সলতেটা জ্বলা শুরু করেছিল ১৮ বছর আগে। দীর্ঘ ঝড়-ঝাপ্টা, বাধা-বিপত্তি, উত্থান-পতন পেরিয়ে সেই সলতে আজ পরিণত হয়েছে মশালে। সেই সলতেটা যিনি পাকানো শুরু করেছিলেন, রবিবারের এই ঐতিহাসিক দিনে তিনি যেন আশ্চর্য রকমের শান্ত। হয়ত ভিতরে ভিতরে ফুটছেন। কিন্তু বাইরে কিছুতেই তা প্রকাশ হতে দিচ্ছেন না। শুধু বলে দিয়েছেন, রবিবার ভারতীয় ব্যাডমিন্টন দল যে কৃতিত্ব অর্জন করে দেখাল, তা ১৯৮৩ সালে কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন দলের বিশ্বকাপ জয়ের থেকেও বড়। সমালোচনা ধেয়ে আসতে সময় নেয়নি। কিন্তু তিনি অটল। ঠিক যেমন ছিলেন ১৮ বছর আগে। এক কঠোর প্রশিক্ষক, যিনি প্রতিভা অন্বেষণে ব্রতী। একটাই স্বপ্ন দেখেছিলেন, ভারতের প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্যাডমিন্টন পৌঁছে যাক। সেই কাজে ইতিমধ্যেই সফল। রবিবারের পর থেকে গৃহস্থ বাড়ির রান্নাঘরে ব্যাডমিন্টন নিয়ে আলোচনা আরও বাড়বে।
২০০১ সালে গোটা ভারতবর্ষকে মার্চের এক দুপুরে আন্দোলিত করে দিয়েছিলেন। সুদূর ইংল্যান্ড থেকে খবর ভেসে এসেছিল, অল ইংল্যান্ড ব্যাডমিন্টন জিতেছেন হায়দরাবাদের পুল্লেলা গোপীচন্দ নামে একটি ছেলে। বছর আঠাশের সেই ছেলেটিকে তখনও গোটা দেশ ভাল করে চেনেই না। সঙ্গে সঙ্গে খোঁজ খোঁজ রব পড়ে গেল। তখনকার সময়ে হাতের সামনে নেটমাধ্যম ছিল না। দরকার পেলেই ফোনে কারওর নাম টাইপ করে সার্চ করে নেওয়ার সুযোগ ছিল না। ফলে পর দিন সংবাদপত্রে গোপীচন্দের সম্পর্কে পড়া ছাড়া উপায় ছিল না। রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন হায়দরাবাদের পুত্র। এর আগে সৈয়দ মোদী, প্রকাশ পাড়ুকোন, নান্দু নাটেকর, বিমল কুমাররাও ছিলেন। কিন্তু গোপীচন্দ অল্প সময়েই ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের মনে আলাদা জায়গা করে নিলেন।
তবে অল্প কিছু দিন যেতেই গোপীচন্দ বুঝতে পেরেছিলেন, কেরিয়ারের সায়াহ্নে এসে পড়েছেন তিনি। যা বয়স হয়েছে, তাতে বেশি দিন এই ছন্দ টিকিয়ে রাখা যাবে না। মনে একটা আকাদেমি তৈরি করার বাসনা অনেক দিন ধরেই ছিল। অল ইংল্যান্ড জেতার তিন বছরের মধ্যে তৈরি করে ফেললেন নিজের অ্যাকাডেমি। কাউকে পাশে পাননি, একমাত্র মা-কে ছাড়া। তাঁর খেলোয়াড় হয়ে ওঠার পিছনে মায়ের যতটা অবদান ছিল, কোচ হওয়ার পিছনে বোধ হয় তার থেকে বেশি অবদান রয়েছে। সম্প্রতি এ শহরে একটি অনুষ্ঠানে এসেও তিনি সে কথা স্বীকার করেছেন। অ্যাকাডেমি তৈরি করার পরেও কিছু দিন খেলা চালিয়ে যান গোপীচন্দ। ২০০৮ সাল থেকে পাকাপাকি কোচিংয়ে নেমে পড়েন। শুরু হয় সলতে পাকানো, অর্থাৎ পরবর্তী প্রজন্ম তুলে আনার কাজ।