Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আদালত অগ্নিশর্মা, খাদের কিনারে শ্রীনি

ভরা আদালত কক্ষে বিচারপতিদের তীব্র ভর্ৎসনা। তাঁর আইনজীবীর বিচারপতিদের কাছে ক্ষমা-প্রার্থনা। বিচারপতিদের অগ্নিবর্ষণের মুখে পড়ে ব্যক্তিগত আইনজীবীর রীতিমতো পালিয়ে যাওয়া। আদালতে উপস্থিত বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মার বয়ান অনুযায়ী, বোর্ড নির্বাচনের ঠিক সাত দিন আগে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের দুর্গতির পরপর নমুনা! যা শুধু যে তাঁকে মহাধাক্কা দিল তাই নয়, তাঁর বোর্ড-ভবিষ্যতকেও একেবারে খাদের কিনারে নিয়ে ফেলল!

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৭
Share: Save:

ভরা আদালত কক্ষে বিচারপতিদের তীব্র ভর্ৎসনা।

তাঁর আইনজীবীর বিচারপতিদের কাছে ক্ষমা-প্রার্থনা।

বিচারপতিদের অগ্নিবর্ষণের মুখে পড়ে ব্যক্তিগত আইনজীবীর রীতিমতো পালিয়ে যাওয়া।

আদালতে উপস্থিত বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মার বয়ান অনুযায়ী, বোর্ড নির্বাচনের ঠিক সাত দিন আগে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের দুর্গতির পরপর নমুনা! যা শুধু যে তাঁকে মহাধাক্কা দিল তাই নয়, তাঁর বোর্ড-ভবিষ্যতকেও একেবারে খাদের কিনারে নিয়ে ফেলল!

বিহার ক্রিকেট সংস্থার পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে শ্রীনির বিরুদ্ধে যে আদালত অবমাননার মামলা পেশ করা হয়েছিল, সোমবার ছিল তার শুনানি। সেখানে মিডিয়া রিপোর্ট পেশ করে অভিযোগ করা হয়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বোর্ড ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শ্রীনি। যে বৈঠকে তিনি ঢুকেছিলেন তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে। তার পর মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন। যা পরিষ্কার আদালত অবমাননা। কারণ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, আসন্ন বোর্ড নির্বাচন লড়তে পারবেন না শ্রীনি। বিহার ক্রিকেট সংস্থার দায়ের করা পিটিশনে শুধু শ্রীনি নন, আরও তিন জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়। এঁরা হলেন, বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল, কোষাধ্যক্ষ অনিরুদ্ধ চৌধুরি এবং বোর্ডের অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট শিবলাল যাদব। অভিযোগ, এঁরা চেন্নাইয়ের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বসতে দিয়েছেন শ্রীনিকে। রায় সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল থেকেও আটকানোর কোনও চেষ্টা করেননি।

এ দিন মামলাটি ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রবল ক্ষেপে যান বিচারপতিরা। বিচারপতি টিএস ঠাকুর এবং খলিফুল্লাহর ডিভিশন বেঞ্চ রীতিমতো ক্ষোভের সঙ্গে শ্রীনির আইনজীবী কপিল সিব্বলকে জিজ্ঞেস করেন, শ্রীনি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন কোন যুক্তিতে? যেখানে শ্রীনির নির্বাচনে দাঁড়ানো নিয়ে আদালতের কী রায়, সেটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। টেনে আনা হয় গত ২ জানুয়ারির ঐতিহাসিক রায়ের প্রসঙ্গ, যেখানে বলা ছিল, একই সঙ্গে বোর্ড প্রেসিডেন্ট এবং চেন্নাই সুপার কিঙ্গসের মালিক হয়ে স্বার্থের সংঘাত ঘটিয়েছেন শ্রীনি। বোর্ড নির্বাচনে দাঁড়ানোর কোনও অধিকার তাঁর নেই। উত্তেজিত বিচারপতিরা বলতে থাকেন, “শ্রীনিবাসনের কোনও ভাবেই উচিত হয়নি বৈঠকে অংশ নেওয়া। আমাদের রায়ের সারমর্ম ছিল, উনি স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়ে। আদালত এটা নিয়ে অসন্তুষ্ট।”

আদালতে হাজির প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, সিব্বল তখন বলার চেষ্টা করেন যে, সুপ্রিম কোর্ট শ্রীনির নির্বাচনে লড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করার উপর নয়। তা ছাড়া ওয়ার্কিং কমিটির ওই বৈঠকে বার্ষিক সভার দিন নির্ধারণের বাইরে বিশেষ কিছু হয়নি। আর দ্বিতীয়ত, ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে শ্রীনির সভাপতিত্ব করা নিয়ে কেউ আপত্তি তোলেনি, তাই তিনি সেটা করেছেন। যা শুনে বিচারপতিরা আরও রেগে যান। সিব্বলকে তিরস্কার করে বিচারপতি ঠাকুর বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট যদি বলে স্বার্থের সংঘাতে তুমি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে না, তা হলে তুমি কি কোনও ভাবে বোর্ড মিটিংয়ে অংশ নিতে পার? উনি কেন বুঝলেন না যে, যখন নির্বাচনে দাঁড়ানোরই অধিকার ওঁর নেই, তখন উনি পদেই বা থাকছেন বা কী করে?” আদিত্য বর্মা বাকিটুকু জুড়লেন। নয়াদিল্লি থেকে ফোনে বললেন, “সিব্বলকে এটাও শুনতে হয়েছে, এত সিনিয়র আইনজীবী হয়ে রায়ের অর্থটা উনি কেন ধরতে পারলেন না!”

আদিত্যই জানাচ্ছেন, যার পরেই নাকি শ্রীনির হয়ে আদালত-কক্ষে ক্ষমা চান সিব্বল। বলেন যে, শ্রীনি সভাপতিত্ব করে ভুল করেছেন। “ওঁদের আজ অবস্থাটা দেখার মতো হয়েছিল! এক আইনজীবী ক্ষমা চাইছেন! শ্রীনির ব্যক্তিগত আইনজীবী রামন তো বিচারপতিদের মেজাজ দেখে শুনানির মাঝপথেই আদালত ছেড়ে পালিয়ে যান! এর পরেও শ্রীনি আশা করে ও নির্বাচনে দাঁড়াবে?” বলে দিচ্ছেন বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব।

আদিত্যর বক্তব্য খুব ভুল নয়। এ দিন ঝাড়া পঞ্চাশ মিনিট ধরে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণের যা নির্যাস, তাতে শ্রীনির নির্বাচনে দাঁড়ানোর অঙ্ক আরও ঘেঁটে যাওয়ারই সম্ভাবনা। কেন রায় অগ্রাহ্য করে শ্রীনি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন, তার উত্তর দেওয়ার জন্য তাঁকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। যে দিন শ্রীনির বাঁচার সম্ভাবনা তো দূর, উল্টে গলায় ফাঁস আরও চেপে বসতে পারে বলেই মনে করছেন আদিত্য।

কারণ শুধু আদালত অবমাননার মামলা নয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আরও দু’টো দাবি পেশ করে রেখেছে বিহার ক্রিকেট সংস্থা। যার প্রথমটা হল, নির্বাচন চেন্নাইয়ে কোন যুক্তিতে হচ্ছে? কেন সেটা চেন্নাইয়ের বদলে মুম্বইয়ের ক্রিকেট সেন্টারে হবে না? আর দ্বিতীয়ত, বোর্ড নির্বাচনে বিচারপতি লোঢা কমিশনের হস্তক্ষেপ। কমিশনের সামনে যেন নির্বাচন হয়। যাতে স্বচ্ছ্বতা থাকে।

যে দু’টো দাবি শ্রীনির রাতের ঘুম আরও কাড়তে পারে। এত দিন গুরুত্বপূর্ণ বোর্ড বৈঠকে শ্রীনি-স্টাইল ছিল দিন দুই-তিন আগে সমস্ত বোর্ড কর্তাকে চেন্নাইয়ে এনে হাজির করা। এবং সবাইকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে মিটিংয়ে নিজের মতামত পাশ করিয়ে নেওয়া। আসন্ন বোর্ড নির্বাচনের ছকটাও একই ধাঁচের ছিল। আগামী ২ মার্চ নির্বাচন। কিন্তু কর্তাদের বলে দেওয়া হয়েছিল ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চেন্নাইয়ে ঢুকে যেতে। আদালত এখন যদি আবেদন শুনে নির্বাচনের স্থান পাল্টে মুম্বই করে, তা হলে শ্রীনি গভীরতর গাড্ডার দিকে এগোবেন। কারণ মুম্বই শরদ পওয়ারের গুহা! যিনি এই মুহূর্তে নির্বাচনের ব্যালটবক্সে শ্রীনির সবচেয়ে মারাত্মক প্রতিদ্বন্দ্বী।

যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে চলতি সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ায় নামেই শুধু বিশ্বকাপ ম্যাচে নামবেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা। আসল কাপ-যুদ্ধ চলবে ধোনির নিজের দেশে, ভারতে। টানটান উত্তেজনা সমেত।

প্রেসিডেন্টস কাপ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE