Advertisement
০৮ মে ২০২৪

আই লিগের ভীষ্মের ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যে করতে চায় ইস্টবেঙ্গল

অভিজ্ঞতা বনাম হঠাৎ উত্থান। ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের সাফল্যের চূড়ায় থাকা কোচ বনাম সদ্য এ দেশের ফুটবল চেনা এক আনকোরা বিদেশি। ‘চ্যাম্পিয়ন্স লাক’ সঙ্গী করে খেতাব যুদ্ধে ফিরে আসা এক গোয়ান ভদ্রলোক বনাম ক্রমশ ধারাবাহিকতা হারানো এক ডাচ কোচের টিম। আর্মান্দো কোলাসো বনাম মাইক স্নোয়ির আজ শনিবারের আই লিগ যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এগুলোই।

‘অশ্বমেধের ঘোড়া’ রুখতে যাঁদের দিকে তাকিয়ে দল। শুক্রবার অনুশীলনে চিডি-সুয়োকা। ছবি: উৎপল সরকার।

‘অশ্বমেধের ঘোড়া’ রুখতে যাঁদের দিকে তাকিয়ে দল। শুক্রবার অনুশীলনে চিডি-সুয়োকা। ছবি: উৎপল সরকার।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৩
Share: Save:

অভিজ্ঞতা বনাম হঠাৎ উত্থান।

ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের সাফল্যের চূড়ায় থাকা কোচ বনাম সদ্য এ দেশের ফুটবল চেনা এক আনকোরা বিদেশি।

‘চ্যাম্পিয়ন্স লাক’ সঙ্গী করে খেতাব যুদ্ধে ফিরে আসা এক গোয়ান ভদ্রলোক বনাম ক্রমশ ধারাবাহিকতা হারানো এক ডাচ কোচের টিম।

আর্মান্দো কোলাসো বনাম মাইক স্নোয়ির আজ শনিবারের আই লিগ যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এগুলোই।

তবে পর্দার পিছনে দুই কোচের মগজাস্ত্রের লড়াইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। মরসুমে প্রথম বার মুখোমুখি হওয়ার আগে অঙ্ক আর অঙ্ক। সাপ-লুডোর মতোই যা উত্তেজক আর আকর্ষণীয়।

অশ্বমেধের ঘোড়া হয়ে সবাইকে টপকে আগে আগে চলছে বেঙ্গালুরু এফসি। ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের প্রথম খেতাব জয় রুখতে পিছনে তাড়া করছে দু’টো টিম সালগাওকর আর ইস্টবেঙ্গল। সুনীল ছেত্রীরা গোয়ার মাঠে পরের দু’টি ম্যাচের (ডেম্পো এবং স্পোর্টিং ক্লুব) একটিতে পয়েন্ট নষ্ট করলেই ঘাড়ে উঠে পড়বেন ডেরেক পেরিরা কিংবা আর্মান্দো ব্রিগেড। লিগ টেবলের যা গতিপ্রকৃতি তাতে চিডি-সুয়োকারা তাঁদের বাকি চারটি ম্যাচের একটিতে হারলেই চলে যাবেন রিংয়ের বাইরে। আর ডুহু-বেঙ্কটেশদের পুণে আজ জিতলে প্রথম তিনে ঢুকে পড়বে।

কতটা পথ পেরোলে তবে...

প্রতিটা ম্যাচ জিতলে তবেই ‘শ্বাস’ থাকবে। মিলবে বেঁচে থাকার আশ্বাস। প্রতিটি ম্যাচে তাই একই মোটিভেশন। একই স্লোগান—জিততেই হবে। ভয়ঙ্কর চাপ সামলাতে আর্মান্দোর দাওয়াই, ‘‘মনের আনন্দে ফুটবল খেলো। লক্ষ্য ঠিক করতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করো।’’ কিন্তু অন্তহীন চাপ তো আপনারও? পাঁচ বারের আই লিগ জয়ী কোচ প্রশ্ন শুনে হাসেন। “এটা নতুন কিছু নয়। এখনই তো অভিজ্ঞতার পরীক্ষা। ২০০৪-এ ডেম্পোকে চ্যাম্পিয়ন করার বছরও এ রকম পরিস্থিতি হয়েছিল। মহীন্দ্রার হাত থেকে খেতাব জিততে টানা তিনটে ম্যাচ জিততে হত। জুনিয়র মারা যাওয়ায় টিমের মনোবলে বড় ধাক্কা লেগেছিল সে বার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছিলাম। খেতাব উৎসর্গ করেছিলাম জুনিয়রকে।” এ বারও তা হলে স্বপ্ন দেখছেন? “জানি না কত দূর পর্যন্ত লড়াই করতে হবে। তবে আমার সময়টা ভাল যাচ্ছে। ঈশ্বর দেখছি, সঙ্গে। দেখা যাক।”

দুই বনাম চা-আ-র

চোটের ‘রহস্য’ ভেদ করতে মিশর গিয়েছেন মোগা। উগা বাড়িতে বিশ্রামে। ফলে টিমটিম করে জ্বলছেন লাল-হলুদের দুই বিদেশি—চিডি আর সুয়োকা। দু’জনকেই সামনে রেখে ৪-৪-২ ফর্মেশনে দল সাজাচ্ছেন আর্মান্দো। উল্টো দিকে পুণে টিমে চার বিদেশিই হাজির। টিমের প্রাণভোমরা ডুহু পিয়েরের সামান্য চোট থাকলেও খেলবেন। সঙ্গে প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা খেলা রিগা মুস্তাফা, ইংল্যান্ডের কলাম অ্যাঙ্গাস। আরও আছে। নতুন আসা অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার মিরজান পাভলোভিচ। পুণে কোচ বলেই দিলেন, “রিগাকে এএফসি ম্যাচ খেলাইনি যাতে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে যওর খিদে থাকে।”

সুয়োকাকে আওয়াজ এবং আনাস-দুঃখ

পুণে হোটেলে জাপানি থেকে ভারতীয় (নাগরিকত্ব নিয়ে) হয়ে যাওয়া বন্ধু আরাতা আজুমির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলের সুয়োকা রিউজি। তাঁকে দেখে পুণের ডাচ কোচ বলে দিয়েছেন, “তোমরা অত সহজে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে দৌড়তে পারবে না। আমাদের সঙ্গে কিন্তু দু’বার খেলতে হবে।” শুনে সুয়োকা হেসে চলে এসেছেন। তেতে গিয়েছেন কি না বোঝা গেল না। সকালের অনুশীলনে অন্তত তিন বার ব্যাকভলিতে গোল করার চেষ্টা করে গেলেন লাল-হলুদের জাপানি বোমা। প্রচুর খাটলেনও। সুয়োকাকে আওয়াজ দিলেও অধিনায়ক আনাসের জন্য দুঃখ যায়নি পুণে কোচের। চোটের জন্য চিডিকে আটকানোর অস্ত্রটা পুণেতে রেখে এসেছেন যে!

কে বেশি চাপে, তুমি না আমি?

“চাপটা আমদের নয়। বেঙ্গালুরুর। ওরা শীর্ষে আছে। ওদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার একটা প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। আমাদের হারানোর কিছু নেই। পিছন থেকে শুধু তাড়া করে চলেছি। আমরা জানি জিতলে থাকব, না জিতলে ছিটকে যাব। এত দূর যে আসব সেটাই তো কেউ ভাবেনি,” বলে দিয়েছেন আর্মান্দো। এর কিছুক্ষণ পর একই চেয়ারে বসে পুণে কোচের মন্তব্য, “আরে, চাপটা তো ইস্টবেঙ্গলের বেশি। বেঙ্গালুরুর দু’টো ম্যাচ জিততে হবে। ইস্টবেঙ্গলের চারটে। তার উপর ওদের বিরুদ্ধে তো আমরা খেলব। দু’বার!”

পরিবর্তন চাই না

ভোটের বাজারে চার দিকে পরিবর্তনের স্লোগান। সব দল যে যার মতো করে পরিবর্তন চাইছে। লাল-হলুদ টিমে তুলুঙ্গা সুস্থ, নওবা সুস্থ। তাতেও দলে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। মহমেডান ম্যাচের দলই রেখে দিচ্ছেন আর্মান্দো। “কেন পরিবর্তন করব? শেষ ম্যাচে তো ভাল খেলেছে টিম। না, না। একই টিম রাখছি,” বলে দিলেন ময়দানের প্রথম গোয়ান কোচ। আনাসের চোট। গণেশের লাল কার্ড আছে। ফলে পুণে টিমে কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। রিগা মুস্তাফা দলে ঢুকছেন।

বেঙ্কটেশ এখনও...

তাঁকে অনায়াসেই আই লিগের ভীষ্ম বলা যেতে পারে। টুর্নামেন্টের প্রথম বছর থেকেই খেলে চলেছেন। তাঁর অনেক পরে মাঠে নামা হোসে ব্যারেটো অবসর নিলেন শুক্রবার। ভাইচুং খেলা ছেড়ে দিয়ে ভোটের ময়দানে। কিন্তু ছিপছিপে চেহারার বছর পঁয়ত্রিশের সম্মুগম বেঙ্কটেশ খেলেই চলেছেন। বর্ষীয়ান মিডিও নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন পুণে কোচ। কে ফেভারিট? ইস্টবেঙ্গল কতটা শক্তিশালী? “কেউ এই ম্যাচে ফেভারিট নয়। ফিফটি-ফিফটি। যে কেউ জিততে পারে।” বেঙ্কটেশের মন্তব্য শুনে ইস্টবেঙ্গলের সর্বক্ষণের এক কর্মীর মন্তব্য, “এই ভীষ্মের ভবিষ্যদ্বাণী কিন্তু ফলবে না। চ্যালেঞ্জ!”

শনিবারে আই লিগ ফুটবল

ইস্টবেঙ্গল: পুণে এফসি (যুবভারতী ৫-০০)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ratan chakraborty i league
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE