রবিবার সকালে টেনিস বিশ্বের এক চিরসবুজের মহাদাপট সন্ধেয় কয়েক হাজার মাইল দূরে আর এক চিরসবুজের র্যাকেটে অল্পের জন্য দেখা গেল না। ফেডেরার আর লিয়েন্ডারে কোনও তুলনা হয় না। ব্রিসবেনে ফেডেরারের এই বয়সে হাজার ম্যাচ জয়ের মাইলস্টোন ছোঁয়ার পাশাপাশি চেন্নাইয়ে লিয়েন্ডারের ডাবলস ফাইনালে একটুর জন্য হার দুটোর ভেতর লক্ষ মাইলের ফারাক। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি নতুন বছরের গোড়ায় দু’জনের মধ্যে কোথায় যেন একটা মিল পাচ্ছি!
অফুরন্ত এদের উদ্যম। নিজের খেলাটার প্রতি তীব্র ভালবাসা। কিন্তু শুধু ভালবাসা থাকলেই তো হয় না। জীবনের সেই ভালবাসার ব্যাপারটাকে ঠিকমতো লালনপালন করতে পারলে তবেই সেই প্রেম যোগ্য মর্যাদা পায়। ফেডেরার, লিয়েন্ডার সেটাই করে।
নিজের পেশার প্রতি তীব্র ভালবাসা জাগিয়ে রাখতে হলে মোটিভেশনটা খুব গরগরে থাকা জরুরি। কিন্তু তেত্রিশ পেরনো ফেডেরার আর সাড়ে একচল্লিশে লিয়েন্ডারের ওই রকম মোটিভেশন কোথ্বেকে আসবে? সিঙ্গলসে যেমন ফেডেরার, লিয়েন্ডার তেমনি ডাবলস সার্কিটে সব পেয়েছে। বিশ্ব টেনিসে ওদের আর কী প্রমাণ করার আছে?
এ রকম অবস্থায় চ্যাম্পিয়নের মোটিভেশন তৈরি হয় তার নিজের ভেতর থেকে। শুধু খেলাধুলোয় নয়। অন্য পেশার জগতেও একই নিয়ম। মুকেশ অম্বানী এখনও যে নতুন নতুন শিল্প গড়ে চলেছেন সেটা কি শুধু আরও টাকার জন্য? মোটেই নয়। বরং আরও বেশি করে শিল্প ব্যাপারটার উন্নতি ঘটাতে। যে কোনও পেশার চ্যাম্পিয়ন কখনও পায়ের উপর পা তুলে নিজের সাফল্যকে উপভোগ করতে করতে বিশ্রাম নিতে পারে না। সে সব সময় নতুন সাফল্যের খোঁজে ছুটে বেড়ায়।
আবার সেই ছোটার জন্য দরকার সর্বোচ্চ পর্যায়ের স্কিল, ফিটনেস, শারীরিক-মানসিক দুটো শক্তিই। বিশেষ করে সেই প্লেয়ারের বয়স যদি গড়পরতার চেয়ে অনেকটা বেশি হয়। যদি এই মুহূর্তে শুধু ফর্ম দেখি, তা হলে টেনিস বিশ্বে আমার মতে এক নম্বর ফেডেরার। গত বছরের শেষের দিক থেকে দুর্দান্ত খেলছে। যেমন ফর্ম, তেমনি ফিটনেস। এই কম্বিনেশনই ওকে হাজার জয় এনে দিল। এ তো সেই পুরনো সময়ের ফেডেরার। যে সময় বছরে ও চারটের মধ্যে তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতত!
ফেডেরার যে তেত্রিশ পেরিয়ে জীবনের প্রথম ডেভিস কাপ অথবা প্রথম বার ব্রিসবেন ওপেন জিতে হাজার ক্লাবে ঢুকে গেল, তার পিছনে ওর টাটকা ফর্ম, ফিটনেস যতটা, ততটাই রয়েছে নিজের ভেতরে তৈরি হওয়া মোটিভেশন এই বয়সেও যখন খেলছিই, তখন আমাকে নতুন সাফল্যের সরণি তৈরি করতেই হবে। অনেকটা সর্বোচ্চ ধনী হওয়ার পরেও কোনও শিল্পপতির আরও নতুন নতুন ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করার মতো।
ব্রিসবেন ফাইনালে এ দিন ফেডেরার যাকে ম্যারাথন লড়াইয়ে ৬-৪, ৬-৭ (২-৭), ৬-৪ হারাল সেই মিলোস রাওনিক ওর চেয়ে নয় বছরের জুনিয়র। বিশ্বের প্রথম দশে। সাড়ে ছ’ফুটের টেনিস-দৈত্য। সার্কিটের দ্রততম সার্ভার। হয়তো বলাটা একটু তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে আমার, তবু রাওনিকের মতো আগামী প্রজন্মের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নকে হারানোর ধরন দেখে মনে হচ্ছে এ বছরটা ফেডেরারের দারুণ যাবে। হয়তো দু’বছর পর আর একটা গ্র্যান্ড স্ল্যামও জিততে পারে। ফেডেরারের হাতে নিজের নামাঙ্কিত ট্রফিটা যখন রয় এমার্সন তুলে দিচ্ছিলেন, টিভি-তে ফেডেরারকে দারুণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ দেখাচ্ছিল। হাজার ম্যাচ জেতার জন্য বিশেষ স্মারক তুলে দিলেন রড লেভার। এ ব্যাপারগুলো নিশ্চয়ই আরও তাতিয়ে তুলবে ফেডেরারকে।
লিয়েন্ডার চেন্নাই ফাইনালে আনকোরা পার্টনার ক্লাসেনকে নিয়ে জোনাথন মারে-ইয়েন লুনের কাছে ৩-৬, ৬-৭ (৪-৭) হারলেও তাতে কোনও আক্ষেপ থাকা উচিত নয়। জিতলে একটাই পার্থক্য ঘটত। গত বছরের মতো মরসুমের প্রথম ট্রফির জন্য নয় মাস অপেক্ষা করতে হত না। ফাইনালে টিম লিয়েন্ডারের প্রতিপক্ষ মোটেই সহজ ছিল না। জোনাথন কিন্তু উইম্বলডন ডাবলস চ্যাম্পিয়ন। বরং চেন্নাইয়ে আগের রাউন্ডে মহেশদের যে রকম রোমাঞ্চকর হারিয়েছে লিয়েন্ডাররা, তার পর ওকে সেলাম করতেই হয়! লিয়েন্ডারেরও এ বছরটা খুব ভাল গেলে আমি অবাক হব না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy