চেন্নাইয়ানের প্রথম গোল।
দু’দল যখন মাঠে নামছে, টিভিতে একটা ফ্রেমে হঠাৎ-ই চোখটা আটকে গেল। বন্যাবিধ্বস্ত চেন্নাইয়ের মানুষের জন্য চেন্নাইয়ান ফুটবলাররা ওদের জার্সির উপর সাদা ভেস্টের বুকে ‘প্লে ফর চেন্নাই’ লিখে মাঠে নেমেছিল।
কেন জানি না মনে তখনই একটা কু ডেকেছিল! এ রকম অনুপ্রেরণামূলক পরিস্থিতিতে প্লেয়ারদের বাড়তি অ্যাড্রিনালিন বেরোয়। আর এ ভাবে ফুটবলার তাতাতে মাতেরাজ্জি এক নম্বর। বিশ্ব ফুটবলের একটুআধটু খবরাখবর রাখার সুবাদে জানি, সেই ইতালি ড্রেসিংরুম থেকেই এটা ও করে আসছে।
জেতার জন্য উদগ্র আর সামাজিক অনুপ্রেরণায় তেতে থাকা একটা টিমের বিরুদ্ধে তাই পাল্টা বিক্রম দেখাতে গেলে দরকার আক্রমণাত্মক ফুটবলের। যে স্ট্র্যাটেজিতে কলকাতা এ বারের আইএসএলের শুরুর দিকে ওদের টানা হারের ধাক্কা পরের দিকে দারুণ সামলেছিল। একের পর এক দুরন্ত প্রতিপক্ষকে হারিয়ে কলকাতা কোচ হাবাস আমার বাড়তি সম্ভ্রম আদায় করে নিয়েছিলেন। হাবাসকে তাই আমার আগের একটা কলামে আইএসএলের এক নম্বর কোচ বলতেও দ্বিধা করিনি।
সেমিফাইনালের প্রথম লেগে হাবাস কিন্তু সেই আক্রমণাত্মক কোচের জ্যাকেট ছেড়ে ফের তাঁর সেই প্রিয় আলট্রা ডিফেন্সিভ থিওরির শার্ট গলিয়ে নিয়েছিলেন। আর আমার মতে সেখানেই ম্যাচটা পকেটে পুরে নিয়ে গেল চেন্নাই।
প্রথম মিনিটেই ধনচন্দ্রের লং থ্রু থেকে মেন্ডোজা যখন গোলে সজোরে শট নিল তখনই বুঝলাম এ দিন কিছু করে দেখাতেই নেমেছে নীল জার্সিরা। সেটা ইনজুরি টাইম নিয়ে পরের পঁচানব্বই মিনিট আরও ভাল ভাবে জানান দিল মেন্ডি, মেন্ডোজারা। কলকাতা সেখানে প্রায় গোটা ম্যাচ কাটিয়ে দিল উদ্দেশ্যহীন ছোটাছুটি করে। হিউমকে পরিকল্পিত ফুটবল খেলে দাঁত ফোটাতে দিল না খাবরারা। আর আক্রমণে থই-জেজে-মেন্ডোজা ত্রিভুজ হাবাসের ডিফেন্স নিয়ে ছেলেখেলা করে গেল। বিশেষ করে মেন্ডোজাদের ওয়ান-টু খেলাটা বন্ধই করতে পারল না অর্ণবরা।
জেজে-মেন্ডোজা। কলকাতা-বধের পরে চেন্নাইয়ানের জোড়া ফলা। শনিবার। ছবি-আইএসএল।
ফুটবলের মোদ্দা কথা হল— বিপক্ষের ডিফেন্স ভাঙতে গেলে তাদের ব্যাক ফোরের সামনে গিয়ে ওয়ান-টু থিওরি প্রয়োগ করো। ঠিক সেটাই কখনও চেন্নাইয়ের জেজে-থই, কখনও জেজে-মেন্ডোজা বুদ্ধি করে করছিল। আর এটিকের রিনো অ্যান্টোরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল। চেন্নাইয়ের শেষের দু’টো গোল এ ভাবেই।
এ সবের সঙ্গে গোলকিপার অমরিন্দরের ভূমিকাও থাকবে এটিকের তিন গোল খাওয়ার পিছনে। ছেলেটা গোটা টুর্নামেন্ট ভাল খেলে আসল দিনে আমার মতে অহেতুক গোল ছেড়ে বেরিয়ে মস্তানি দেখাতে গিয়ে নিজের দলকে ডোবাল। দ্বিতীয় গোলটার সময় অমরিন্দর যদি গোল ছেড়ে না বেরোত, আমি নিশ্চিত মেন্ডোজা ওই ওয়ান-টু জেজের সঙ্গে খেলতে পারত না। জেজেও পারত না অত সহজে গোলে বলটা প্লেস করতে।
আসলে এর পিছনেও আটলেটিকো কোচের অ্যাওয়ে সেমিফাইনালের জন্য অতি-রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি। হাবাস হাই-লাইন ডিফেন্স করছিলেন। এতে গোলকিপারকে গোললাইন থেকে একটু উঠে খেলতে হয়। কখনও কখনও সুইপারের ভূমিকাও পালন করতে হয়। যে ভাবে আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির গোলকিপার ম্যানুয়েল ন্যয়ারকে দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু অমরিন্দর তো আর যা-ই হোক, নয়্যার নয়। ফলে এ রকম একটা বড় লড়াইয়ের দিন ও খেই হারিয়ে ফেলছিল। কিন্তু সেটা ওর দলের ধুরন্ধর স্প্যানিশ কোচ কেন শুরুতেই ওকে চেঁচিয়ে সতর্ক করলেন না, কিংবা কোনও প্ল্যান বি প্রয়োগ করলেন না বুঝলাম না।
হাবাসের আরও একটা ভুল চোখে পড়ল সেমিফাইনালে। বোরহা চোট পেল সতেরো মিনিটে। আর হাবাস তাকে তুললেন বিয়াল্লিশ মিনিটে। মাঝের এই পঁচিশ মিনিটেই কিন্তু চেন্নাইয়ানের আক্রমণ-অর্কেস্ট্রার ব্যান্ডমাস্টার হয়ে উঠল ব্রুনো পেলিসারি। আহত বোরহা খেলতে না পারায় ব্রুনো মাঝমাঠের রাজা হয়ে দাপিয়ে গেল। ওখানেই ম্যাচটা কলকাতার হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অশুভ সূচনা।
আবার প্রায় চল্লিশ মিটার দূর থেকে ফ্রি-কিকে ব্রুনোর গোলটার সময় দেখলাম হিউম আর গ্যাভিলান দু’জনকে ওয়াল দাঁড় করিয়েছেন হাবাস। আমরা যারা কোচিং করাই জানি, ওই রকম দূরত্বের ফ্রি কিক সামলাতে আরও বেশি লোকের ওয়াল দরকার। হাবাস সেটা মাঠে হচ্ছে না দেখেও সাইডলাইন থেকে চেঁচিয়ে সতর্ক করলেন না কেন? নাকি ফ্রি-কিকটাকে একেবারেই গুরুত্ব দেননি? বাড়তি আর এক জন ওই ওয়ালে দাঁড়িয়ে পড়লেই গোলটা হত কি না সন্দেহ।
কলকাতাকে ফাইনালে যেতে হলে ঘরের মাঠে চার গোল দিতে হবে। কাজটা ভয়ঙ্কর কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। হাবাসের দল কিন্তু এ বার আইএসএলে গোটা তিনেক কঠিন লিগ ম্যাচে চার গোল করেছে। তা ছাড়া ফুটবলে সব কিছুই হতে পারে। দু’টো ব্যাপারই মাথায় রাখছি।
(৩৬০ কর্পোরেট রিলেশনস)
অঙ্কে এখনও বেঁচে
• চেন্নাইয়ের কাছে প্রথম পর্বের সেমিফাইনালে ০-৩ গোলে হেরে আইএসএল টু থেকে প্রায় ছিটকে যাওয়ার মুখে আটলেটিকো দে কলকাতা। তবু অঙ্কের যে বিচারে এখনও টিকে আন্তোনিও হাবাসের দল...
• অন্তত চার গোলের ব্যবধানে জিততে হবে। সেটা ৪-০ বা ৫-১ হতে পারে। যদি তিন গোলের ব্যবধানে জেতে কলকাতা, ম্যাচ যাবে একস্ট্রা টাইমে। অর্থাত্ ৩-০ বা ৪-১ বা ৫-২ হলে দু’পর্ব মিলিয়ে দু’দলের স্কোর এক থাকবে। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় যাবে ম্যাচ। সেখানে ফয়সালা না হলে টাইব্রেকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy