Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Tennis

Elena Rybakina: রাশিয়া তাঁকে ফিরিয়েছিল খালি হাতে, উইম্বলডন জিতে জবাব রিবাকিনার

২০১৮ সালে রাশিয়া ছেড়ে কাজাখস্তানের হয়ে খেলা শুরু করেন তিনি। এ বার নির্বাসিত ছিলেন রাশিয়ার খেলোয়াড়রা। রাশিয়া-জাত রিবাকিনাই ট্রফি জিতলেন।

উইম্বলডনের ট্রফি নিয়ে রিবাকিনা।

উইম্বলডনের ট্রফি নিয়ে রিবাকিনা। ছবি টুইটার

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২২ ১৬:৩২
Share: Save:

চার বছর আগে যদি সিদ্ধান্তটা না নিতেন, তা হলে এ বারের উইম্বলডনে খেলাই হত না তাঁর। মাত্র ১৯ বছরে নেওয়া সিদ্ধান্তের দাম অবশেষে পেলেন এলেনা রিবাকিনা। তাই সাংবাদিক বৈঠকে যখন রাশিয়া নিয়ে প্রশ্নটা উঠল, নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না। ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন। সবে উইম্বলডন জিতেছেন। ট্রফি তোলার পিছনে জড়িয়ে রয়েছে অনেক আত্মত্যাগ, অনেক পরিশ্রম, অনেক কষ্ট। সেই অনুভূতির প্রকাশ কোনও না কোনও ভাবে তো হবেই।

এ বারের উইম্বলডনে নির্বাসিত ছিলেন রাশিয়া এবং বেলারুশের খেলোয়াড়রা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মহিলাদের বিভাগে ট্রফি উঠল এক রাশিয়া-জাত খেলোয়াড়ের হাতেই। চার বছর আগে পর্যন্ত রাশিয়াই ছিল রিবাকিনার দেশ। রাশিয়াতেই জন্ম, সেখানেই টেনিস শুরু। যখন সবে উঠতি খেলোয়াড় হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করেছিলেন, তখন রাশিয়া সরকার তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিল খালি হাতে। বাধ্য হয়ে ২০১৮ থেকে রাশিয়ার বদলে কাজাখস্তানের হয়ে খেলতে শুরু করেন। শনিবার ট্রফি হাতে তুলে বুঝিয়ে দিলেন, রাশিয়া সরকার সে সময় কত বড় ভুল করেছিল।

আগে যা-ই হোক, রাশিয়া তো আদতে তাঁর মাতৃভূমিই। তাই রাশিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন রিবাকিনা। বললেন, “আমি জানি না এর পর কী হবে। কাজাখস্তান আমাকে সব রকম সাহায্য করেছে। অল্প সময়ে আপন করে নিয়েছে। অলিম্পিক্সেও ওদের হয়ে খেলেছি। কাজাখস্তানই এখন আমার দেশ।”

১৯৯৯-এর ১৭ জুন রাশিয়ার মস্কোতে জন্ম রিবাকিনার। দিদির সঙ্গে খুব ছোটবেলাতেই খেলাধুলো করতে শুরু করেন। প্রথম দিকে জিমন্যাস্টিক্স এবং আইস স্কেটিংয়ে মন দিয়েছিলেন। তবে উচ্চতা বেশি হওয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছিল দু’টি খেলার ক্ষেত্রেই। তখন বাবার পরামর্শেই ছ’বছর বয়স থেকে টেনিস খেলা শুরু করেন। স্পার্টাক টেনিস ক্লাবে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ছোটবেলায় অনেক নামীদামি কোচের সান্নিধ্যে এসেছেন রিবাকিনা। বিশ্বের প্রাক্তন ১০ নম্বর খেলোয়াড় আন্দ্রে চেসনোকভের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পেন্টাথলনে সোনাজয়ী ইরিনা কিসেলেভা তাঁর ফিটনেস কোচ ছিলেন। তবে ছোটবেলায় মাত্র দু’ঘণ্টা টেনিস শেখার সুযোগ পেতেন তিনি। এমন একটি স্কুলে পড়াশোনা করতেন, যেখানে খেলাধুলোর প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা করে অনুমতি দেওয়া হত না।

জুনিয়র বিভাগে এক সময় বিশ্বের তিন নম্বর খেলোয়াড় ছিলেন রিবাকিনা। ১৪ বছর বয়স থেকে আইটিএফ জুনিয়র সার্কিটে খেলা শুরু করেছিলেন। ২০১৫-এ ইউএস ওপেনে জুনিয়র বিভাগে অংশ নেন। তবে সাফল্য পাননি। সিনিয়র পর্যায়ে খেলা শুরু করে র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দুশোয় ঢুকে পড়ার পরেও সরকারের থেকে কোনও সাহায্য পাচ্ছিলেন না। রাশিয়া তাঁকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়। কাজাখস্তান আর্থিক সাহায্যে বিনিময়ে চেয়েছিল, রিবাকিনা সে দেশের হয়ে খেলুন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে দেশ বদল করেন রিবাকিনা। সেই সিদ্ধান্ত যে কতটা ঠিক নিয়েছিলেন, শনিবার উইম্বলডন ট্রফি হাতে তুলে বুঝতে পেরেছেন রিবাকিনা।

তবে রাশিয়া চুপ করে বসে নেই। রিবাকিনা সাফল্য পাওয়ার পরেই তাঁকে সে দেশের খেলোয়াড় বলে প্রচার করা শুরু হয়ে গিয়েছে। রাশিয়ার টেনিস সংস্থার প্রধান শামিল তারপিসচেভ টুইট করেছেন, ‘দারুণ খেললে রিবাকিনা। আমরা উইম্বলডন জিতে নিলাম।’ তিনি কি রাশিয়ার এই আচরণকে নিন্দা করছেন? রিবাকিনার উত্তর, “যে দেশে জন্মেছি, সেই দেশের হয়ে খেলছি না। তবে ওখানকার মানুষ আমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছেন। আজও অনেক পতাকা দেখতে পেয়েছি। তবে এই প্রশ্নের কি উত্তর দেব তা জানি না।’’ ঘটনাচক্রে, রিবাকিনার বাবা-মা দু’জনেই এখন মস্কোতে থাকেন। বাবা-মায়ের কথা উঠতেই রিবাকিনার জবাব, “আজ ওরা নিশ্চয়ই প্রচণ্ড খুশি এবং গর্বিত। অনেক দিন ধরে আবেগ চেপে রেখে দিয়েছিল।”

রিবাকিনার অন্যতম গুণ হল, তিনি অসম্ভব ভাল মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন। ফাইনালে ওন্স জাবেউরের মতো শক্তিশালী খেলোয়াড়কে হারালেও তাঁকে প্রবল উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। এমনকি ম্যাচে পিছিয়ে থাকার সময়েও ঘাবড়ে যাননি। মাথা ঠান্ডা রেখে ফিরে এসেছেন। পরে বলেছেন, “আমি বরাবরই এতটা শান্ত। হয়তো ভেতরে ভেতরে জানতাম আমি পারব। ম্যাচের পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করিনি কারণ, বেশ ক্লান্ত ছিলাম। সেমিফাইনালে বরং এর থেকে বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE