নতুন ভাবনায় সুইমিং পুলে ‘ফান সেশন’-হার্দিকের। ছবি: টুইটার
ভারতীয় ক্রিকেট দলে ‘টিম ডিনার’ শব্দটা চালু হয়ে গিয়েছে দু’দশক হয়ে গেল। ম্যাচে আগের রাতে বা জেতার পরে দলবদ্ধভাবে নৈশভোজে যায় টিম।
এই রেওয়াজ চলছে অনেক দিন ধরেই। বিরাট কোহালি জমানায় এ বার এসে পড়ল টিম লাঞ্চও। গলে চার দিনে টেস্ট জেতার পরের দিন দুপুরে সমুদ্রে ঘেরা রিসর্টে লাঞ্চ সারতে গেল টিম। রাত পর্যন্ত আর অপেক্ষা করা হল না। জানা গেল, এখন থেকে টিম ডিনারের মতো টিম লাঞ্চও দলের সংস্কৃতির মধ্যে ঢুকে পড়ল। এ ভাবেই যদি ফের চার দিনে টেস্ট জিতে যায় দল, তাতে পরের দুপুরে ফের চলবে লাঞ্চ অভিযান।
অধিনায়ক হিসেবে কোহালি দলের সংস্কৃতি গড়ে তোলার ওপর জোর দিচ্ছেন। যেখানে ব্যক্তির মাইলস্টোন নিয়ে মাতামাতি হবে না। ‘টিম বন্ডিং’-এর উপর জোর দেওয়া হবে। দলগত সংহতি বাড়ানোর জন্য নানা রকম পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় যেমন দলবদ্ধ ভাবে কোহালি, ধবনরা সি বিচে ঘুরতে বেরোচ্ছেন সময় পেলেই। সেখানে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা কম হচ্ছে, বেশি করে একে অন্যের পরিবার, স্ত্রী, বা সন্তানদের খোঁজ নিচ্ছেন।
এ দিন বাসে করে গল থেকে কলম্বো আসার পথেও ক্রিকেটারেরা ‘ব্রেক’ নিলেন। সমুদ্রের পাড়ে রিসর্টে বসে হাল্কা মেজাজে সময় কাটালেন। অর্থাৎ, প্রথম টেস্টের চ্যালেঞ্জ জিতে নিয়েছ। এ বার যত পারো স্নায়ুকে শিথিল করো। তার পর ঝাঁপাও পরের যুদ্ধের জন্য। ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে খিদে বাড়ানোর এই মেয়াদ যেমন ফুরিয়ে যাবে মঙ্গলবারেই। আজ সকাল থেকেই পুরোপুরি কলম্বো টেস্টের হাড়ভাঙা প্রস্ততিতে ঢুকে পড়বে কোহালির দল।
টিমের সঙ্গে যুক্ত এক জন সোমবার বলছিলেন, ‘‘আইডিয়াটা হচ্ছে, পরস্পরের প্রতি অনুভূতি বাড়িয়ে তোলা। মাঠের মধ্যে ক্রিকেটই তো খেলতে ব্যস্ত থাকে সকলে। কিন্তু মাঠের বাইরে যদি পরস্পরকে জানার চেষ্টা করা যায়, তা হলে দলগত বন্ধনের ভিতটা আরও শক্ত হবে।’’
এই ‘টিম বন্ডিং’ প্রক্রিয়া গলে তিন-চারবার হয়েছে। কখনও সুইমিং পুলে হয়েছে ‘ফান সেশন’। আগে সুইমিং পুল সেশন ছিল ট্রেনিংয়ের সিরিয়াস অঙ্গ। এখন সেখানে মজাও যোগ করা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, কখনওসখনও পুলে বল নিয়ে ওয়াটারপোলো গোছের স্পোর্টও খেলা হবে। কেউ খারাপ করলে বা গোল খেলে তাঁর জন্য ‘শাস্তি’ হচ্ছে ‘জোক্স শোনাও’।
টিম কোহালির অন্দরমহলে এই প্রক্রিয়ার নামকরণ করা হয়েছে ‘মেন্টাল এক্সারসাইজ’। অর্থাৎ মানসিক একটা প্রক্রিয়া যা, মাঠের বাইরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিরন্তর চাপ থেকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে ক্রিকেটারদের। অধিনায়ক হয়েই কোহালি কয়েকটি নীতি চালু করতে চেয়েছিলেন টিমের জন্য। তার মধ্যে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়েছিলেন চাপমুক্ত, খোলামেলা পরিবেশ গড়ে তোলার ওপর। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতোই কোহালি বিশ্বাস করেন, স্নায়ুকে যত নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে তত সে ভাল করবে। সারাক্ষণ পারফরম্যান্স নিয়ে ভেবে উত্তেজনা সৃষ্টি করলে ম্যাচে গিয়ে ভাল করার সম্ভাবনা ওখানেই অনেক কমে যাবে।
মূলত এই জায়গাতেই সঙ্ঘাত ঘটেছিল কোহালি এবং অনিল কুম্বলের। কোচ হিসেবে কুম্বলের দর্শন ছিল হেডমাস্টারের। সেটা মাঠের মধ্যে থাকলে আপত্তি ছিল না। সমস্যা হতে শুরু করে যখন দেখা গেল, ক্রিকেট থেকে কী ভাবে ‘সুইচ অফ’ করব, কী ভাবে ব্যাটারি রিচার্জ করা যাবে— এ সব নিয়ে কোচের কোনও ‘ইনপুট’ আসছে না।
রবি শাস্ত্রী কোচ হিসেবে ফিরেই অবহেলিত আবেগের জায়গাগুলো নিয়ে ফের যত্নবান হয়েছেন। ডিরেক্টর হিসেবে তিনি উনিশ মাস কাটিয়েছেন কোহালিদের সঙ্গে। তিনি তাই জানেন, এই টিম কী ধরনের সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে। গলে টেস্ট জেতার পরে শাস্ত্রী অদ্ভুত এক কাণ্ড ঘটান। সাপোর্ট স্টাফের সকলকে ডেকে নৈশভোজ দেন তিনি। ট্রেনার, ফিজিও থেকে শুরু করে থ্রোডাউন স্পেশ্যালিস্ট, কেউ বাদ যায়নি সেই নৈশভোজে। হেড কোচের আমন্ত্রণে মুগ্ধ সাপোর্ট স্টাফের সবাই। গত এক বছরে এমন কোনও নৈশভোজের কথা তাঁরা মনে করতে পারছেন না।
ভারতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জন বলছেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যে রকম গুমোট হয়ে ছিল ড্রেসিংরুমের পরিবেশ, সেটা কেটে গিয়েছে। এখন ছেলেদের দিকে তাকান, ওদের মুখচোখ দেখলেই বুঝতে পারবেন হ্যাপি ফ্যামিলি ফিরে এসেছে।’’ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গোটা টুর্নামেন্টে কুম্বলে এবং কোহালিকে কথা বলতেই দেখা যাচ্ছিল না। কারও কারও মতে, টিম মিটিংয়েও এর প্রভাব ভাল মতো পড়ছিল।
টিম কোহালি আগামী দু’বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানচিত্রে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা সময় বলবে। কিন্তু ভারত মহাসাগরে ঘেরা দ্বীপপূঞ্জে যে ফের খোলামেলা হাওয়া খেলতে শুরু করেছে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy