Advertisement
E-Paper

ক্লান্তি আর অপ্রত্যাশিত ভুল ডোবাল রজারকে

লন্ডনে ফেডেরারকে টাটকা দেখে চব্বিশ ঘণ্টা আগে শহরে ফেরার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, শুক্রবারের সেমিফাইনাল হারের পরেও আমি নিশ্চিত পরের বছরও ওকে উইম্বলডনে খেলতে দেখব।

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০৪:০২
ইন্দ্রপতন। শুক্রবার উইম্বলডনে।-রয়টার্স

ইন্দ্রপতন। শুক্রবার উইম্বলডনে।-রয়টার্স

লন্ডনে ফেডেরারকে টাটকা দেখে চব্বিশ ঘণ্টা আগে শহরে ফেরার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, শুক্রবারের সেমিফাইনাল হারের পরেও আমি নিশ্চিত পরের বছরও ওকে উইম্বলডনে খেলতে দেখব।

এ দিন যে ছেলেটা ফেডেরারকে ৬-৩, ৬-৭ (৩-৭), ৪-৬, ৭-৫, ৬-৩ হারিয়ে প্রথম কানাডিয়ান হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম পুরুষ সিঙ্গলস ফাইনালে উঠল, সেই রাওনিচ ওর চেয়ে দশ বছরের ছোট। এ রকম তাজা তরুণের বিরুদ্ধে আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই একটা পাঁচ সেট জেতার ধকল সত্ত্বেও ফের সাড়ে তিন ঘণ্টার একটা পাঁচ সেট ম্যাচ খেলল ফেডেরার। এক সেট পিছিয়ে থেকে ২-১ সেটে এগিয়ে ছিল। ২০১২-র পর ও আর কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে না থাকতে পারে, কিন্তু প্রায় লাগাতার সেমিফাইনাল-ফাইনাল খেলছে। এ বছরও দু’টো গ্র্যান্ড স্ল্যামে সেমিফাইনালের আগে ওকে তো হারানো গেল না! তা হলে কেন ভাবব পরের বার উইম্বলডনে দেখা যাবে না ফেডেরারকে?

এ দিনও তো আসলে হারল চতুর্থ সেটে ৫-৬ স্কোরে নিজের সার্ভে ৪০-০ অবস্থায় দু’-দু’টো সম্পূর্ণ অফেডেরারসুলভ ডাবল ফল্ট করে বসে! যেখানে ফেডেরারের সার্ভিস কোনও কালে বুম-বুম না হোক, চূড়ান্ত নিখুঁত। যে কারণে অপ্রত্যাশিত সুযোগটা রাওনিচকে আমার মতে ওই সময় প্রচুর তাতিয়ে তুলেছিল।

তার পর শেষ সেটে যে সার্ভিস গেমে ব্রেক হল ফেডেরার, সেটায় একটা রিটার্ন মারতে গিয়ে সেন্টার কোর্টের স্যাঁতস্যাঁতে ঘাসে পা পিছলে উপুড় হয়ে পড়ে পা-এ একটু হলেও চোট পেল। কিন্তু সত্যিকারের চ্যাম্পিয়নের মানসিকতা তো! এক মিনিটের ভেতর ট্রেনারের কাছে ম্যাসাজ নিয়ে কোর্টে ফিরে এল। তবে চতুর্থ সেটের পরেও ওকে টিভিতে দেখলাম, কোর্টের ধারে থাই-ম্যাসাজ নিতে। নিজে একটুআধটু এই পর্যায়ে টেনিস খেলার সুবাদে তাই তখনই একঝলক মনে হয়েছিল, পরপর দু’টো ম্যারাথন ম্যাচ খেলার ধকল ঠিক এক মাস বাদে পঁয়ত্রিশে পা দিতে চলা কিংবদন্তিকেও ক্লান্ত করে তুলেছে। এই ম্যাচ পঞ্চম সেট গড়ালে রাওনিচের গ্রাসকোর্টের টিপিক্যাল প্রচণ্ড পাওয়ারফুল সার্ভ-ভলি গেমের মোকাবিলা করা ফেডেরারের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। সেই আশঙ্কাই শেষমেশ সত্যি হল।

বিলেতের কাগজে পড়ে এলাম, রাওনিচের তারকা কোচ জন ম্যাকেনরো পরামর্শ দিয়েছে, ‘‘ভাই, রজারের বিরুদ্ধে কোর্টে একটু অ্যাটিটিউড দেখিও। গ্রেট চ্যাম্পিয়নের চোখে চোখ রেখো। তোমার স্বভাবসিদ্ধ ঠান্ডা মেরে থেকো না ম্যাচের সময়। বিগ ম্যাচ শুধু ভাল খেলেই কিন্তু জেতা যায় না।’’ ইঞ্জিনিয়ার বাবার ছেলে রাওনিক অবসর সময়ে আর্ট গ্যালারিতে কাটাতে ভালবাসে। পেশাদার ট্যুরে ওর বিরুদ্ধে কমন অভিযোগ, কোর্টে ভীষণ ঠান্ডা স্বভাবের। তো এ দিন দেখলাম, ফেডেরারের মতো মহাপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য ৭৫টা উইনারের অন্তত সাতটায় রাওনিচকে মুষ্টিবদ্ধ হাত আকাশে ছুড়তে। চিৎকার করতে। কিন্তু শিষ্যের কয়েক গুণ উত্তেজিত দেখাল প্লেয়ার্স বক্সে বসা গুরুকে। সম্পূর্ণ কালো আউটফিট (চোখেও কালো চশমা) ম্যাকেনরোর বারবার লাফঝাঁপ দেখে মনে হচ্ছিল, ফেডেরারকে যেন ও-ই হারাচ্ছে। তবে ম্যাকেনরো টেনিস স্কিলের পাশাপাশি রাওনিচের মানসিকতাতেও প্রচুর সাহায্য করেছে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।

তা সত্ত্বেও আমার মতে ফাইনালে অ্যান্ডি মারেকে হারানো রাওনিচের পক্ষে ভীষণ কঠিন। এক যদি না ও এ দিনের মতো ধারাবাহিক অসাধারণ সার্ভিস রবিবারও করে। তবে গত মাসেই কুইন্স ক্লাব ফাইনালে রাওনিচকে হারানোর আত্মবিশ্বাস উইম্বলডন ফাইনালে থাকবে মারের মধ্যে। এই মুহূর্তে দুর্ধর্ষ ফর্মেও আছে। সেমিফাইনালে বার্ডিচকে মাত্র ন’টা গেম দিয়ে স্ট্রেট সেটে হারানোতেই যেটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার।

তা ছাড়াও একটা কথা বলব। রাওনিচের ব্যাকহ্যান্ড ‘অ্যাভারেজ’ হলেও ফোরহ্যান্ড স্ট্রোক বিশ্বমানের। হয়তো সে কারণে এ দিন ফেডেরার প্রায় সব রিটার্ন ওর ব্যাকহ্যান্ডে রাখছিল। কিন্তু তাতে ফেডেরারের রিটার্নে বৈচিত্র, চমক বলে যেমন কিছু থাকছিল না, তেমনই রাওনিচ নিজের দুর্বল দিকটাতেও ক্রমে সড়গড় হয়ে পড়ল। সুপার স্ট্র্যাটেজিস্ট ফেডেরারের কাছ থেকে যেটা দেখা অপ্রত্যাশিত!

যেমন অবিশ্বাস্য অল ইংল্যান্ডের সেন্টার কোর্টে রাজা রজারকে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা! কী বলব একে? পারফেক্ট প্রতীকী!

Roger federer Wimbledon
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy