Advertisement
০৫ মে ২০২৪
আইএসএল

স্ট্রাইকারদের লড়াইয়ে নায়ক দুই গোলকিপার

ফেরান কোরামিনাস বনাম ম্যানুয়েল লানজ়ারোতে, কেউই নিজেদের দলকে জেতাতে পারলেন না।

আক্রমণ: গোয়ার রক্ষণে হানা এটিকের। বল দখলের লড়াইয়ে কলকাতার বলবন্ত সিংহ (ডানদিকে)। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

আক্রমণ: গোয়ার রক্ষণে হানা এটিকের। বল দখলের লড়াইয়ে কলকাতার বলবন্ত সিংহ (ডানদিকে)। বুধবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৭
Share: Save:

এটিকে ০ • এফসি গোয়া ০

দুই স্প্যানিশ ‘বন্ধু’-র যুদ্ধ নিষ্ফলাই থাকল।

ফেরান কোরামিনাস বনাম ম্যানুয়েল লানজ়ারোতে, কেউই নিজেদের দলকে জেতাতে পারলেন না। তবে তারকাদের ব্যর্থতার দিনে দু’দলের দুই গোলকিপার আলো ছড়ালেন বুধবারের স্নিগ্ধ শীতের রাতে। এটিকের অরিন্দম ভট্টাচার্য এবং গোয়ার মহম্মদ নওয়াজ। ম্যাচ অমীমাংসিত থাকায় লাভ হল সের্খিয়ো লোবেরার দলের। গোয়া গোল পার্থক্যে উঠে এল দু’নম্বরে। আর স্টিভ কপেলের দল নয় ম্যাচের পর থাকল ছয়েই। ম্যাচের পর এটিকে কোচ হতাশ গলায় বলে গেলেন, ‘‘জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হল। এই দুই পয়েন্ট নষ্ট কতটা ক্ষতি করল সেটা বোঝা যাবে লিগ শেষে। তবে শেষ চারে যাওয়ার রাস্তা এখনও শেষ হয়ে যায়নি।’’ আর গোয়ার কোচের গলায় রেফারিকে নিয়ে তীব্র ক্ষোভ। ‘‘রেফারি নিয়ে বেশি বললে সাসপেন্ড হতে হবে। আমাদের একটা পেনাল্টি প্রাপ্য ছিল। ভারতে রেফারিংয়ের আরও উন্নতি দরকার।’’ খেলার শেষে বলা দুই কোচের যুক্তিই মনে হল ঠিক। এটিকে যেমন দু’-তিন গোলে ম্যাচটা জিততেই পারত। তেমনই গোয়ার মনবীরের শট নিজেদের বক্সে হাত দিয়ে থামিয়েছিলেন আন্দ্রে বেকে। রেফারি রাহুল গুপ্তা তা দেননি।

আরও পড়ুন: পাঁচ গোল দিয়ে হকি বিশ্বকাপে অভিযান শুরু ভারতের

রেফারির বারবার হলুদ কার্ড দেখানো বা পেনাল্টি নিয়ে বিতর্ক বাদ দিলে যুবভারতীতে এ দিন উপস্থিত হাজার কুড়ি দর্শক উপভোগ্য একটা খেলা দেখলেন। গোয়া বনাম বাংলা-ভারতীয় ফুটবলের বরাবরই একটা চিরন্তন লড়াই হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। তা সে আই লিগ হোক বা আইএসএল। সন্তোষ ট্রফি হোক বা কোনও প্রীতি ম্যাচ। যেখানেই ফুটবল-জনপ্রিয় দুই রাজ্য মুখোমুখি হোক একটা মর্যাদার লড়াই হয়ে দেখা দেয় তা। এই ম্যাচেও সেই লড়াই জারি থাকল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, অঙ্ক কষা ফুটবল, ধাক্কাধাক্কি, একে অন্যের দিকে তেড়ে যাওয়া, গোল নষ্টের প্রদর্শনী, এটিকে স্টপার জন জনসনের গোল লাইন থেকে বল বাঁচানো—এসবই রং ছড়ালো রামধনুর মতো ।

গোয়ার স্প্যানিশ কোচ লোবেরাই আইএসএলের একমাত্র কোচ যিনি চমকপ্রদ একটা তত্ত্ব নিয়ে মাঠে নামছেন-- ‘গোল খাও, সমস্যা নেই, তবে বেশি গোল করো।’ তাঁর রক্ষণ তাই গোল খাচ্ছে অনেক, আবার গোয়ার স্ট্রাইকাররা গোল করছেনও প্রচুর। তাঁর সেই ভাবনা এদিন কাজে লাগল না। এর জন্য স্টিভ কপেলের মগজাস্ত্রকে অভিবাদন জানাতেই হবে। গোয়ার গোলমেশিন কোরো বিরতি পর্যন্ত মাত্র এক বার গোল করার মতো জায়গায় পৌঁছেছিলেন। স্প্যানিশ স্ট্রাইকারের দুর্দান্ত শট রুখে দিলেন এটিকে গোলকিপার অরিন্দম। এ বারের প্রতিযোগিতায় কোরো এখনও সর্বোচ্চ গোলদাতা। আট ম্যাচে আট গোল হয়ে গিয়েছে তাঁর। মানে একশো শতাংশ সাফল্য। তাঁকে কপেল ভোঁতা করে দিলেন বলের সাপ্লাই লাইন কেটে দিয়ে। ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার গার্সন ভিয়েরাকে স্টপার থেকে তুলে এনে মাঝমাঠে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন এটিকে কোচ। তাতে হল কী, গোয়ার মিডিয়ো ব্র্যান্ডন ফার্নান্দেজ এবং জ্যাকিচন্দ সিংহরা যেখান থেকেই বল বাড়াচ্ছিলেন সেটাই জমা পড়ে যাচ্ছিল রোমিং মিডিয়ো ভিয়েরার পায়ে। তাঁকে সঙ্গত করছিলেন প্রণয় হালদারও। ফলে আট ম্যাচে ২২ গোল করা গোয়া কিছুই করতে পারল না। গোয়ার এই দলটির একটি ফ্যান ক্লাব আছে। তাঁরা এ দিনও প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছিলেন গ্যালারিতে। লোবেরার দল জিতলে গোয়ার ফতোরদা স্টেডিয়ামে ‘তিকিতিকা, তিকিতাকা’ বলে সুর করে গান গায় ওঁরা। এখানে সেই সুযোগটাই পেলেনই না। যে পাসের ফুলঝুরির জন্য কোরোদের খেলা চোখ টানছে সেটাই অদৃশ্য।

আরও পড়ুন: ‘আমরা আগ্রাসীই থাকব’ ক্লার্কের মন্তব্যের পর জবাব পেনের

বরং হল ঠিক উল্টোটা। গোয়ার ডিফেন্ডারদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়লেন এভার্টন স্যান্টোসরা। বিরতির আগে অন্তত তিনটি গোলের সুযোগ নষ্ট করল এটিকে। হিতেশ, স্যান্টোস, লানজ়ারোতেরা ওই সময় সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতেই পারত। সম্ভবত মরসুমে প্রথম বার এটিকের এ রকম আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে দেখা গেল। সামনে স্যান্টোসকে রেখে দু’প্রান্ত দিয়ে হিতেশ আর জয়েশের দৌড় গোয়াকে বারবার বিপদে ফেলছিল। তবে কপেলের দলের সামনে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বছর আঠারোর এক গোলকিপার—মহম্মদ নওয়াজ। এ বারের প্রতিযোগিতার সেরা আবিষ্কার বলা হচ্ছে মণিপুরের এই ছেলেটিকে। জাতীয় যুব দলে খেললেও কখনও কোনও ক্লাবের হয়ে খেলেননি। গোয়ায় প্রো লিগে খেলেছেন এ বার। তারপর সরাসরি আইএসএলে। লোবেরার মতো নামী কোচ তাঁর উপর আস্থা রাখছেন। গোয়ার দুই স্টপার সের্জেনো মৌরাতাদা, চিঙ্গেলসেনা সিংহদের ব্যর্থতা তো ঢেকে দিলেন তিনিই।

এটিকে: অরিন্দম ভট্টাচার্য, অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়, জন জনসন, আন্দ্রে বেকে, রিকি লালামাওমা, প্রণয় হালদার, গার্সন ভিয়েরা, এভার্টন স্যান্টোস (এলি বাবেজ), জয়েশ রানে (বলবন্ত সিংহ), ম্যানুয়েল লানজ়ারোতে, হিতেশ শর্মা (কোমল থাটাল)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football ATK vs FC Goa ISL
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE