Advertisement
E-Paper

অভিনন্দন জানিয়ে গেলেন স্টেইন, ধবনরাও

সন্ধ্যায় কোহলিদের হারিয়ে যদি বেঙ্গালুরু থেকে গৌতম গম্ভীরকে এমএস ধোনি মেসেজ পাঠাতেন, “আমরা ইডেনে আসছি, তোমরা বরং ব্র্যাবোর্নে যাও,” তা হলে রাতে পাল্টা একটা মেসেজ যেত ধোনির মোবাইলেও। “ইডেনে আমরাই থাকছি। ব্র্যাবোর্নে তোমাদের যেতে হবে, এমএস।” প্রেরক গৌতম গম্ভীর। ইউসুফ পাঠানের ব্যাটে তোলা ঝড়ে এমন উড়ে গেল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ যে, শাহরুখের শহরে নয়, নাইট-নগরেই থাকছে কেকেআর। মঙ্গলবার ফের ক্রিকেটের নন্দন কানন মাতাতে নামবেন তাঁরা। সৌজন্যে নাইটদের স্কোরবোর্ডের ওই একটা লাইন, ‘ইউসুফ পাঠান ক ধবন বো শর্মা ৭২ (২২)’।

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৪ ০৩:২০
মঙ্গলবারের জন্যও কিছু গোলাগুলি বাকি রেখেছ নিশ্চয়ই। ইউসুফ পাঠানকে এই কথাই কি বলছেন গৌতম গম্ভীর? ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

মঙ্গলবারের জন্যও কিছু গোলাগুলি বাকি রেখেছ নিশ্চয়ই। ইউসুফ পাঠানকে এই কথাই কি বলছেন গৌতম গম্ভীর? ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

সন্ধ্যায় কোহলিদের হারিয়ে যদি বেঙ্গালুরু থেকে গৌতম গম্ভীরকে এমএস ধোনি মেসেজ পাঠাতেন, “আমরা ইডেনে আসছি, তোমরা বরং ব্র্যাবোর্নে যাও,” তা হলে রাতে পাল্টা একটা মেসেজ যেত ধোনির মোবাইলেও। “ইডেনে আমরাই থাকছি। ব্র্যাবোর্নে তোমাদের যেতে হবে, এমএস।” প্রেরক গৌতম গম্ভীর। ইউসুফ পাঠানের ব্যাটে তোলা ঝড়ে এমন উড়ে গেল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ যে, শাহরুখের শহরে নয়, নাইট-নগরেই থাকছে কেকেআর। মঙ্গলবার ফের ক্রিকেটের নন্দন কানন মাতাতে নামবেন তাঁরা। সৌজন্যে নাইটদের স্কোরবোর্ডের ওই একটা লাইন, ‘ইউসুফ পাঠান ক ধবন বো শর্মা ৭২ (২২)’।

যাঁর তোলা সাইক্লোনে ইডেনমুখী ধোনিরা উড়ে গিয়ে পড়লেন মুম্বইয়ে, নেট রান রেটে লিগ টেবিলে দু’নম্বর থেকে চেন্নাই সুপার কিংসকে যিনি টেনে নামিয়ে দিলেন তিনে, যাঁর ব্যাটের ঝড়ে কেকেআরের মুম্বইগামী বিমান আকাশে উড়তেই পারল না, তিনি আর কেউ নন, ইউসুফ পাঠান। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে সেই ৩৭ বলে সেঞ্চুরির পর ফের ইউসুফের পাঠানি ব্যাটে আগুনের ফুলকি দেখল আইপিএল, দেখল ইডেনও। শনিবার রাতে সাতটা ওভার বাউন্ডারি ও পাঁচটা বাউন্ডারির ধাক্কায় ইডেন কাঁপানোর পর যে দৃশ্যটা দেখা গেল, সেটাও ইউসুফের ইনিংসের মতোই অবিশ্বাস্য। তাঁর ২২ বলে ৭২-এর ইনিংস চুম্বকের মতো টেনে নিল বিপক্ষের ক্রিকেটারদের। প্যাভিলিয়নে ফেরার সময় একে একে তাঁকে অভিনন্দন না জানিয়ে পারলেন না স্টেইন, ধবন, ওয়ার্নাররা। প্রথম এগারোয় না থাকায় ভাই ইরফান অবশ্য দাদাকে মাঠে অভিনন্দন জানানোর সুযোগই পাননি। মাঠ থেকে বেরিয়ে আসার পর দু’ভাই একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন। এমন অবিশ্বাস্য ইনিংসের কথা স্বপ্নেও ভাবেনি ইডেন। ইউসুফ নিজেই কি ভাবতে পেরেছিলেন?

সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে ১৬০ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর পরিসংখ্যানবিদরা হিসাব দিয়েছিলেন এই রানটা ৯২ বলে টপকে যেতে পারলেই গম্ভীরদের আর কলকাতা ছাড়তে হবে না। লিগ টেবিলে চেন্নাইয়ের নেট রান রেটকে পিছনে ফেলে রেখে দু’নম্বরে উঠে তারা ঘরের মাঠেই কোয়ালিফায়ার ওয়ানে নামবে এক নম্বরে থাকা কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে। এবং শেষ পর্যন্ত তা-ই হল (কেকেআরের নেট রান রেট ০.৪১৮, সিএসকের রেট ০.৩৮৫)। মঙ্গলবার রাতে ইডেনে নাইট বনাম কিংস। প্রীতি জিনটা বনাম শাহরুখ খান।

সত্যিই ধোনি ও গম্ভীরের মধ্যে তেমন কোনও টেক্সট চালাচালি হয়েছে কি না জানা নেই। তবে টস করতে নামার আগেই এ দিন গৌতম গম্ভীর জেনে যান, ইডেনে ধোনিদের আসার সম্ভাবনাই প্রবল। তাঁদের আরব সাগরের তীরে পাড়ি দিতে হবে বোধহয়। সেই হিসেব উল্টে দেওয়ার একটা সুযোগ অবশ্য ছিল নাইটদের সামনে। সেই সুযোগটা কেকেআর কাজে লাগিয়ে নিল বললে ভুল হবে, বলা উচিত পাঠান। আগের দশটা ইনিংসে যাঁর সবচেয়ে ভাল ব্যাটিং পারফরম্যান্স ২৯ বলে ৪১, সেই ইউসুফ পাঠান যে ৩২৭-এরও বেশি স্ট্রাইক রেটে ঘরের মাঠা কাঁপাবেন, তা ভাবতে পারেননি বলেই গম্ভীর টস করতে নামার আগে বলেছিলেন, “অযথা চাপ বাড়িয়ে লাভ নেই। তাই দু’নম্বর জায়গাটা নিয়ে বেশি ভাবছি না।” কিন্তু সমস্ত চাপ নিজের কাঁধে নিয়েই সেই অসাধ্য সাধন করে ফেললেন পাঠান। ১০ ওভারের পরও প্রেস বক্সে আলোচনা চলছিল কেকেআর হেরে না যায়। কারণ, তখন তো ৭৮-৪। ৬০ বলে ৮৩ রান দরকার শুধু জেতার জন্য। আর দু’নম্বর হওয়ার জন্য ৩২ বলে এই রানটা করতে হবে।

অষ্টম ওভারে মণীশ পাণ্ডে ফিরে যাওয়ার পর নামলেন পাঠান। এগারো নম্বর ওভারে যখন বল করতে এলেন পরভেজ রসুল, আগ্নেয়গিরি জেগে উঠল তখন থেকেই। সেই ওভারে দুটো চার ও দুটো ছয়। একটা ছয় অবশ্য ডেল স্টেইনের ক্যাচ ফস্কানোর ফল। ইনিংসের শুরুতেও তাঁকে জীবন দান দিয়েছেন কৃষ্ণামাচারি শ্রীকান্তের ছেলে অনিরুদ্ধ। গায়ে এই দু’বার আঁচড় পড়া সত্ত্বেও প্রাণ পেয়ে খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো বিপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন ইউসুফ। এর পর কর্ণ শর্মার ওভারেও দুটো ওভার বাউন্ডারি। দু’নম্বর হতে তখন ২০ বলে ৪৫ রান দরকার। ইডেনের প্রত্যাশার পারদ চড়ে গিয়েছে সর্বোচ্চ শিখরে। গ্যালারি চাইছে বল শুধু তাদের মাথায় এসে আছড়ে পড়ুক। স্টেইনের ওভারে প্রথম বলে চার। পরের দুই বলে দুটো ছয়। তার পরের দুটো বলে জোড়া বাউন্ডারি।

এ বার দরকার ১৩ বলে ১৫। কর্ণ শর্মার বলও এ বার উড়িয়ে দিলেন সোজা গ্যালারিতে। সেই ওভারে আরও একটা ছক্কা হাঁকানোর পর যখন ধবনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন পাঠান, তখন আর সাত বলে সাত রান দরকার ইডেনে ফের নামার জন্য। বাকি কাজটা করার জন্য তো সূর্য কুমার যাদব ছিলেনই। ভুবনেশ্বর কুমারের বল লং অনের উপর দিয়ে সোজা উড়িয়ে দিয়ে শেষ কাজটা করে ফেললেন সূর্য। এক সূর্যের দৌরাত্মে ডুবল সানরাইজার্সের সূর্য। ইডেনে উঠল নাইটদের বেগুনি পতাকা।

ইডেনে আইপিএল ফাইনাল হবে না ঠিকই। আতসবাজির রোশনাইও দেখতে পাবে না ইডেন, এটাও ঠিক। কিন্তু শনিবার ইউসুফ পাঠানের ব্যাট যে আতসবাজির রোশনাই দেখাল ইডেনকে, তাতেই সেই সাধ পূর্ণ হয়ে গেল নাইট সমর্থকদের। এ বার মাত্র দু’ধাপ পেরনো বাকি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ২০ ওভারে ১৬০-৭ (ধবন ২৯, সাকিব ১-২৫)
কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৪.২ ওভারে ১৬১-৬ (ইউসুফ ৭২, কর্ণ ৪-৩৮)

ipltag kkr sunrisers rajib ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy