Advertisement
E-Paper

‘লাল কার্ডই প্রাপ্য ছিল রোনাল্ডোর’

পর্তুগালের তারকা তো ইরানের মোর্তাজা পৌরালাগাঞ্জিকে  সেটাই করেছেন।

সাগর সেন

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮ ০৪:৪৬
বিতর্ক: ইরান ম্যাচের সেই ছবি। ফাউল করার পরে রোনাল্ডোকে হলুদ কার্ড দেখাচ্ছেন রেফারি। ছবি: গেটি ইমেজেস

বিতর্ক: ইরান ম্যাচের সেই ছবি। ফাউল করার পরে রোনাল্ডোকে হলুদ কার্ড দেখাচ্ছেন রেফারি। ছবি: গেটি ইমেজেস

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে কেন সোমবার রাতে প্যারাগুয়ের রেফারি এনরিকে সিজার্স লালকার্ড দেখালেন না বুঝলাম না। ফুটবলের নিয়মে কনুই দিয়ে মারলেই লালকার্ড। এর বাইরে আইনে কোনও জায়গা নেই। পর্তুগালের তারকা তো ইরানের মোর্তাজা পৌরালাগাঞ্জিকে সেটাই করেছেন।

রেফারি কনুই মারা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন বলেই ভি়ডিয়ো অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভার)-এর সাহায্য নিয়েছেন। রেফারি কেন ফের ওই ঘটনা দেখার পরে শুধু হলুদ কার্ড দেখালেন সেটাই অবাক করেছে আমাকে। আমার মনে হয়েছে, এটা লাল-কার্ড দেখানো উচিত ছিল। এটা তো ঠিক যে, পর্তুগাল এই সময় দশ জন হয়ে গেলে সমস্যায় পড়তে পারত। ইরানের কোচ কার্লোস কুইরোজের রেফারির বিরুদ্ধে সরব হওয়াটা তাই অস্বাভাবিক কিছু নয়। রেফারির একটা ভুল সিদ্ধান্ত একটা দলকে টুনার্মেন্ট থেকে ছিটকে দেয়। গত চার বছরের পরিশ্রম একটা বাঁশির শব্দে শেষ হয়ে যায়। ফলে রেফারিদের প্রচণ্ড সতর্ক থাকা দরকার। আমার দীর্ঘ ফিফা রেফারির জীবনে সব সময় এটা মানার চেষ্টা করেছি। ভুল যে করিনি তা নয়, তবে গা ছাড়া মনোভাব দেখাইনি। আমার প্রশ্ন হল, বিতর্ক এড়াতে হাতে যখন ‘ভার’ বা হেড ফোনে সরাসরি সংযোগ রাখার অস্ত্র রেফারিদের হাতে তুলে দিয়েছে ফিফা, সেটা সবসময় প্রয়োগ করা উচিত। তা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই নেওয়া হচ্ছে না। আর সেটা লিয়োনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র), থোমাস মুলার যেই হোক অপরাধ করলে তাঁকে ছাড় দেওয়া উচিত নয়। রেফারির কাছে সবাই সমান। তারকারা ছাড় পাবে কেন?

ক্রিশ্চিয়ানো যেমন ইরান ম্যাচে ছাড় পেয়ে গেল, ব্রাজিলের নেমারও সেটা পাচ্ছে দেখছি। কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে নেমার দেখলাম অন্তত দু’বার রেফারিকে প্রতারিত করার চেষ্টা করেছেন। বিপক্ষ বক্সে অযথা পড়ে গিয়ে। যা গুরুতর অপরাধ। কার্ড দেখাতেই হবে। মাঠে নামার আগে রেফারি যদি তারকা ফুটবলারদের নাম মাথায় নিয়ে নামেন তা হলেই গণ্ডগোল হবেই। সেটাই হচ্ছে মনে হচ্ছে। নিজের রেফারি জীবনের একটা ঘটনার কথা বলি। তখন চিমা ওকোরি খেলছেন ইস্টবেঙ্গলে। বুলডোজার টাইপের স্ট্রাইকার ছিল। ধাক্কাধাক্কি করত বক্সে। আমাদের কোনও রেফারিই বিতর্কের ভয়ে ওকে কিছু বলত না। কারণ ও ছিল তখন ময়দানের সবথেকে বড় তারকা। জে সি গুহ ট্রফিতে আমি ওকে প্রথম লালকার্ড দেখাই। এবং মাঠ থেকে বের করে দিই। ও ভেবেছিল তারকা বলে ধাক্কাধাক্কি করে পার পেয়ে যাবে। রেয়াত করিনি।

আমার মনে হয়, অভিজ্ঞতার অভাবেই রেফারিরা এ বারের বিশ্বকাপে বিতর্কে জড়াচ্ছেন। আগে নয়-দশ বছর খেলানোর পর বিশ্বকাপে খেলানোর সুযোগ পাওয়া যেত। এখন তো চার-পাঁচ বছরেই পেয়ে যাচ্ছে। আমাদের কমলেশ্বরণ শঙ্কর বিশ্বকাপে সহকারী রেফারি হয়েছিলেন নয় বছর খেলানোর পরে।

যে কোনও ম্যাচে রেফারিং করতে নামার আগে দু’টো দলের কোন ফুটবলার মারকুটে, বেশি গুঁতোগুঁতি করেন, প্লে অ্যাকটিং করেন তার একটা জ্ঞান নিয়ে রেফারিদের নামতে হয়। সেটা এই রেফারিরা হয়তো নিচ্ছেন। কিন্তু মার খাচ্ছেন অভিজ্ঞতার অভাবে। রোনাল্ডো বা নেমার যা করেছেন সেটা করেই থাকেন। অপরাধ করলে শাস্তি দিতেই হবে। ‘ভার’ এর প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক চলছে। নতুন চালু হয়েছে, ফাঁক-ফোকর থাকবেই। আবার এটাও ঠিক ‘ভার’ বিভিন্ন টিমকে সাহায্যও করছে। এ বার ভার-এর দৌলতে রেকর্ড হয়েছে পেনাল্টিতে। এখনও পর্যন্ত ৩৬ ম্যাচে ২০টা পেনাল্টি হয়েছে। যার আটটি ‘ভার’ দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেফারিরা। কিছু পেনাল্টি বাতিলও হয়েছে। মনে রাখতে হবে, এখনও কিন্তু রাশিয়ায় বহু ম্যাচ বাকি। ১৯৯০, ১৯৯৮ এবং ২০০২ বিশ্বকাপে পুরো টুনার্মেন্টে ১৮টা করে পেনাল্টি হয়েছিল। এ বার যে কত হবে কে জানে! ভার-এর নিয়ম চালু হওয়ায় পেনাল্টি থেকে কিন্তু বঞ্চিত হচ্ছে না কোনও দেশ। আগে যা হত। তাই ভার-কে শুধু সমালোচনা না করে সঠিক প্রয়োগের ব্যবস্থা করুক ফিফা।

Cristiano Ronaldo Red card Football FIFA World Cup 2018 ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৮
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy