অকল্যান্ডে আজ বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল আর যেহেতু টুর্নামেন্টের সেরা চারটে দলই এই পর্যায়ে উঠেছে সে কারণে এ ধরনের ম্যাচে ফেভারিট বাছা আরও কঠিন।
তবে নিউজিল্যান্ড দুর্দান্ত ছুটছে। কোয়ার্টার ফাইনালের মতো নকআউটেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কী ভাবেই না দুরমুশ করে হারাল। এ রকম ম্যাচ ওদের আরও আত্মবিশ্বাস জোগাবে। আহ, ওই ম্যাচে কী ইনিংসটাই না খেলল মার্টিন গাপ্টিল! আমার মতে এটাই বিশ্বকাপের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ইনিংস হিসেবে লেখা থাকবে। বিশ্বকাপে বেশ কিছু ব্যাটসম্যান বড় সেঞ্চুরি করেছে, কিন্তু ম্যাচের গুরুত্ব, প্রতিদ্বন্দ্বী, ইনিংসটার গুণাগুণ বিচারে গাপ্টিলের ২৩৭ নট আউট সবার চেয়ে বহু বহু এগিয়ে।
আজকের সেমিফাইনালটা দেশের মাঠে এ বারের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের শেষ ম্যাচ বলে ওরা আরওই বেশি করে জিতে মাঠ ছাড়তে চাইবে। মঙ্গলবার এমন দু’টো দেশের মধ্যে লড়াই যার কেউই বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের বাধা ডিঙোতে পারেনি এখনও এবং আজ যে-ই ফাইনালে উঠুক তার পক্ষে সেটা প্রথম বার ঘটবে। আর এমন এক যুদ্ধে অকল্যান্ডের ইডেন পার্কের মাঠ একটা বড় ফ্যাক্টর হবে আমার মতে। মাঠটার বাউন্ডারি বেশ ছোট যেখানে দু’দলের অন্তত হাফজডন এমন বিগহিটার আছে যাদের ব্যাট আজ চললে হয়তো আরও একটা রেকর্ড স্কোর দেখা যাবে ম্যাচে। যেমন ম্যাকালাম, গাপ্টিল, ডে’ভিলিয়ার্স, আমলা, কোরি অ্যান্ডারসন, দুপ্লেসি!
মাঠের কোনও কোনও দিকের বাউন্ডারি মাত্র পঞ্চাশ মিটার হওয়ায় আজ স্পিনারদের পক্ষে রান আটকানো মনে হয় বেজায় কঠিন। নিউজিল্যান্ডের আবার একটা চোট সমস্যা আছে। অ্যাডাম মিলনে টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে পড়েছে। ফলে আজ দেখার, মিলনের পরিবর্তে টিমে ঢোকা হেনরিকে নিউজিল্যান্ড টিম ম্যনেজমেন্ট সটান এত বড় ম্যাচে নামিয়ে দেবে? নাকি বাঁ-হাতি পেসার মিচেল ম্যাকলেনাঘনকে-ই খেলাবে? আমি মনে করি হেনরির বলে যদি ভাল পেস থাকে, যেটা ওরা বলছে আছে, তা হলে তাকেই সরাসরি খেলানো উচিত। বড় ম্যাচে কিন্তু এক্স-ফ্যাক্টরও গুরুত্বপূর্ণ আর নিউজিল্যান্ড তার শরণাপন্ন হতেই পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকাও কোয়ার্টার ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দাপটে জিতেছে। কিন্তু আজ তারা একটা দুর্দান্ত ফর্মে থাকা প্রতিপক্ষের সামনে পড়ছে। সিডনিতে আগের দিন দক্ষিণ আফ্রিকা সাত জন ব্যাটসম্যান খেলিয়েছিল। কিন্তু অকল্যান্ডে ওরা যদি দুমিনিকে দিয়ে দশ ওভার বল করানোর চিন্তা করে থাকে তা হলে ব্যাপারটা ওদের পক্ষে ভয়ের হয়ে দাঁড়াতে পারে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ব্যাপারটা ম্যানেজ হয়ে গিয়েছিল, কারণ সে দিন দক্ষিণ আফ্রিকার গোড়ার দিকের পেসাররা দ্রুত কয়েকটা উইকেট তুলে নেওয়ায় দুমিনির উপর তেমন চাপ ছিল না।
কিন্তু সেমিফাইনালে যদি নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং একটা ভাল শুরু পায়, তখন ওরা এ রকম ছোট সাইজের মাঠে দুমিনিকে নির্মম ভাবে টার্গেট করবেই। সে কারণে আজ ডে’ভিলিয়ার্সের অন্যতম প্রধান পরিকল্পনা হবে ওর পঞ্চম বোলারকে কী ভাবে ব্যবহার করবে সেটা। আমার সন্দেহ আছে যে, দক্ষিণ আফ্রিকা দলে কোনও পরিবর্তন ঘটবে বলে। কারণ ওরা লোয়ার অর্ডারে এক জন বাড়তি ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে।
নিউজিল্যান্ডের উপর আবার ঘরের মাঠে বিপুল সংখ্যক সমর্থকের বিরাট প্রত্যাশার চাপ থাকবে। আমি এই মুহূর্তে নিজে অকল্যান্ডে আছি বলে আরও বেশি করে বুঝতে পারছি কিউয়িরা কী মরিয়া ভাবে আজ নিজেদের দেশের জয় চাইছে। সে জন্য ঘরের মাঠের সব প্রত্যাশার চাপকে মন থেকে দূর করে খোলা মনে খেলা উচিত ম্যাকালামদের। যেটা ওরা এখনও পর্যন্ত করেছে।
তবে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল একটা আলাদা মঞ্চ। অন্য রকমের চাপ। পারবে কি নিউজিল্যান্ড সেটা সামলাতে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy