Advertisement
২৬ মার্চ ২০২৩

কোর্টে উজ্জ্বল তবু বিদেশে পাড়ি অনিশ্চিত

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত র‌্যাকেট হাতে ঘাম ঝরাচ্ছে সে। কিন্তু তার দাম আদৌ মিলবে কি না, তা জানে না ষোলো বছরের যুবরানি বন্দ্যোপাধ্যায়!

অনেক চ্যালেঞ্জের সামনে যুবরানি। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

অনেক চ্যালেঞ্জের সামনে যুবরানি। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৩৯
Share: Save:

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত র‌্যাকেট হাতে ঘাম ঝরাচ্ছে সে। কিন্তু তার দাম আদৌ মিলবে কি না, তা জানে না ষোলো বছরের যুবরানি বন্দ্যোপাধ্যায়!

Advertisement

কেন? বাংলার নতুন প্রজন্মের টেনিস খেলোয়াড়দের মধ্যে ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে এই বঙ্গতনয়া। মহিলাদের জাতীয় স্তরের র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী, আইটিএফ সার্কিট টুর্নামেন্ট খেলার যোগ্যতাও অর্জন করেছে সে। কিন্তু স্পনসরের অভাবে আন্তর্জাতিক স্তরের টুর্নামেন্ট খেলতে যাওয়াটা আপাতত বিশ বাঁও জলে।

যুবরানির বাবা, বায়ুসেনার কর্মী অরবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে জাতীয় স্তরের ফুটবলার ছিলেন। সন্তোষ ট্রফিতে সার্ভিসেসের হয়ে অধিনায়কত্ব করেছেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এত দিন অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে দেশের মধ্যে নানা জায়গায় খেলতে পাঠিয়েছি। কিন্তু বিদেশে পাঠানোর সামর্থ্য আমার নেই।’’ তিনি জানান, যুবরানিকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করেছেন এ শহরের এক হোটেল ব্যবসায়ী অশীতিপর পি কে চৌবেও।

রিও অলিম্পিক্সে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন মেয়েরাই। পিভি সিন্ধু, সাক্ষী মালিক, দীপা কর্মকারদের নিয়ে হইচইও হয়েছে। কিন্তু তাতেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মহিলা খেলোয়াড়দের কতটা সুবিধা হয়েছে, সে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে যুবরানির পরিস্থিতি।

Advertisement

আদতে চন্দননগরের বাসিন্দা যুবরানির টেনিসে হাতেখড়ি বাড়ির পাশের একটি ক্লাবে। পরে বাবার কর্মসূত্রে দিল্লিতে কিছু দিন কোচিং। একটি টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে নজরে পড়ে টেনিস কোচ এনরিকো পিপার্নোর। গত চার বছর ধরে তিনিই যুবরানির ‘মেন্টর’। তিনিও বলছেন, ‘‘এ দেশের প্রায় সব ধাপই যুবরানি টপকে গিয়েছে। এখন ওর বিদেশে প্রশিক্ষণ দরকার। কিন্তু টাকা জোগাবে কে?’’ রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলছেন, খেলোয়াড়দের আর্থিক সাহায্যের জন্য রাজ্যে একটি কমিটি রয়েছে। যুবরানি আবেদন করলে বিষয়টি নিশ্চয়ই বিবেচনা করা হবে।

এনরিকো পিপার্নো টেনিস ট্রাস্টের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সায়নদেব চক্রবর্তী বলছেন, যুবরানীর সার্ভ কিংবা কোর্টের মধ্যে নড়াচড়া খুবই ভাল। কিন্তু তার থেকেও বেশি কুর্নিশ জানানো উচিত ওর সাহস এবং অধ্যবসায়কে। এই প্রসঙ্গেই তিনি বলছিলেন, ‘‘এক দিন অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। কোনও শিক্ষার্থী সে দিন আসেনি। কিন্তু বৃষ্টি মাথায় করেই রবীন্দ্র সদন মেট্রো স্টেশন থেকে হাঁটতে হাঁটতে হেস্টিংসে অর্ডন্যান্স ক্লাবের জিমে পৌঁছেছিল ও।’’ শীতের ভোরে আঁধার থাকতেই টালিগঞ্জের ফ্ল্যাট থেকে বাস ধরে ধর্মতলায় পৌঁছয়। তার পর সেখান থেকে অর্ডন্যান্স ক্লাব।

জেদ অবশ্য কোর্টেও প্রমাণ করেছে এই কিশোরী। গত এপ্রিলে কার্নালে খেলতে গিয়ে হাত ভেঙেছিল যুবরানি। ডাক্তার বলেছিলেন, কোর্টে ফিরতে অন্তত তিন মাস। কিন্তু দে়ড় মাসের মধ্যে শুধু কোর্টে ফেরেনি সে, পরপর চারটি জাতীয় স্তরের টুর্নামেন্টও জিতেছে সে। টেনিসের জন্যই প্রথাগত স্কুলের পড়াশোনা ছেড়ে আপাতত ওপেন স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ছে এই কিশোরী।

শেষ পর্যন্ত এত প্রতিভার দাম কি মিলবে?

লাজুক কিশোরী মুখে উত্তর দেয় না। হাতের র‌্যাকেট দিয়ে ইঙ্গিত দেয়, টেনি়স কোর্টই তার পথ, গন্তব্য সেটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.