Advertisement
০১ মে ২০২৪

ব্যানার নিয়ে বলতে যাব না আমি কেমন, স্পষ্ট জানালেন ভারত অধিনায়ক

কোহালি বলে দিলেন, ‘‘আমি কোনও ব্যানার নিয়ে লোকের সামনে গিয়ে গিয়ে বলব না যে, আমি এ রকম। আমাকে আপনারা সবাই পছন্দ করুন। যে যা ভাবছে, সেটা বাইরে থেকে ভাবছে। তার নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে নেই।’’

ট্রে হাতে কোহালির টুইট, এগুলো আমার ক্রিসমাসের উপহার।

ট্রে হাতে কোহালির টুইট, এগুলো আমার ক্রিসমাসের উপহার।

সুমিত ঘোষ
মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৭
Share: Save:

তাঁকে নিয়ে জনমত যা-ই তৈরি হোক না কেন, বিরাট কোহালি আত্মপক্ষ সমর্থনে লড়াই করতে যাবেন না। বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামার আগে ফের ভারত অধিনায়ককে তাঁর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করা হল। কোহালি বলে দিলেন, ‘‘আমি কোনও ব্যানার নিয়ে লোকের সামনে গিয়ে গিয়ে বলব না যে, আমি এ রকম। আমাকে আপনারা সবাই পছন্দ করুন। যে যা ভাবছে, সেটা বাইরে থেকে ভাবছে। তার নিয়ন্ত্রণ আমার হাতে নেই।’’ কোহালির আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে অস্ট্রেলীয় মিডিয়া। তাদের দিক থেকেই কয়েক জনে এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে একই প্রশ্ন করলেন। কোহালি হাসতে হাসতেই জবাব দিলেন সে সব প্রশ্নের। বললেন, ‘‘বাইরে থেকে লোকে কথা বলবে। এটা ব্যক্তির উপরে নির্ভর করবে সে কী ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। সে কি এই বক্তব্যগুলোর উপরে ফোকাস করবে না কি খেলার উপরে? আমার মনঃসংযোগ খেলার উপরে রয়েছে। আমি দলের হয়ে ভাল করতে চাই, দলকে জেতাতে চাই।’’ তাঁর সম্পর্কে কে কী বলছেন বা লিখছেন, কেন তাঁরা এমন বক্তব্য দিচ্ছেন, তা নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা কোহালির কাছে নেই। বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমি জানি না কারা এগুলো লিখছেন বা বলছেন, কেনই বা বলছেন। প্রত্যেকেরই নিজের মত প্রকাশ করার অধিকার আছে এবং আমি সেগুলোকে সম্মানই করছি। তবে আমার ফোকাস এগুলোতে নেই, রয়েছে ক্রিকেটের উপরে।’’

পার্‌থে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক টিম পেনের সঙ্গে বাগ্‌যুদ্ধের জেরে অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যমে কোহালিকে ‘খলনায়ক’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ দিনও সম্প্রচারকারী চ্যানেলের ওয়েবসাইটে ভারত অধিনায়ককে এ ভাবেই দেখানো হয়েছে। যা নিয়ে ভারতীয় শিবিরে ক্রমশ ক্ষোভ বাড়ছে। এক অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক এমনও জিজ্ঞেস করলেন কোহালিকে যে, কোচ রবি শাস্ত্রী আপনাকে আপাদমস্তক ভদ্রলোক আখ্যা দিয়েছেন। আপনি কী বলবেন? কোহালি মেজাজ না হারিয়ে সেই বাউন্সারেরও জবাব দিয়ে গেলেন। বললেন, ‘‘কোচ আমাকে অনেক দিন ধরে কাছ থেকে দেখছেন। ওঁর যেটা মনে হয়েছে, সেটাই হয়তো বলেছেন। আমি ভদ্রলোক কি না, নিজে বলব কী করে? যাঁরা আমাকে চেনেন, কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন।’’ অস্ট্রেলিয়ায় এলে যে ক্রিকেট মাঠে তাদের পেস বোলারদের বাউন্সারের পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমের নানা দেশাত্মবোধক ডেলিভারির মুখে পড়তে হয়, খুব ভাল করেই জানেন কোহালি। তাই হয়তো বললেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ায় স্কিল, টেকনিক, স্ট্র্যাটেজির চেয়েও বেশি করে লাগে মানসিক শক্তি। আমার মনে হয়, এই পর্যায়ের ক্রিকেটে আশি শতাংশ লড়াইটাই হচ্ছে মানসিক, কুড়ি শতাংশ হয়তো টেকনিক্যাল।’’

বরাবর গতিসম্পন্ন, বাউন্সি পিচে তিন স্লিপ, দুই গালির পাশাপাশি অস্ট্রেলীয় মিডিয়াও অপেক্ষা করে থেকেছে সফরকারী অধিনায়কদের ‘আউট’ করার জন্য। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যখন অধিনায়ক ছিলেন, অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে এ দেশের মিডিয়া এক মাস আগে থেকে লেখা শুরু করত ‘চিন মিউজিক’ অপেক্ষা করছে ভারতীয় দলের জন্য। দেখা যাচ্ছে কোহালির ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। দু’দলের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কে বেশ কিছুটা অবনতি ঘটেছে সম্প্রচারকারী চ্যানেলের কভারেজে। ভারতীয় শিবিরের অভিযোগ, একপেশে ভাবে তারা যা খুশি লিখে চলেছে, সৌজন্যের ধার ধারছে না। খেলার বাইরের ঘটনা দেখিয়ে বিতর্ক তৈরি করার চেষ্টা করছে। কোহালিকে নিয়ে করা একটি খবরকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই তুলকালাম হয়েছে। সম্প্রচারকারী চ্যানেল বলতে থাকে, পার্‌থ টেস্টের সময়ে কোহালি নাকি পেনকে বলেছেন, ‘‘আমি বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার। আর তুমি শুধু কেয়ারটেকার ক্যাপ্টেন।’’

ভারতীয় শিবির থেকে তীব্র প্রতিবাদ করা হয় এই খবরের। হস্তক্ষেপ করে ভারতীয় বোর্ডও। চাপে পড়ে সম্প্রচারকারী চ্যানেলের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় সেই খবর। ভারতীয় দল এবং অধিনায়কের কাছে তারা দুঃখপ্রকাশও করে বলে খবর। দেখা যাচ্ছে, তাতেও আগুন পুরোপুরি নেভেনি। টুকরো-টাকরা অশান্তি লেগেই রয়েছে। কোহালি যদিও এ দিন বলে গেলেন, ‘‘পেন এবং আমার মধ্যে আগের টেস্টে যা কিছু ঘটেছে, সেটা অতীত। দু’টো দল নিজেদের সেরাটা দিয়ে জেতার চেষ্টা করছে। উত্তেজনার মুহূর্তে কিছু ঘটনা হয়তো ঘটেছে। কিন্তু কেউ সীমানা অতিক্রম করেনি। তাই ওটা নিয়ে পড়ে থাকার আর মানে হয় না।’’

মেলবোর্নে তিনি আর নতুন করে বিতর্ক খুঁচিয়ে তুলতে চান না, এমন ইঙ্গিতও দিলেন। ‘‘আমি এবং পেন দু’জনেই নিশ্চয়ই বুঝেছি যে, আসল হচ্ছে ভাল ক্রিকেট খেলা। সেটার জন্যই আমরা এখানে এসেছি। আমরা চাই ভাল ক্রিকেট খেলতে যা দেখে মানুষ আনন্দ পাবে। অন্য কিছু মাথায় নেই,’’ বলেন তিনি।

অজানা দেশে এসে ব্যাটসম্যান হিসেবে সফল হওয়ার মন্ত্র কী? কোহালি যে উত্তর দিলেন, তা থেকেই পরিষ্কার কেন তিনি অন্যদের চেয়ে অনেক উপরের স্তরে। বললেন, ‘‘পুরোটাই মানসিক লড়াই। যদি গতিসম্পন্ন পিচে তুমি ভাবো আঘাত পেতে পারো, তা হলেই তোমার আঘাত লাগবে। মানসিক ভাবে নিজেকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে যেখানে শুধু নিজের উপর বিশ্বাসটাই থাকবে যে, আমি পারব। এটা এমন একটা ব্যাপার যে, নিজের ঘরে বসে তৈরি করে নিতে হবে। ম্যাচের দিন মাঠে উপস্থিত হয়ে নিজেকে এ ভাবে তৈরি করা যায় না।’’ যোগ করলেন, ‘‘আমার কাছে সব সময়েই ব্যাপারটা এ রকম। যেখানে খেলতে নামছি, সেখানকার পরিবেশ, পরিস্থিতি নিয়ে সম্পূর্ণ স্বস্তিতে থাকব। কখনও উইকেট কত কঠিন বা কতটা বেশি বাউন্স আছে, এ সব নিয়ে আমি ভাবিই না।’’

বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার পিছনে আসলে বক্সার-সুলভ এই হার-না-মানা মনোভাব!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Virat Kohli Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE