লুসিওকে লাল-হলুদ জার্সি উপহার অ্যালভিটোর। —নিজস্ব চিত্র।
ইন অ অফ এ স্টার— গোদা বাংলায় যাকে বলে সেলিব্রিটিদের দেখে ভয় পেয়ে যাওয়া, তার নামগন্ধ ছিল না! বদলে ছিল নিজের আরাধ্য ফুটবল তারকার সঙ্গে দেখা করার আকুতি। আর সেটা সম্বল করেই রোনাল্ডো, রিভাল্ডোদের ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলের সতীর্থ লুসিও-র সঙ্গে বুধবার চুপিচুপি দেখা করে এলেন ইস্টবেঙ্গলের অ্যালভিটো ডি’কুনহা। একে অ্যালভির গায়ে কলকাতার এক ফুটবল ক্লাবের ছাপ। তার উপর কয়েক ঘণ্টা বাদেই আইএসএলে লুসিওর লড়াই শুরু সেই কলকাতার ফ্র্যাঞ্চাইজি টিমের বিরুদ্ধেই। তিলক ময়দানে ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে ঢুকতেই তাই উড়ে এল রসিকতা— ‘‘কলকাতার চর ঢুকে পড়েছে মনে হচ্ছে!’’ মুচকি হেসে নিজের ফেভারিট ফুটবলারের সঙ্গে শুধু দেখা করাই নয়, লুসিওর হাতে লাল-হলুদের গোয়ান সদস্য তুলে দিলেন নিজের লাল-হলুদ জার্সিও। নিখাদ পর্তুগিজে দু’জনে আড্ডাও দিলেন একান্তে। কলকাতার ফুটবল, আইএসএল, ব্রাজিল, জার্মানির কাছে গত বিশ্বকাপে স্কোলারির দলের সাত গোল খাওয়া— সব নিয়েই সেই আড্ডার একমাত্র সাক্ষী আনন্দবাজার। যাদের জন্য ইংরেজি তর্জমার দায়িত্বটাও নিলেন অ্যালভিটোই। সৌজন্য বিনিময়ের পর দু’জনের কথাবার্তা...
অ্যালভিটো: গোয়াতেই বেড়ে উঠেছি আমি। তুমি ব্রাজিল টিমে খেলা শুরু করার দিন থেকেই আমার প্রিয় ডিফেন্ডার।
লুসিও: ধন্যবাদ। তুমিও কি ফুটবল খেল।
অ্যালভিটো: ব্রাদার, আমি কলকাতায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে খেলি। এএফসি কাপে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি বার খেলেছে আমার ক্লাব।
লুসিও: গ্রেট। তুমি ভারতের হয়ে খেলেছ কখনও?
অ্যালভিটো: দেশের জার্সি পরে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সৌভাগ্য আমার আছে।
লুসিও: ইন্ডিয়ার জার্সি গায়ে নিশ্চয়ই গোল রয়েছে তোমার?
অ্যালভিটো: তা-ও আছে। বারোটা!
লুসিও: (হাসি) তুমি তো আমাকেও ছাপিয়ে গিয়েছ?
অ্যালভিটো: (লজ্জা মুখ) কী বলছ? কোথায় তুমি আর কোথায় আমি! তোমার সঙ্গে আমার তফাত ওয়ান লাইট ইয়ার! তুমি তো ডিফেন্স থেকে উঠে গিয়েও গোল কর। কাদের কাদের না গোল দিয়েছ! চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে রিয়াল ম্যাচে তোমার গোলটা এখনও চোখে ভাসে। চোখ বুজে দেখতে পাই ২০০৯ কনফেড ফাইনালে আমেরিকাকে তোমার দেওয়া সেই গোল!
লুসিও: তুমি তো সব মনে রেখেছ দেখছি!
অ্যালভিটো: আইএসএলেও ডিফেন্স থেকে উঠে গিয়ে তোমাকে গোল করতে দেখার ইচ্ছে নিয়ে বসে আছি কিন্তু।
লুসিও: ও কে! তোমার আশা পূরণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।
অ্যালভিটো: একটা প্রশ্ন করতে সঙ্কোচ হচ্ছে। করব?
লুসিও: আরে কর না।
অ্যালভিটো: গত বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ব্রাজিলের ১-৭ চুরমার হওয়াটা কি তোমার মতে স্রেফ অঘটন? নাকি ব্রাজিল ফুটবল এ রকম তলানিতেই এসে ঠেকেছে?
লুসিও: অঘটন নয়। আবার তলানিতেও যায়নি। আমার মনে হয়, সে দিন জার্মানি অসাধারণ খেলেছিল। আর আমার দেশ ঘরের মাঠে কাপ সেমিফাইনালের বিরাট চাপটা নিতে পারেনি।
অ্যালভিটো: নেইমার সেই ম্যাচে থাকলে কি অন্য রেজাল্ট হত?
লুসিও: মনে হয় না। জার্মানিতে আমি ক্লাব ফুটবল খেলেছি। জানি কোনও টার্গেটে পৌঁছতে জার্মানদের একাগ্রতা ঠিক কেমন! ওরা সে দিন সেই লক্ষ্যে পুরোপুরি ফোকাসড ছিল। আর আমরা প্রথম মিনিট থেকেই গাদাগুচ্ছের ভুল করে খেলা থেকে হারিয়ে গিয়ে ওই বিপর্যয়ের দিন ডেকে এনেছিলাম।
অ্যালভিটো: তুমি যদি সে দিন ব্রাজিল ডিফেন্সে থাকতে, তা হলে কি সাত গোল আটকাতে পারতে?
লুসিও: ফুটবলে কোনও যদি-র স্থান নেই। ওই ম্যাচটায় ব্রাজিল ডিফেন্সে কর্নার থেকে বল উড়ে আসার সময় ক্লোজে প্রথম পোস্ট থেকে দ্বিতীয় পোস্টে সরে আসছিল। আর মুলার দ্বিতীয় পোস্ট থেকে প্রথম পোস্টে। অথচ তার আগের ম্যাচগুলোয় জার্মানি এর ঠিক উল্টোটাই করে আসছিল। আমরা সে দিন ওই ধোঁকাটা খেয়ে গিয়েছিলাম। যতক্ষণে ধরলাম, ততক্ষণে ওরা আমাদের শেষ করে দিয়ে গিয়েছে।
অ্যালভিটো: সব শেষে তোমার কাছে একটা অনুরোধ আছে।
লুসিও: বলো।
অ্যালভিটো: এফসি গোয়া এ বার যখন কলকাতায় খেলতে যাবে, তখন তুমি আমার ক্লাব ইস্টবেঙ্গলে এক বার এস। তোমাদের কোচ জিকো ঘুরে গিয়েছেন ওই ক্লাবে।
লুসিও: অবশ্যই চেষ্টা করব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy