স্থানীয় লিগে ঐতিহাসিক প্রথম ম্যাচে হার! সাড়ে আট দশক পরে এমনটা ঘটলে সেটা তো ঐতিহাসিকই! তা সত্ত্বেও নিজের অবস্থান থেকে নড়ছেন না ইস্টবেঙ্গল কোচ আর্মান্দো কোলাসো। বরং অনুসরণ করছেন তাঁর গোয়া মডেলকেই। ঢাল করছেন ইউথ ডেভেলপমেন্টকে। যদিও লাল-হলুদ কর্তারা কোচের নতুন প্রতিভা তুলে আনতে গিয়ে কলকাতা লিগ জলাঞ্জলি দিতে নারাজ।
মহমেডানের কাছে ছয় বছর পর ইস্টবেঙ্গলের প্রথম হারের পরের দিনের অনুশীলনে লাল-হলুদ কোচ মুখে কলকাতা লিগকে গুরুত্ব দিলেও জুনিয়র ফুটবলার নিয়ে তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার রাস্তা থেকে সরতে নারাজ। বলে দিলেন, “কলকাতা লিগের গুরুত্ব অবশ্যই রয়েছে। সমর্থকদের আবেগের মূল্যও বুঝি। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে আমাকে জুনিয়রদের তুলে আনতেই হবে। আই লিগ, এএফসি কাপে ভাল করার কথা মাথায় রেখে।”
আর্মান্দো ইউথ ডেভেলপমেন্টের জন্য জোরালো সওয়াল করলেও তাঁর ক্লাব কিন্তু কোনও মতেই তরুণ প্রতিভা তুলে আনার অজুহাতে কলকাতা লিগ হারাতে নারাজ। লাল-হলুদের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বললেন, “ইউথ ডেভেলপমেন্ট তো করতেই হবে। কিন্তু সঙ্গে ট্রফিও চাই। কোনও ট্রফিই হাতছাড়া করা চলবে না।” ক্লাব সূত্রে খবর, কর্তাদের এই মনোভাব জানিয়েও দেওয়া হয়েছে লাল-হলুদ কোচকে।
লাল-হলুদ কোচ যদিও বলছেন, “আমার দু’টো দল তৈরি। বুধবার পুলিশ ম্যাচেই দলে অনেক পরিবর্তন করব। আরও কয়েক জন জুনিয়রকে সুযোগ দিতে চাই।” এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন, “ওই ম্যাচে র্যান্টিকে নাও খেলাতে পারি। গোড়ালিতে চোট রয়েছে। আই লিগের কথা ভেবে ওকেও বিশ্রাম দিতে পারি।”
কিন্তু কোচের এই দু’সেট দল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যদি কলকাতা লিগ দূরে সরে যায়? আর্মান্দোর জবাব, “কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেই তো দল সাজিয়েছি। ইউথ ডেভেলপমেন্টে জোর দিতে হবে। মরসুম শেষে চার-পাঁচ জন তরুণ ছেলেকে যদি ভারতীয় ফুটবলের মূল স্রোতে প্রতিষ্ঠা করা যায় তা হলে লাভ ইস্টবেঙ্গলেরই। স্থানীয় ছেলেদের সাপ্লাই লাইনটাই তো বাড়বে।”
ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলেরা আবার ক্লাব কর্তাদের সঙ্গেই একমত। গৌতম সরকার বলছিলেন, “যে যা-ই বলুক কলকাতা লিগের সঙ্গে সমর্থকদের একটা বাড়তি আবেগ জড়িয়ে থাকে, টুর্নামেন্টটা এখানেই হওয়ায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে সেই ট্রফিটাই হাতছাড়া হচ্ছে এটা মানা যায় না।’’ মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের কথায়, “প্রত্যেক কোচই কোন ট্রফিকে বেশি গুরুত্ব দেবেন তা মরসুমের শুরু থেকেই ঠিক করে নেন। আই লিগ শুরু হওয়ার পর কলকাতা লিগ গুরুত্বের বিচারে একটু পিছিয়ে পড়েছে ঠিকই। তরুণ প্রতিভা তুলে আনাটাও দরকার।”
এই বিতর্কিত পরিস্থিতিতে এ দিন সকালে দলের ভুলত্রুটি শুধরে নিতে মাঠেই ব্ল্যাকবোর্ড এনে র্যান্টি-মেহতাবদের ক্লাস নেন আর্মান্দো। লাল-হলুদ কোচ কি একটু হলেও চাপে?
সংবর্ধনা সুতীর্থাদের
লাল-হলুদের ক্রীড়া দিবসে এ বার সম্মানিত হবেন চার খেলার চার তরুণ প্রতিভা। এঁরা হলেন টেবল টেনিসের সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়, সাঁতারু সায়নী ঘোষ, ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় দিশান্ত দেবনাথ এবং জিমন্যাস্টিকসের স্বস্তিকা গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার চিমা ওকোরির পুলিশের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচের দিনই ক্লাবের প্রয়াত শীর্ষকর্তা দীপক (পল্টু) দাসের জন্মদিন। যা ইস্টবেঙ্গলে প্রতি বছর পালিত হয় ক্রীড়া দিবস হিসেবে। অনুষ্ঠানে পল্টু দাস স্মারক বক্তৃতা দেবেন সাংবাদিক কিশোর ভিমানি। পল্টু দাস স্মৃতি সম্মান এ বার মরণোত্তর পাবেন ফুটবলার সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। এ ছাড়াও গত মরসুমে কলকাতা লিগে প্রথম থেকে পঞ্চম ডিভিশনের সেরা পাঁচ ফুটবলার-সহ সদ্য শেষ হওয়া রাজ্য মিটে প্রথম হওয়া ইস্টবেঙ্গল অ্যাথলেটিক্স দলও সংবর্ধিত হবে ওই মঞ্চে। এ দিকে, আগামী সপ্তাহেই ক্লাব-তাঁবুতে চালু হচ্ছে ইস্টবেঙ্গলের অত্যাধুনিক ক্যাফেটেরিয়া। ১৮ অগস্ট দুপুর তিনটেয় যার পথ চলা শুরু হবে ফেডারেশন সচিব কুশল দাসের হাত ধরে।