Advertisement
E-Paper

নামের ওজন কাজে লাগিয়ে বাজিমাত সেই পস্টিগার

সেই ফুটবল জীবনের গোড়া থেকে মাঠের ভেতর একটা বিষয়কে ভীষণ গুরুত্ব দিই আমি। বডি ল্যাঙ্গোয়েজ! একজন প্লেয়ারের চনমনে শরীরী ভাষাই বুঝিয়ে দেয় সে ম্যাচে কিছু করে দেখাতে কতটা মরিয়া।

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:২৪

নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড-১ : এটিকে-২

(আলফারো) (পস্টিগা, বেলেনকোসো)

সেই ফুটবল জীবনের গোড়া থেকে মাঠের ভেতর একটা বিষয়কে ভীষণ গুরুত্ব দিই আমি। বডি ল্যাঙ্গোয়েজ! একজন প্লেয়ারের চনমনে শরীরী ভাষাই বুঝিয়ে দেয় সে ম্যাচে কিছু করে দেখাতে কতটা মরিয়া।

এ বারের আইএসএলে আটলেটিকো দে কলকাতার যে ক’টা খেলা দেখেছি তার ভিত্তিতে ওদের কোচ মলিনার একটা গেমপ্ল্যান আমার কাছে মোটামুটি পরিষ্কার। ডান দিক থেকে দ্যুতিকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে পেড়ে ফেলো। তাই নর্থ-ইস্ট কোচ যে কলকাতার এই দক্ষিণ আফ্রিকান ফুটবলারকে শুক্রবারও ‘অফ’ করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন, সেটা ম্যাচের শুরু থেকে বুঝতে পারছিলাম। আর সেটা দিলেনও।

হাফটাইমের পরেই যখন দ্যুতির জায়গায় পস্টিগা নামছে, সেই মুহূর্তে টিভিতে ক্লোজ শটে ওর পজিটিভ বডি ল্যাঙ্গোয়েজটা চোখে লাগল আমার। তখনই মনে হয়েছিল, চোট সারিয়ে মাঠে ফিরে পস্টিগা কিছু করলেও করতে পারে। আর শেষ পর্যন্ত সেটাই হতে দেখলাম।

পস্টিগাকে মোক্ষম সময়ে পরিবর্ত নামানোর সিদ্ধান্তের জন্য অনেকে হয়তো এ দিন গুয়াহাটির গ্যালারিতে থাকা এটিকে কোচ মলিনার মগজের কথা বলবেন। আমি কিন্তু এক্ষেত্রে পস্টিগার কথাই বেশি করে বলব। টিম পিছিয়ে, এই অবস্থায় মাঠে ঢুকেই সতীর্থদের চিয়ার আপ করল। হাততালি দিয়ে তাতানোর চেষ্টা করতে দেখলাম ওকে। আর ১-১ করার সময়? মাথা একদম ঠান্ডা রেখে ঠিক সময় বলের কাছে পৌঁছে পস্টিগার ওই হেড-টাই তো এ দিনের ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।

ম্যাচটা দেখতে বসে নব্বইয়ের একটা মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের কথা মনে পড়ছিল। যেখানে হাতের প্লাস্টার কাটিয়ে এ রকমই সুপার সাব হিসেবে নেমে পিছিয়ে থাকা মোহনবাগানকে গোল করে ম্যাচে ফিরিয়েছিলাম। তাই জানি, চোটের জন্য বেশ কয়েক দিন মাঠের বাইরে থাকার পর টিমের একজন সিনিয়র ফুটবলার যখন মাঠে নামে তখন সে মনে মনে কতটা মরিয়া থাকে। আর তাকে নামতে দেখে বিপক্ষ কতটা মানসিক ভাবে টলে যেতে পারে। বিচক্ষণ ফুটবলাররা ঠিক এই সুযোগটাই কাজে লাগায়।

এ দিন পস্টিগার গোলটার মধ্যেও সেই বিচক্ষণতা দেখলাম। এমনিতে আমার মনে হয়, এ বার আইএসএলে ও ফিরে এসেছে নিজের ছাপ রাখার জন্য। যেটা আগের বার লম্বা চোটের ধাক্কায় পারেনি। ও যে পস্টিগা, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সতীর্থ বিশ্বকাপার সেটা ভারতীয় ফুটবলকে বোঝানোর জন্য। তা ছাড়া বেশ কিছু দিন বিশ্রাম সত্ত্বেও পস্টিগা যে ফর্মে আছে তাও বোঝা যাচ্ছিল ওর পাসিং, বল হোল্ডিংয়ে। এ দিন পস্টিগা নামতেই নর্থ-ইস্ট ডিফেন্সিভ হয়ে পড়ল। পস্টিগাও পরিস্থিতিটা তাড়াতাড়ি বুঝে ফেলে যে, এরা কেঁপে গিয়েছে। সুযোগটা আমাকে কাজে লাগাতে হবে। আর সেটা খুব সুন্দর কাজেও লাগাল।

গোলটার সময়ও দেখবেন, ও ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা ডিফেন্ডারের আগেই বলের কাছে মাথাটা নিয়ে গিয়েছিল। এটাই তো টিমের মার্কির আসল পরিচয়। আর ওই গোলের পরেই নর্থ-ইস্ট সেই যে চাপে পড়ল, আর সেখান থেকে বেরোতে পারেনি। ম্যাচটা হেরেই গেল। চাপের জেরেই এটিকের দ্বিতীয় গোলটার সময় নর্থ-ইস্টের লেফট ব্যাক ঠিক মতো পজিশন নিতেই ভুল করে বসল। সেই সুযোগেই বেলেনকোসোর গোল।

মলিনাকে ধন্যবাদ একটা কারণেই দেব যে, স্প্যানিশ ভদ্রলোক পস্টিগাকে মাঠে ফেরানোর ব্যাপারে কোনও তাড়াহুড়ো করেননি মিডিয়ার টানা প্রশ্নের সামনে। ঠিক সময়ই ওকে ব্যবহার করলেন বুদ্ধি করে। ফিরতি লেগ-ই আইএসএলে গুরুত্বপূর্ণ। তখনই দলগুলোর লিগ টেবলে সাপ-লুডোর মতো ওঠানামা হয়। আর সেই পরিস্থিতিতে ম্যাচ-ফিট পস্টিগা অনেক টিমের আত্মবিশ্বাস শুষে নিতে একাই একশো। যাতে আখেরে লাভ তো কলকাতার!

Helder Postiga ISL2016 ATK
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy