Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভারোত্তালনে সফল সব্জি বিক্রেতা

‘ফাইট কোনি, ফাইট!’ সংলাপটার সঙ্গে বাংলাপ ক্রীড়া জগতে এক লড়াইয়ের কথা ভেসে আসে। সেই একই সংগ্রামের ছবি নদিয়ার বল্লভপাড়ার অপু সাহার জীবনেও। আর্থিক দূরাবস্থার সঙ্গে লড়েই কাটোয়ার সব্জি বিক্রেতা অপুর ঝুলিতে এসেছে ভারোত্তলনের বিভিন্ন পদক। স্বীকৃতি মিলেছে দেশে-বিদেশেও।

ভার তোলায় ব্যস্ত অপু। কাটোয়ার ব্যায়ামাগারে তোলা নিজস্ব চিত্র।

ভার তোলায় ব্যস্ত অপু। কাটোয়ার ব্যায়ামাগারে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০১:২৫
Share: Save:

‘ফাইট কোনি, ফাইট!’ সংলাপটার সঙ্গে বাংলার ক্রীড়া জগতে এক লড়াইয়ের কথা ভেসে আসে। সেই একই সংগ্রামের ছবি নদিয়ার বল্লভপাড়ার অপু সাহার জীবনেও। আর্থিক দূরাবস্থার সঙ্গে লড়েই কাটোয়ার সব্জি বিক্রেতা অপুর ঝুলিতে এসেছে ভারোত্তলনের বিভিন্ন পদক। স্বীকৃতি মিলেছে দেশে-বিদেশেও।

অপুর প্রতি দিনের রুটিনটা কেমন? পড়শিরা জানান, প্রতি দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ঘণ্টা দুয়েক শরীরচর্চা না করলে তার চলে না। তার পরে বেরিয়ে পড়া কাটোয়ার উদ্দেশে। দিনভর সব্জি বিক্রি করে সন্ধ্যায় ফের ঘণ্টা তিনেক শরীরচর্চা, কাটোয়ার একটি ব্যায়ামাগারে। পরিশ্রমের সাফল্য মিলেছে দেশ-বিদেশের ভারত্তোলন মঞ্চে। জাতীয় স্তরের ভারোত্তলন প্রতিযোগিতায় বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে ১৬৫ কেজি বিভাগে দ্বিতীয়, ২০১৪-তে সারা ভারত স্ট্রেংথ লিফটিং ফেডারেশন আয়োজিত জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় ১০৫ কেজি বিভাগে তৃতীয় হন অপু। তারপরে স্থানীয় ক্লাব ও জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে পাড়ি দেন বাহারিনের মানামায়। সেখানেও আর্ন্তজাতিক স্ট্রেংথ লিফটিং অ্যন্ড ইনক্লাইন বেঞ্জ প্রেস চ্যাম্পিয়নশিপে মেলে রুপো। সম্প্রতি ২০১৬-র মার্চে ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত একটি প্রতিযোগিতাতেও মিলেছে ব্রোঞ্জ।

সাফল্যের ভাঁড়ার উপচে পড়লেও শুরুটা এত সহজ ছিল না অপুর কাছে। সব্জি বিক্রেতা বাবা হৃদরোগী। সামর্থ্য ছিল না ছেলেকে বড় সংস্থার তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ দেওয়ানোর। উচ্চ মাধ্যমিকের পরে পড়াশোনাটাও চালিয়ে যাওয়া হয়নি অপুর। সংসারের সুরাহা করতে বাবার পেশাকেই বেছে নিতে হয়েছে।

কিন্তু ভারোত্তলনের টান এত সহজে কী পিছু ছাড়ে! শুধুমাত্র জেদকে সঙ্গী করেই নিজের চেষ্টায় এগিয়ে যেতে চেয়েছেন অপু। তবে বাড়ির ছেলের বহু সাফল্যের পরেও এখন সাহা পরিবারের চিন্তার ছায়া। আগামী বছর কলম্বোতে বসছে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। সেখানে কী ভাবে যোগ দিতে যাবেন, তা নিয়ে ঘোর চিন্তায় অপু ও তাঁর পরিবার। অপুর কথায়, ‘‘ধার করে আগে প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছি। সেই ধারই শোধ হয়নি।’’ চিন্তায় পড়েছেন তাঁর স্ত্রী কালীদাসীদেবীও। তিনি বলেন, ‘‘শ্বশুরের হার্টের অসুখ, মেয়ের পড়া। ওঁর খেলার জন্য কী ভাবে টাকা জোগাড় হবে, জানি না।’’

তবে অর্থের অভাবে থেমে থাকতে নারাজ অপু। ইতিমধ্যে জেলা পরিষদ থেকে ৩০ হাজার টাকা মিলেছে বলে জানান তিনি। নিজের স্বপ্নপূরণ করতে দরকারে মুখ্যমন্ত্রীরও দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানান। পাশ থেকে ‘কোনি’র ক্ষিদ্দার মতোই কোচ আরুণি চন্দ্র শুধু বলতে থাকেন, ‘ফাইট অপু ফাইট’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vegetable seller Apu Saha Weight lifter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE