কোর্ট ফিলিপ শঁতিয়ে জুড়ে লস বোয়াসঁর নামে চিৎকার। বিশ্ব ক্রমতালিকায় তিনি ৩৬১ নম্বর। ফ্রান্সের সেই মেয়েই পৌঁছে গেলেন ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে। একের পর এক তারকাকে পরাস্ত করে শেষ চারে জায়গা পাকা করে নিয়েছেন বোয়াসঁ।
প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে বোয়াসঁ হারিয়ে দিয়েছিলেন জেসিকা পেগুলাকে। যিনি এই মুহূর্তে বিশ্বের তিন নম্বর। কোয়ার্টার ফাইনালে ২২ বছরের বোয়াসঁ হারিয়ে দিয়েছেন ষষ্ঠ বাছাই মিরা আন্দ্রেভাকে। ঘরের কোর্টে একের পর এক তারকাকে পর্যুদস্ত করে বোয়াসঁ সকলের নজর কেড়ে নিয়েছেন। কোর্টে নেমে ফরাসি সমর্থকদেরও পাশে পাচ্ছেন তিনি। যা তাঁকে আরও উৎসাহ দিচ্ছে।
১৮ বছরের আন্দ্রেভা বুধবার কোর্টে সমস্যায় পড়েন দর্শকদের জন্যেও। তাঁর প্রত্যেকটা ভুল উদ্যাপন করছিলেন ফরাসি সমর্থকেরা। প্রায় সকলেই ছিলেন বোয়াসঁর পক্ষে। যে কারণে কোর্টে মেজাজ হারাতে দেখা যায় আন্দ্রেভাকে। অন্য দিকে, বোয়াসঁ তখন নিজের লক্ষ্যে স্থির। তিনি ২ ঘণ্টা ৮ মিনিটের মধ্যে স্ট্রেট সেটে ম্যাচ শেষ করে দেন।
আরও পড়ুন:
ম্যাচ জিতে বোয়াসঁ দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, “অসাধারণ। এই ভাবে আমাকে সমর্থন করার জন্য ধন্যবাদ। আমি কোনও শব্দ খুঁজে পাচ্ছি না।” গোটা কোর্টে তখন শুধু হাততালির শব্দ।
এ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যামে ওয়াইল্ড কার্ড পেয়েছিলেন বোয়াসঁ। এটাই তাঁর প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম। সেখানেই ক্রমতালিকায় প্রথম দশে থাকে দু’জনকে হারিয়ে দিয়েছেন। যা টেনিস বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলতে নেমেই সেমিফাইনালে পৌঁছে যাওয়ার নজির ওপেন টেনিসের যুগে খুব বেশি নেই। ১৯৮০ সালের পর মনিকা সেলেস (১৯৮৯) এবং জেনিফার কাপ্রিয়াতি (১৯৯০) এই নজির গড়েছিলেন।
কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে নেমে কিছুটা চাপে ছিলেন বোয়াসঁ। তিনি বলেন, “আমি খুব চাপে ছিলাম, তাই বেশি দৌড়চ্ছিলাম। প্রথম সেটে লড়াই করে জিতি। নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলাম। এতটাই কঠিন ছিল ওই সেটটা যে, দ্বিতীয় সেটের শুরুতে খুব ক্লান্ত লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমার মধ্যে আর শক্তি নেই। কিন্তু কাজ শেষ করেই কোর্ট ছেড়েছি।”
প্রথম সেটে বোয়াসঁ ১-৩ ফলে পিছিয়ে ছিলেন। সেখান থেকে ৫-৩ এগিয়ে যান। সেটও জিতে নেন। দ্বিতীয় সেটে আন্দ্রেভা মনঃসংযোগ হারিয়ে ফেলেছিলেন। সেই সুযোগ কাজে লাগান বোয়াসঁ।
গত বছরই ফরাসি ওপেন খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন বোয়াসঁ। কিন্তু ভাগ্য তাঁর সঙ্গে ছিল না। পেশির চোটের কারণে খেলতে পারেননি। সেই সময় তিনি ক্রমতালিকায় ১৬০-এর মধ্যে ছিলেন। কিন্তু চোটের কারণে খেলতে না পারায় পিছিয়ে যান। এ বারে যখন ফরাসি ওপেনে ওয়াইল্ড কার্ডে সুযোগ পেলেন, তখন তিনি ক্রমতালিকায় ৩৬১ নম্বর। ফরাসি ওপেন যখন শেষ করবেন, তখন অবশ্যই তিনি ক্রমতালিকায় ৭০-এর মধ্যে চলে আসবেন।
সেমিফাইনালে বিশ্বের দু’নম্বর কোকো গফের বিরুদ্ধে খেলতে হবে বোয়াসঁকে। আমেরিকার টেনিস তারকা এ বারের ফরাসি ওপেনের অন্যতম দাবীদার। সেমিফাইনালের লড়াই সহজ হবে না। কিন্তু বোয়াসঁ একের পর এক তারকাকে হারিয়েই শেষ চারে উঠেছেন। তাই গফ যে খুব সহজে ম্যাচ জিতবেন, তা মনে করা উচিত হবে না। সেই সঙ্গে বোয়াসঁ অবশ্যই পাশে পাবেন সমর্থকদের।
এ বারের ফরাসি ওপেন শুরুর আগে খুব বেশি কেউ বোয়াসঁর নাম শোনেননি। তাঁকে যে সেমিফাইনালে দেখা যাবে, সেই আশাও কেউ করেননি। সকলকে অবাক করে ফিলিপ শঁতিয়ে জুড়ে বোয়াসঁর নামে চিৎকার শুরু হয়েছে। এখন দেখার সেমিফাইনালেও তিনি অঘটন ঘটাতে পারেন কি না।