Advertisement
E-Paper

‘এই ফর্ম চললে সানিদের বিপদে ফেলে দেবে বিরাট’

টানা দু’দিন ধরে বিরাট কোহালির অবিশ্বাস্য ব্যাটিং দেখার পর একদম প্রথমে একটা কথা বলে নিতে চাই। আমি সুনীল গাওস্করের সঙ্গে ব্যাট করেছি। চিপকে চোখের সামনে ডাবল সেঞ্চুরি করতে দেখেছি। আমি সচিন তেন্ডুলকরকে দেখেছি, দেখেছি অসাধারণ সব ইনিংস খেলে যেতে।

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৬ ০৪:৩৮

টানা দু’দিন ধরে বিরাট কোহালির অবিশ্বাস্য ব্যাটিং দেখার পর একদম প্রথমে একটা কথা বলে নিতে চাই। আমি সুনীল গাওস্করের সঙ্গে ব্যাট করেছি। চিপকে চোখের সামনে ডাবল সেঞ্চুরি করতে দেখেছি। আমি সচিন তেন্ডুলকরকে দেখেছি, দেখেছি অসাধারণ সব ইনিংস খেলে যেতে।

কিন্তু এ রকম ব্যাটিং জীবনে দেখিনি!

ভুল বুঝবেন না আমাকে। সচিন তেন্ডুলকর, সুনীল গাওস্কর, এরা গ্রেট। ব্যাটসম্যান হিসেবে বিরাট কোহালির তুলনা আমি এদের সঙ্গে জ্ঞানত করতে চাইছি না। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আপনাআপনি চলে আসছে। কী ভাবে ব্যাখ্যা করব ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটেই বিরাটের এ রকম ব্যাটিংকে? কী করে ব্যাখ্যা করব, রানের এমন খিদেকে?

বিরাটের খিদে যে শেষই হয় না!

কেউ কেউ বলতে পারেন, গাওস্কর চার ভয়ঙ্কর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলার খেলেছে। একটা ম্যালকম মার্শাল কোথায় আজ? কেউ কেউ এটাও বলবেন, ওয়াসিম-ওয়াকার-ম্যাকগ্রা সামলাতে হয়েছে সচিনকে। ওয়াসিমের অর্ধেকও একটা বোলার কোথায় এখন? মানছি। এক-একটা প্রজন্মে এক-এক রকম বোলিং আসে। কিন্তু সেটা ব্যাটসম্যানের দোষ নয়। বিরাটের প্রজন্মে বোলিং কেমন, তার দায় বিরাটের নয়। ওর দায়িত্ব, যে বোলিং খেলছে তার বিরুদ্ধে রান করে যাওয়া। আর একই বোলিং তো এবি ডে’ভিলিয়ার্স খেলছে। জো রুট খেলছে। ওরা পারছে না কেন বিরাট হতে? আর অস্ট্রেলিয়ায় মিচেল জনসনদের খেলে পরপর সেঞ্চুরি করাও নিশ্চয়ই খুব সহজ ছিল না।

আমাকে ভুলে যান। গাওস্করকে দেখেই বোঝা গেল, বিরাটকে ব্যাটসম্যান হিসেবে ও কোন চোখে দেখে। ডাবল সেঞ্চুরির পর বিরাট যখন অ্যান্টিগার পিচে চুমু খাচ্ছে, টিভিতে সানিকে দেখলাম মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, অসম্ভব খুশি। কুম্বলেকে দেখলাম ক্যামেরায় ছবি তুলে রাখছে। রাখবেই। আজ পর্যন্ত কোনও ভারত অধিনায়ক বিদেশে তো টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেনি। বিরাটই প্রথম!

ছেলেটাকে দেখলে আজকাল কেন কে জানে আমার ডন ব্র্যাডম্যান মনে পড়ে যায়। ডনের অকল্পনীয় ব্যাটিং ক্ষমতা, গড়, ও সবে ঢুকছি না। বলতে চাইছি, ডন যে অনায়াস দক্ষতায় যে কোনও দিন, যে কোনও বোলিংয়ের বিরুদ্ধে রান করে যেতেন, বিরাটের মধ্যে সেই জিনিসটা যেন খুঁজে পাই। বাকি যাকে খুশি আউট করার কথা ভাবা যেতে পারে। শুধু বিরাটকে নয়। যদি ও ভুল করে, যদি ও দুর্ভাগ্যের শিকার হয়, তা হলেই যেন একমাত্র বিরাট কোহালির উইকেট পাওয়া সম্ভব।

শুক্রবার দু’শো করে লাঞ্চ ব্রেকের পর ফিরে এসেই বিরাটের আউট হওয়াটা যেমন দুর্ভাগ্যই বলব। ও রকম অসাধারণ একটা ইনিংসের পর কেউ ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হলে, খারাপ কপাল ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়? দু’দিন ধরে কী খেলাটাই না খেলল! সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা উইকেট নিয়ে কিন্তু ভাল রকম সমস্যায় পড়েছে। শিখর ভাল রান করেছে, কিন্তু প্রথম দিকে ও-ও ঝামেলায় ছিল। সেখানে বিরাট প্রথম শটটা খেলার সঙ্গে সঙ্গে মনে হল, পিচটা অন্য। বাকিরা এক রকম পিচে খেলছে, বিরাট যেন আর একটায়! তার সঙ্গে ওই খিদে। সাধারণত সেঞ্চুরি করলে ব্যাটসম্যানের মধ্যে একটা তৃপ্তির ব্যাপার কাজ করে। বিরাটের ঠিক উল্টো। সেঞ্চুরি মানে আমি ডাবল সেঞ্চুরি করব। ডাবল হয়ে গেলে ট্রিপলের চেষ্টা। যতক্ষণ পারব রান করে যাব। শ্যানন গ্যাব্রিয়েল-কার্লোস ব্রেথওয়েটদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কোনও ব্যাটসম্যান মানসিক ভাবে এতটা ফোকাস্ড থাকলে বিশ্বের সেরা বোলারেরও কিছু করার থাকে না।

সানির কথা আগে বলছিলাম। আমার তো মনে হয়, বিরাটের এই ফর্ম চললে গাওস্কর থেকে তেন্ডুলকর— সবাইকে বিপদে ফেলে দেবে। এমনিতেই ক্রিকেটের তিনটে ফর্ম্যাটে পারফরম্যান্স ধরলে এখনই সবার আগে বিরাট। সানি টেস্ট ক্রিকেট অসম্ভব ভাল খেলত। কিন্তু ওয়ান ডে ততটা নয়। টি-টোয়েন্টি তো তখনও আসেইনি। সচিন টেস্ট-ওয়ান ডে দারুণ খেলত। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ততটা নয়। বিরাট তিনটে ফর্ম্যাটেই সেখানে অবিশ্বাস্য। ওর খেলার ধরনটাও আলাদা। সানি ছিল গ্রাফটার। পেস বোলিংটা অসম্ভব ভাল খেলত। স্পিনটাও। সচিন প্রথম দিকে আগ্রাসী ব্যাটিং করলেও পরের দিকে গ্রাফটিংয়ে বেশি মন দিয়েছিল। বিরাটের ব্যাটিংয়ে সে সব নেই। গ্রাফটিং-ট্রাফটিং ধাতেই নেই। পা থেকে মাথা পর্যন্ত এন্টারটেইনার। মনে হয় যেন সহবাগ আর সচিনের ককটেল দেখছি! সচিনের ধারাবাহিকতা প্লাস সহবাগের আগ্রাসন। কিন্তু সেই আগ্রাসনে বোলারকে আধখানা সুযোগ দেওয়াও থাকবে না!

অ্যান্টিগা টেস্টে বিরাটের দু’শো দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, সবে সাতাশ বছর বয়স ছেলেটার। অন্তত সাত-আট বছর চুটিয়ে খেলবে। দেখছিলাম আর মনে হচ্ছিল, তার মানে বিরাট আরও আড়াইশো ওয়ান ডে আর সত্তর-আশি টেস্ট খেলবে। বছরে যদি গড়ে দশটা টেস্ট আর গোটা তিরিশ-চল্লিশ ওয়ান ডে ধরি।

খেলা ছাড়ার সময় অন্তত সত্তরটা সেঞ্চুরি নামের পাশে থাকা উচিত। সচিনের একশো সেঞ্চুরি? জানি না কী হবে। শুধু এটুকু বলে রাখি যে, সাতাশ বছর বয়সে আটত্রিশটা সেঞ্চুরি কিন্তু সচিন তেন্ডুলকরেরও ছিল না!

Virat Kohli Records
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy