Advertisement
০৮ মে ২০২৪

চ্যানেল ছেড়ে পুলে সায়নী

শুক্রবার বাংলার শেষ ইংলিশ চ্যানেল পেরোনো মেয়েকে সংবর্ধনা দিল রাজ্য সাঁতার সংস্থা। আরও কয়েকজন ইংলিশ চ্যানেলজয়ী সাঁতারুর উপস্থিতিতে।

সম্মান: রাজ্য সাঁতার সংস্থার সংবর্ধনায় সায়নী। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

সম্মান: রাজ্য সাঁতার সংস্থার সংবর্ধনায় সায়নী। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৩৬
Share: Save:

যে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ইংলিশ চ্যানেলে পা রেখেছিলেন সেখানেই আবার ফিরছেন সায়নী দাশ। সমুদ্র ছেড়ে ফের পুলে ফিরছেন কালনার এই সাঁতারু। ফিরতে চান মূল স্রোতেই।

শুক্রবার বাংলার শেষ ইংলিশ চ্যানেল পেরোনো মেয়েকে সংবর্ধনা দিল রাজ্য সাঁতার সংস্থা। আরও কয়েকজন ইংলিশ চ্যানেলজয়ী সাঁতারুর উপস্থিতিতে। সেই অনুষ্ঠানের পর সায়নী বলে দিলেন, ‘‘পরের বার ফের রাজ্য সাঁতারে নামব বলে ঠিক করেছি। আমার ইভেন্ট ৫০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে নামার জন্য প্রস্তুতি শুরু করব এ বার।’’

রাজ্য সাঁতারে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক বিভাগে নেমে ছ’ছটি সোনা পেয়েছেন কালনার মেয়ে। নিজের ইভেন্ট ছাড়াও ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে সোনা জিতেছিলেন সায়নী। কিন্তু রাজ্য ছেড়ে জাতীয় পর্যায়ে গিয়ে আর সাফল্যের মুখ দেখতে পাননি। ভোপালে ২০১৪-র জাতীয় সাঁতারে শেষ বার নেমেছিলেন। সর্বভারতীয় স্তরের ব্যর্থতাই তাঁকে টেনে এনেছিল চ্যানেলে, বলছেন শ্রীরামপুর কলেজের ইতিহাস অনার্সের ছাত্রী। ‘‘বলতে পারেন জাতীয় পর্যায়ে পারছিলাম না বলেই একটা যন্ত্রণা ছিল। সেটাই চ্যানেল পেরোবার ইচ্ছেটাকে আরও উসকে দিয়েছিল। অনুশীলনের জন্য মা আর আমি কালনার বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলাম রিষড়ার। সেই ইচ্ছেটা পূর্ণ হয়েছে। এ বার আবার পুলে ফিরব ঠিক করেছি। কিন্তু সুযোগ পেলে আবার চ্যানেলে নামব।’’

এমনিতেই অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস বাংলায় তেমন কল্কে পায় না। ইংলিশ চ্যানেল পেরোবার পর রুশমি শর্মার মতো দু’একজন চাকরি পেয়েছেন ঠিক তবে সেটা রাজ্য সরকারের মন্ত্রীদের ধরে করে। রুশমি এখন হারিয়ে গিয়েছেন। অন্যরাও একই পথের পথিক। সায়নীও আশ্বাস পেয়েছেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীর। সায়নীর বাবা রাধেশ্যাম দাশ নিজে অ্যাথলিট ছিলেন। নিজের বাড়ি বন্ধক রেখে এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা জোগাড় করে মেয়ের ইচ্ছে পূরণ করেছেন। কিন্তু চ্যানেল পেরোনোটা যে-হেতু এভারেস্ট শৃঙ্গ জয়ের মতো আকছার হচ্ছে এখন তাই কিছুদিনের মধ্যেই সায়নীদের মতো তারকাদের ভুলে যাচ্ছে সবাই। সে জন্যই সম্ভবত মূল স্রোতে থাকতে চাইছেন জেদী মেয়েটি।

পুলে নামলেও চ্যানেল জয়টা অনেকটা নেশার মতো সাঁতারুদের কাছে। সমুদ্রে সাঁতারের ঝোঁক থেকেই সাত সমুদ্র পেরিয়েছিলেন রাজ্যের অন্যতম সফল সাতারু বুলা চৌধুরী। বছর উনিশের সাঁতারু নিজের আইডল হিসাবে বুলাকেই সামনে রাখছেন। ‘‘বুলাদি আমাদের কাছে আইডল। যদি পারি এর পরে জিব্রাল্টার পেরেনোর ইচ্ছে আছে। তার পরে অন্যগুলো। সাত সমুদ্র পেরোনোর ইচ্ছে আছে বুলা চৌধুরীর মতো। তবে আগে বাবা বন্ধক দেওয়া বাড়িটা ছাড়াক। তারপর আবার চ্যানেল জয় নিয়ে ভাবব। আসলে আমাদের এখানে অনুশীলন করার জায়গার খুব অভাব। বর্ধমানে সেই পরিকাঠামো ছিল না বলেই চলে এসেছিলাম রিষড়ায়,’’ বলছিলেন সায়নী। তাঁর ইচ্ছে, একটা চাকরি পেলে টাকা জমিয়ে চ্যানেলে নামার। স্বপ্নে যে সাত সমুদ্র হাজির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE