিষ্য: এক ফ্রেমে ১৬২ আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। সোমবার ব্রেবোর্নে টসের আগে বিরাট কোহালির সঙ্গে সচিন তেন্ডুলকর। ঘণ্টা বাজিয়ে এই ওয়ান ডে ম্যাচ শুরু করেন সচিন। ছবি: পিটিআই।

মুম্বইয়ে ভারতের জার্সি গায়ে তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি পাঁচ বছর আগে, ২০১৩-র নভেম্বরে। তার পরে আরও চারবার ভারতের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছেন এই কয়েক বছরে। কিন্তু পঞ্চাশও পেরোতে পারেননি কখনও। নিজের শহরে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে পারেননি তিনি। দেশের মাঠে বিশ্বকাপের দলেই ছিলেন না। তাঁর ছোটবেলার মাঠ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম দেশের জার্সি পরে নামা হিটম্যানকে যে ভাবে বারবার খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে, তাতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ক্যাপ্টেন হয়েও তাঁর কাছে মরুভূমির মতো হয়ে উঠেছিল যেন এ শহর। ব্রেবোর্ন কিন্তু খালি হাতে ফেরায়নি। এমন শৈল্পিক অথচ বিধ্বংসী রোহিতকেই তো দেখতে চায় ক্রিকেটবিশ্ব। ওয়ান ডে ক্রিকেটে যার স্ট্রাইক রেট ৯০-এর আশপাশে, তাঁকে এই মেজাজেই মানায়।

সোমবার বিরাট কোহালি ১৬ রান করে স্টাম্পের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যাওয়ার পরে ধোনিও হতাশ করেন। সবাইকে ছাপিয়ে যাবতীয় শব্দব্রহ্ম টেনে নেন একা রোহিতই। ‘রো...হি...ত, রো...হি...ত’ আওয়াজে মেরিন ড্রাইভে হয়তো কেউ কম্পন অনুভব করেছেন।

একই দিনে এক সঙ্গে দুই কিংবদন্তির নজির ছুঁলেন ও পেরিয়ে গেলেন তিনি। ওয়ান ডে-তে ছয়ের সংখ্যার দিক থেকে সচিন তেন্ডুলকরকে (১৯৫) পিছনে ফেলে দিলেন ও ভারতীয় ওপেনার হিসেবে সেঞ্চুরিতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে (১৯) ছুঁয়ে ফেললেন। এই নিয়ে গত ন’টি সিরিজের সবক’টিতেই সেঞ্চুরি করলেন!

এই ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখে যিনি তাঁকে ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন, সেই দিলীপ বেঙ্গসরকর এ দিন ফের বলে দিলেন, ‘‘আমি যে ঠিক কথাই বলেছিলাম, তা নির্বাচকেরাই প্রমাণ করেছেন, রোহিতকে অস্ট্রেলিয়াগামী টেস্ট দলে রেখে।’’

এ দিন অম্বাতি রায়ডু রোহিতের সঙ্গে ২১১ রানের পার্টনারশিপ গড়েন ৮১ বলে ১০০ রান করে। আটটা চার ও চারটি ছয় মেরে। স্ট্রাইক রেটে তিনিই এগিয়ে ছিলেন রোহিতের থেকে। বিরাটের চার নম্বর ব্যাটসম্যান নিয়ে সমস্যার সমাধান করে দিলেন তিনি। ভুবনেশ্বর কুমার, যশপ্রীত বুমরাও ফর্মে ফিরলেন। আর চিন্তা কী?

অনেকগুলো চিন্তা একই দিনে কাটিয়ে দিলেন বিরাট-সঙ্গীরা।

Cricket Rohit Sharma India-West Indies রোহিত শর্মা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy