শীর্ষ বৈঠক। বুধবার ইডেনে ফ্লেচার-কোহলি-শাস্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র
আশাবাদ, নৈরাশ্যবাদ জাহান্নামে যাও। আমরা করে দেখাব।
যা কিছু নেতিবাচক, সব সরিয়ে ফেলো। দেখবে, জীবন সুন্দর সব কিছুতে ভরে যাবে।
কেউই সব কিছু করতে পারে না। কিন্তু সবাই-ই কিছু না কিছু পারে।
সাহস আর শক্তি নিয়ে এসো। কাজে, মনোভাবে সঠিক থাকো। কঠোর পরিশ্রম করো। কাজে জান লড়িয়ে দাও। দেখবে, তুমিই রাজার রাজা!
ইডেনে ভারতীয় টিমের ড্রেসিংরুমে ঠিক এই মন্ত্রগুলোই এখন টাঙানো রয়েছে। বুধবার খোঁজ নিয়ে জানা গেল, কিছু নাকি মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আমলের আমদানি। নতুন কয়েকটা জুড়েছেন আবার বিরাট।
শহর আজ যে যুদ্ধটা ইডেনে দেখবে, তার জন্য কোনও মোটিভেশন মন্ত্রের দরকার পড়বে না বিরাট কোহলির। এত নিষ্প্রভ, নিষ্ক্রিয় প্রতিপক্ষ শেষ কবে ইডেন দেখেছে, ময়দানের ক্রিকেট গুলে খাওয়া প্রাজ্ঞরাও বোধহয় মনে করতে পারবেন না। বাংলাদেশও খোঁচা মারলে ব্যাঘ্রগর্জন করে। আর এখানে কি না টিমের এক নম্বর যোদ্ধা সর্বসমক্ষে এসে বলে যাচ্ছেন, টিমের ফোকাসটাই নেই! ভারত— ম্যাচে যত না বেশি মন, ৪-০-র ইচ্ছে যত না বেশি, তার চেয়ে অনেক বেশি মগ্ন বিশ্বকাপকে ঘিরে ক্রিকেটীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। আজ জিতলে ওয়ান ডে র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে আসবে ভারত, কিন্তু বিরাট কোহলিদের তাতে ভ্রুক্ষেপ থাকলে তো। টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী হাসতে হাসতে ঠাট্টা করছেন ইডেন কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। বলে দিচ্ছেন, দাদা গ্রিন টপ দিলে দাও। আমরা তাতেও মেরে দেব।
ইডেনের সাইটস্ক্রিন নিয়ে বরাবর লাগে ম্যাচ রেফারির সঙ্গে। বুধবারও লাগল। প্রবীরবাবু ম্যাচ রেফারিকে পত্রপাঠ বলে দিলেন, ও সব বাড়ানো যাবে না। অন্য দিন হলে অবধারিত এটা নিয়ে আরও চলত। মিডিয়া বিতর্কের মশলা পেত। কিন্তু ইডেনে ভারত-শ্রীলঙ্কা যুদ্ধের আবহ এমনই যে, ন্যূনতম স্ফুলিঙ্গও তৈরি হল না।
বরং বর্তমানদের মঞ্চে প্রাক্তনরাই চমক দিয়ে গেলেন। মাঝ নভেম্বরের বেলার দিকে কাঠফাটা গরমের মতোই যা অপ্রত্যাশিত। ইডেন ইন্ডোরের লাগোয়া জায়গাটায় টক শোয়ে বসে একটার পর একটা আনপ্লেয়েবল ডেলিভারি যখন দিচ্ছিলেন বিষেণ বেদী, শ্রীলঙ্কা তখন প্র্যাকটিসে নেমেছে।
এবং সেটা দেখতে একটা লোকও নেই।
মাহেলা জয়বর্ধনে দুঃখ করছিলেন, টিমের ছ’সাত জন নিয়মিত প্লেয়ার না থাকায় এমন ধরাশায়ী হতে হল। আর সিরিজটাও হয়েছে আচমকা। না পাওয়া গিয়েছে প্রস্তুতির সময়, না সম্ভব হয়েছে এগারো জনকে টিম হিসেবে মাঠে নামানোর। শ্রীলঙ্কা শিবিরের ধারণা, গত তিন ওয়ান ডে-র চেয়ে ইডেনের টিমটা তুলনায় বেশি শক্তিশালী। কুমার সঙ্গকারা নামের এক মহীরূহ দেশে ফিরে গেলেও।
ভারতকে দেখে যার কোনও আঁচই পাওয়া যাবে না। দেখে বোঝা যাবে না, বৃহস্পতিবারের শ্রীলঙ্কা শক্তিতে বেশি না কম। নেট সেশন ছেড়ে কোহলিরা ঢুকে পড়লেন রবিন উথাপ্পার জন্মদিনের উত্সবে। ড্রেসিংরুমে কেক এল, কোহলি নাকি পিছন থেকে ‘রবি’কে জড়িয়ে ধরে সেটা মাখিয়ে তুমুল নাচানাচিও করলেন। কে বলবে, চলতি সিরিজের প্রত্যেক ম্যাচে রান করা শিখর ধবন আজ ইডেন নয়, ধর্মশালায়। ইশান্ত শর্মা, তিনিও বিশ্রামে। বিরাট কোহলির তাতে দুশ্চিন্তা নেই। বরং নিজের ক্যাপ্টেন্সি থিওরি বিশ্লেষণ করছেন। কী লক্ষ নিয়ে সিরিজে নেমেছেন, সেটা বলছেন। টিমের খুচরো খবর, সেটাও দিয়ে যাচ্ছেন। খুল্লমখুল্লা!
টিমে দু’জন কিপার। কে খেলবেন, মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আমলে জানতে টস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত। বিরাট বলে গেলেন, রবিন উথাপ্পা কিপ করবেন। অম্বাতি রায়ডু নন। আর শীতল নয়, গরগরে হুঙ্কারগুলো এ রকম পরপর:
“সিরিজে নেমেছি একটামাত্র লক্ষ নিয়ে— নৃশংস ভাবে জয়ের লক্ষ।”
“আমি চাই টিমে একটা নির্দিষ্ট সংস্কৃতি তৈরি করতে। যেখানে সবার ইনটেন্সিটি লেভেল খুব উঁচু থাকবে।”
“অল-আউট পেস আক্রমণ তৈরি হচ্ছে। ভারতীয় টিমে দু’জন দেড়শোর উপর বল করছে, আগে হয়েছে?”
“আমার কাছে অধিনায়কত্ব মানে নিজের ভাবনা বিস্তারের স্বাধীনতা। এটা করলে কেমন হত বা ওটা হলে কী দাঁড়াত, বসে বসে না ভেবে কাজে রূপান্তরিত করা। নিজে যে ইনটেন্সিটি লেভেলে খেলি, টিমের সবাইকে সেই লেভেলে নিয়ে যেতে পারা।”
মোটিভেশন গুরু? নিঃসন্দেহে। মাঠে যেমন, ড্রেসিংরুমেও। সিরিজে জীবন পড়ে থাকুক না থাকুক, যত দিন যাচ্ছে একটা ব্যাপার তত পরিষ্কার হচ্ছে। অধিনায়ক কোহলি বোঝাচ্ছেন, এশিয়া কাপের ব্যর্থতা অতীত। তাঁর এখনকার দাপটটাই আসল, নিত্যনতুন উদ্ভাবনী চিন্তার আমদানিটাই আসল।
দিল্লিওয়ালা বোঝাচ্ছেন, ক্যাপ্টেন কুলের যোগ্য উত্তরসুরি এসে গিয়েছে।
ক্যাপ্টেন স্পার্ক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy