Advertisement
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নতুন পার্‌থে স্পিনাররাও আছেন চর্চায়

‘অপশনাল’ প্র্যাক্টিস হলেও অধিনায়ক হোটেলের ঘরে শুয়ে ছুটি কাটালেন না। বিবাহবার্ষিকীর পরের দিন হাজির হয়ে গিয়েছেন মাঠে। অ্যাডিলেডের ৩ এবং ৩৪ যে শান্তি দিচ্ছে না, বোঝাই যাচ্ছে।

খুনসুটি: পার্‌থে অনুশীলনের ফাঁকে ঋষভ পন্থের সঙ্গে কোহালি। এএফপি

খুনসুটি: পার্‌থে অনুশীলনের ফাঁকে ঋষভ পন্থের সঙ্গে কোহালি। এএফপি

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১২
Share: Save:

বিখ্যাত সেই বাইশ গজ। বুধবার তা এতটাই সবুজ যে, মাঠের থেকে আলাদা পর্যন্ত করা যাচ্ছে না। হাতকাটা জার্সিতে স্টান্স নিয়ে দাঁড়ালেন বিরাট কোহালি।

‘অপশনাল’ প্র্যাক্টিস হলেও অধিনায়ক হোটেলের ঘরে শুয়ে ছুটি কাটালেন না। বিবাহবার্ষিকীর পরের দিন হাজির হয়ে গিয়েছেন মাঠে। অ্যাডিলেডের ৩ এবং ৩৪ যে শান্তি দিচ্ছে না, বোঝাই যাচ্ছে।

উল্টো দিকে বল হাতে দাঁড়িয়ে পাঁচ পেসার। নিজের দলের ভুবনেশ্বর কুমার এবং উমেশ যাদব। বাকি তিন জন স্থানীয় প্র্যাক্টিস বোলার। ওয়াকায় শুরু হচ্ছে ‘ম্যাচ’।

এক সময়ে এ ভাবেই এ মাঠে চার বা পাঁচ পেসার পালা করে ছুটে আসত। ব্যাটসম্যানদের কাছে সেই পাঁচটা দিন (অবশ্য টেস্ট ম্যাচ যদি পাঁচ দিন পর্যন্ত গড়াত) থাকত বিভীষিকার মতো। রসিকতা আছে, ক্রিকেটের দু’টো মাঠে পাশের হাসপাতালে আগাম বুকিং দিয়ে রাখা হত। একটা মার্শাল-হোল্ডিং-রবার্টসদের জমানায় জামাইকা। অন্যটা লিলি-থমসনের যুগে পার্‌থ।

ট্যাটুভর্তি পেশিবহুল হাতে কোহালিকে সেখানে সুন্দর টাইমিং আর শব্দে ড্রাইভ, কাট মারতে দেখে মাঝদুপুরে হঠাৎই উপলব্ধিটা হবে— ক্রিকেটের হারিয়ে যাওয়া লড়াই দেখছি না তো? সম্ভবত শেষ বার ডেনিস লিলির বিখ্যাত ঘরের মাঠে এই প্রজন্মের সেরা ব্যাটসম্যানকে দেখা যাচ্ছে। সেটাও টেস্ট ম্যাচে নয়, শুধুই টেস্ট ম্যাচের প্রস্তুতিতে!

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড ঠিক করেছে, সমস্ত বড় বড় ম্যাচ এ বার থেকে পার্‌থের নতুন স্টেডিয়ামে হবে। বিখ্যাত সোয়ান নদীর এ-পার আর ও-পার। শুক্রবার থেকে স্পনসরের নামাঙ্কিত নতুন স্টেডিয়ামের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় টেস্ট দিয়ে। এ-পারে তখন সুনসান অবস্থায় পড়ে থাকবে বিশ্বের দ্রুততম পিচের ঐতিহ্যবাহী ওয়াকা। ক্রিকেটে একটা যুগের অবসান ঘটতে চলেছে।

বড় ম্যাচের আসর নতুন মাঠে সরিয়ে নেওয়ার কারণ আরও বেশি টাকা লোটা। ওয়াকায় পঁচিশ হাজার লোক ধরে। নতুন স্টেডিয়ামে ষাট হাজারের উপরে। ডেনিস লিলি যা নিয়ে ক্ষিপ্ত এবং স্বভাবসিদ্ধ সোজাসাপটা ভঙ্গিতে বলেও দিয়েছেন, ‘‘ওই লোকগুলো (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কর্তারাই তাঁর নিশানা) খেলাটা তুলে দেবে টাকা আনতে গিয়ে।’’ কর্তারা তাতে কর্ণপাত করছেন বলে মনে হয় না। তাঁরা ঘোষণা করে দিয়েছেন, এর পরে অ্যাসেজের ম্যাচও নতুন স্টেডিয়ামেই হবে। মানে ওয়াকা কার্যত অতীত হওয়ার মুখে। খুব বেশি হলে দুর্বল টিমের কিছু ম্যাচ এখানে দেওয়া হতে পারে।

অস্ট্রেলীয় গ্রীষ্মের মাঝদুপুরে ওয়াকায় দাঁড়িয়ে এই বিদায়ী বাজনার সুর ভেসে আসায় মন খারাপই হয়ে যায়। চার দিকে এত ইতিহাসের ছোঁয়া। কত সব ঘটনার রং ছড়ানো চার দিকে। স্টেডিয়াম জুড়ে হল অব ফেম। সেখানে বিখ্যাত সব ক্রিকেটারদের ছবি। প্লেয়ার্স ড্রেসিংরুমের বাঁ দিকে লিলি-মার্শ স্ট্যান্ড। ক্রিকেটের সেই বিখ্যাত যুগলবন্দি— কট মার্শ বোল্ড লিলি।

ড্রেসিংরুমের ডান দিকে প্রাচীন স্কোরবোর্ড। সেখানে সেরা অস্ট্রেলীয় একাদশ তৈরি করে টাঙানো রয়েছে। দশ নম্বর নামটা তাঁর— ডি এল। আরও একটা নাম সেখানে রয়েছে— ফিল হিউজ। মাঠের চতুর্দিকে তাঁকে সম্মান জানানোর আন্তরিক প্রচেষ্টা। তাঁর নামে স্ট্যান্ডও রয়েছে। তাদের সোনার ছেলে লিলির আপসহীন চরিত্রের মতোই পার্‌থ নিজস্ব সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরে এগিয়েছে সব সময়। এখনও তার ব্যতিক্রম হয় না। এখানকার বিগ ব্যাশ টিম পার্‌থ স্কর্চার্স বিদেশি ক্রিকেটার খেলায় না। সব স্থানীয় খেলোয়াড় এবং উঠতি প্রতিভা। তারকা বলতে মার্শ ভাইরা— শন এবং মিচেল।

যত্ন নিয়ে নানা রকম গাছ লাগানো। মাঝেমধ্যে বেঞ্চ বসানো আছে। যেখানে বসে হাওয়া খেতে পারতেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। উপরে নীল আকাশ। পঁয়ত্রিশ ডিগ্রি গরম থাকলেও খুব একটা গায়ে লাগছে না কারণ, দারুণ মনোরম হাওয়া বইছে। সব মিলিয়ে ওয়াকা যেন শুধুই ক্রিকেট মাঠ ঠিল না, ছিল ক্রিকেট রোম্যান্টিসিজমের মঞ্চ। সেটাই অতীত হয়ে যাচ্ছে।

ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের দিক থেকে ‘হয়ে যাচ্ছে না’ বলে অবশ্য হয়ে গেলই বলে দেওয়া যায়। বুধবার কোহালিরা ওয়াকায় প্র্যাক্টিস করে গেলেন। আর এখানে ফিরছেন না। বৃহস্পতিবার নতুন স্টেডিয়ামেই মহড়া চলবে তাঁদের। তাই আর কখনও কোহালি বা তাঁর দলকে পুরনো হতে চলা ওয়াকায় নামতে দেখা যাবে কি না, সেটাই অনিশ্চিত।

মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছে ‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই’-এর মতো ওয়াকা শেষ বারের মতো দু’টো দলকে অগ্নিপরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে দিল। কর্তাদের দাবি, নতুন স্টেডিয়ামেও বল ছুটবে, লাফাবে। ওয়াকার বিখ্যাত মাটিই নাকি তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সোয়ান নদীর ও-পারে। ‘ড্রপ-ইন’ পিচ হলেও তা বানানো হয়েছে ওয়াকার মাটি দিয়েই। তাই পেস ও বাউন্স হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই বলেই তাঁদের দাবি। অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার সেই দাবিকে আরও জোরালো করে দিয়ে বলেছেন, তিনি শেফিল্ড শিল্ডের ম্যাচ দেখেছেন নতুন মাঠে। পেস আর বাউন্স একই আছে। যদি সেটাই হয়, তা হলে এ দিন দ্রুতগামী ঘাসের পিচে দু’দলের ব্যাটসম্যানদের টেস্ট পেপার সল্‌ভ করিয়ে রাখল ওয়াকা। যেটা টেস্টের সময় কাজে দেবে।

আবার বাইশ গজের চরিত্র নিয়ে কেউ নিঃসংশয়ও হতে পারছে না। অতীতের মতো ওয়াকায় খেলা হলে এখানে চার পেসারে নামার কথা উঠত। বিশেষ করে ভারতের হাতে এখন যে-হেতু দারুণ পেস ব্যাটারি মজুত। এ দিন অনুশীলনে ভুবনেশ্বর এবং উমেশ দু’জনেই যে-রকম ফুটন্ত বোলিং করলেন, অনায়াসে নামিয়ে দেওয়া যায়। সমস্যা হচ্ছে, ‘ড্রপ-ইন’ পিচ শেষের দিকে ভাঙার লক্ষণ দেখায়। যে-রকম অ্যাডিলেডে হয়েছে। সেই কথা ভেবেই স্পিনারকে ছাড়া নামার ভাবনা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারতের দিকে রোহিত শর্মার ফিটনেস নিয়ে সামান্য চর্চা চলছে। রোহিত এ দিন প্র্যাক্টিসেও এলেন না। এমনিতে দল তাঁর উপরে আস্থা রাখছে। আশা করছে, ফিটও হয়ে যাবেন। তবু যদি কোনও বিপদ তৈরি হয়, হনুমা বিহারীকে নেটে দীর্ঘ অনুশীলন করিয়ে রাখা হল। পৃথ্বী শয়ের পার্‌থ টেস্ট খেলার সম্ভাবনা কার্যত নেই। তাই ফের ওপেনে ভরসা সেই রাহুল এবং বিজয়।

অ্যাডিলেড টেস্টে দু’দলের দুই অফস্পিনার নেথান লায়ন এবং আর অশ্বিন দু’জনেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন। পার্‌থকে যতই বরাবর পেসারদের পীঠস্থান বলে মানা হোক, এ বারে ‘ড্রপ-ইন’ পিচের সৌজন্যে তাঁরা মোটেও আলোচনার বাইরে চলে যাননি। বরং বেশ ভাল মতোই চর্চা চলছে যে, নতুন স্টেডিয়ামের নতুন পিচে শেষের দিকে ফুটম্ত গতি উধাও হয়ে না দুরন্ত ঘূর্ণির ভেল্কি দেখা যায়! নতুন পার্‌থ কী চমক নিয়ে উপস্থিত হয়, সেটাই এখন সব চেয়ে বড় কৌতূহল।

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Test India Australia India vs Australia Perth Test
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy