Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ঋষভ পন্থকে আউট করে ‌ব্রডের ‘সেন্ড অফ’, ক্ষিপ্ত ভারতীয় শিবির

ইংল্যান্ডের মিডিয়াম পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড ভারতীয়দের উষ্মা আরও বাড়িয়ে দেন দ্বিতীয় দিন সকালে। যখন ঋষভ পন্থকে আউট করে তিনি ‘সেন্ড অফ’ দেন।

বিতর্ক: পন্থকে আউট করার পরে ব্রডের আচরণ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ছবি: টুইটার।

বিতর্ক: পন্থকে আউট করার পরে ব্রডের আচরণ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ছবি: টুইটার।

সুমিত ঘোষ
নটিংহ্যাম শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০৮
Share: Save:

সৌজন্য রেখে এগোতে এগোতেই আচমকা উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে ভারত বনাম ইংল্যান্ড সিরিজে। আর বারুদের স্তুপের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রিকেটারের নাম স্টুয়ার্ট ব্রড।

ইংল্যান্ডের পেসারের সঙ্গে বিরাট কোহালি এবং তাঁর দলের সম্পর্ক খারাপ হওয়া শুরু ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টের প্রথম সকাল থেকে। তৃতীয় টেস্টের একটি বলও তখনও হয়নি। সবে টস হয়েছে এবং কোহালি তা হেরেছেন। ভারত অধিনায়ক তখন মাইকেল হোল্ডিংকে পিচের পাশে দাঁড়িয়ে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। বিস্মিত হয়ে তিনি দেখেন নাকের ডগায় এসে ব্রড বোলিং শ্যাডো করছেন।

সচরাচর টসের সময়ে এ রকম দৃশ্য দেখা যায় না। সব মিলিয়ে মাত্র দশ মিনিটের টস পর্বে দু’দলের আর কোনও ক্রিকেটারকেই আশেপাশে দেখা যায় না। ক্যামেরার ফোকাসে থাকেন শুধু দুই অধিনায়ক। কিন্তু ক্রিকেটীয় সৌজন্যকে পাত্তা না দিয়ে অধিনায়কের মুখের সামনে এসে ব্রডের অমন বোলিং শ্যাডো করা খুব একটা ভাল ভাবে নেয়নি ভারতীয় দল। কোহালি তো সামনেই ছিলেন, আশেপাশে ওয়ার্ম আপে ব্যস্ত ছিলেন তাঁর অনেক সতীর্থ। ব্রডের আচরণ তাঁদেরও চোখ এড়ায়নি।

ইংল্যান্ডের মিডিয়াম পেসার এর পর ভারতীয়দের উষ্মা আরও বাড়িয়ে দেন দ্বিতীয় দিন সকালে। যখন ঋষভ পন্থকে আউট করে তিনি ‘সেন্ড অফ’ দেন। ক্রিকেটে ‘সেন্ড অফ’ হচ্ছে, ব্যাটসম্যানকে আউট করার পরে বোলারের তাঁকে বেরিয়ে যেতে বলা। অর্থাৎ, আউট হয়েছিস এ বার নিপাত যা। মাঠের মধ্যে স্লেজিং নিয়ে কড়াকড়ি আনতে ‘সেন্ড অফ’ নিয়ে বিশেষ সতর্কতা আনতে চাইছে ক্রিকেট আইনের কর্ণধার এমসিসি এবং নিয়ামক সংস্থা আইসিসি। সেই নীতি ধরলে ব্রডের ভঙ্গি নিয়ে ম্যাচ রেফারির হস্তক্ষেপ করার কথা।

ভারতীয় শিবির ব্রডের এই আচরণ নিয়ে ফুটছে। বিশেষ করে অধিনায়ক কোহালি। অভিষেক ঘটানো কুড়ি বছরের এক তরুণকে ব্রড ‘সেন্ড অফ’ দিয়েছেন দেখে ক্ষুব্ধ সকলে। ভারতীয় শিবিরের এক জন সোমবার বলছিলেন, ‘‘স্টুয়ার্ট ব্রড একশো টেস্ট খেলে ফেলা এক জন ক্রিকেটার। সে কি না প্রথম টেস্ট খেলতে নামা কুড়ি বছরের একটা ছেলেকে সেন্ড অফ দিচ্ছে! আমাদের কোনও সিনিয়র প্লেয়ারকে একই জিনিস করলে তা-ও মানা যেত।’’

ক্ষোভের আরও কারণ, ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে ইংল্যান্ডে আসার পরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, ক্রিকেটের স্পিরিট মেনে তাঁরা সকলে খেলবেন। সেই কারণেই জো রুট ওয়ান ডে-তে সেঞ্চুরি করার পরে অধিনায়ক কোহালি হাততালি দিচ্ছিলেন। লর্ডসে ক্রিস ওকস সেঞ্চুরি করার পরে তাঁকে অভিনন্দন জানান ভারত অধিনায়ক। এমনকি, ওকস যখন বার বার তাঁকে পরাস্ত করেও উইকেট পাচ্ছিলেন না, প্রান্ত বদলের সময়ে ইংল্যান্ডের পেসারের পিঠ চাপড়ে দিয়ে যান কোহালি। একই রকম ক্রিকেট স্পিরিট ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন রুটও। এজবাস্টনে কোহালি সেঞ্চুরি করার পরে হাততালি দিয়েছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। ট্রেন্ট ব্রিজেও তার ব্যতিক্রম হল না। এমনকি, জেমস অ্যান্ডারসন— যাঁর সঙ্গে অতীতে বার বার সংঘাত হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের, তিনিও এই সিরিজে আপাত ভাবে শান্ত। মুখ নয়, বলকেই কথা বলতে দিচ্ছেন।

ভারত-ইংল্যান্ড এমনিতে খুব সৌজন্যের ইতিহাস নেই। খটাখটিই বেশি হয়েছে। সচিন তেন্ডুলকরের বিরুদ্ধে নাসের হুসেনের বিতর্কিত লেগ থিয়োরি। মুম্বইয়ে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের জামা খুলে দৌড়, তার পর লর্ডসে ন্যাটওয়েস্ট জিতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত জবাব। ২০০৭ সালে এই ট্রেন্ট ব্রিজেই ঘটে জেলি বিন্স বিতর্ক। জাহির খান ব্যাট করতে এসে দেখেন পিচের সামনে জেলি বিন্স ফেলে রাখা হয়েছে। ব্যাট করতে করতে দেখেন স্লিপ কর্ডন থেকে তাঁর দিকে আরও জেলি বিন্স বৃষ্টি চলছে। জাহির ব্যাট উঁচিয়ে তেড়ে যান কেভিন পিটারসেনের দিকে। রীতিমতো উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে জাহির তোপ দাগেন তাঁর দিকে জেলি বিন্স ছোড়া নিয়ে এবং বল হাতে ইংল্যান্ডকে তিনিই ধ্বংস করেন সেই টেস্টে। ২০১৪-তে ফের ফুলকি উড়ল ট্রেন্ট ব্রিজেই। সে বার ঠোকাঠুকি লাগে অ্যান্ডারসন এবং রবীন্দ্র জাডেজার। অভিযোগ ওঠে ড্রেসিংরুমের দিকে যাওয়ার পথে জাডেজাকে ধাক্কা দিয়েছেন অ্যান্ডারসন। দীর্ঘ সওয়াল-জেরার পরে ইংল্যান্ডের তারকা পেসারকে বেকসুর আখ্যা দেওয়া হয়।

শুধু ক্রিকেট মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও উত্তাপের ইতিহাস রয়েছে। কমেন্ট্রি বক্সে এক বার রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় নাসের হুসেনের। দু’জনেই তখন লাইভ কমেন্ট্রি করছেন এবং ক্রিকেট দর্শকেরা পুরো সেই ঝগড়াটা শুনতে পান। শাস্ত্রী তখন ছিলেন ধারাভাষ্যকার। এখন ভারতীয় দলের হেড কোচ। অতীত ইতিহাস ভুলে তিনি বিতর্কের ঝড়ের মধ্যে পড়া বেন স্টোকসের পাশে দাঁড়ান। তাঁর দেশের মিডিয়া যখন স্টোকসকে রাস্তায় মারামারি করার জন্য বাদ দেওয়ার জোরাল দাবি তুলেছেন, তখন শাস্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে যান, ‘‘আদালত তো ওকে ছেড়ে দিয়েছে, তা হলে আবার কিসের বাধা? আমি ইংল্যান্ড হলে অবশ্যই স্টোকসকে খেলাতাম।’’ এখানেই শেষ নয়, টেস্ট শুরুর দিন মাঠে বেন স্টোকসকে দেখে এগিয়ে গিয়ে হাত মিলিয়ে আসেন অধিনায়ক কোহালিও। ঠিক যে ভাবে পাকিস্তানের মহম্মদ আমিরের ক্রিকেট প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন কোহালি, তেমনই উষ্ণ করমর্দনের হাত বাড়িয়ে দেন ইংল্যান্ড
অলরাউন্ডারের দিকে।

এ সব সৌজন্যের ছবির সুর এবং তাল কেটে দিয়েছেন একা ব্রড। তিনি ঋষভকে চিৎকার করে বেরিয়ে যেতে বলার পরে ইংল্যান্ডের ইনিংসের সময়ে কোহালিকে দেখা গেল ব্রড ব্যাট করতে আসা মাত্র কিছু শব্দ স্প্রে করে দিলেন। ধরে নেওয়া যায়, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে এলেও একই ধরনের অভ্যর্থনা পাবেন দীর্ঘকায় বোলার। ভারতীয় দল আরও একটি ব্যাপার নিয়ে ফুঁসছে। তাদের বক্তব্য, ‘‘ইশান্ত শর্মাকে জরিমানা করলেন ম্যাচ রেফারি। তা হলে স্টুয়ার্ট ব্রডকে ডাকা হল না কেন?’’

ভারত বনাম ইংল্যান্ড যখন, একেবারে নিরামিশ সিরিজ আশা করাটাই দিবাস্বপ্ন দেখা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE