ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে আবার একটা কলাম লিখতেই পারি তো? আমি নিশ্চিত, ওকে আপনারা সবাই ধন্যবাদ দিতে চাইবেন। টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বড় নায়ক এসে পড়েছে! এই ফর্ম্যাটের সবচেয়ে বড় পোস্টার বয়! পরের প্রজন্ম ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছে। ব্যাটিং শিল্পকে একটা নতুন মাত্রা দিয়েছে ও! ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে কারও তুলনার কথা স্রেফ ভাববেন না। যে-হেতু ওর মতো আর কেউ নেই। ও ক্রিজে যায়ই ছক্কার পর ছক্কা মারতে। কোনও আধাআধি ব্যাপার নেই হয় তুমি আমাকে মারবে, নয়তো আমি তোমাকে। স্ট্র্যাটেজি, ক্রিজে নেমে চোখ ‘সেট’ করার ব্যাপার, ইনিংসের গতি বাড়ানো, বোলারদের বুঝে নেওয়া, পরিস্থিতি বিচার করা, মাইলফলকের দিকে তাকানো এ সব কোচেদের চিন্তার বিষয় তাদের মাইনে পাওয়ার প্রমাণের জন্য! ম্যাক্সওয়েল মানে ক্রিজে যাও আর পেটাও!
বোলাররা একসঙ্গে জড়ো হয়ে একটা উত্তর বার করার চেষ্টা করছে। স্কোয়ার লেগ আর মিড অনে ফিল্ডারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অফস্পিনারের বোলিংয়ের সময়েও থার্ড-ম্যান থাকছে! অশ্বিন পর্যন্ত চেষ্টা চালাচ্ছে ওয়াইড ডেলিভারি করে স্টাম্পড্ করার। ইয়র্কারগুলোর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হচ্ছে ফুলটসে! একটা গোটা টিম মিলে যতগুলো ওভার বাউন্ডারি মারছে, ম্যাক্সওয়েল একাই তার চেয়ে বেশি মারছে। ব্যাটিংয়ে টাইমিং ব্যাপারটা না হয় স্টাইলিস্টদের জন্যই রাখা থাক। ও যেটা করছে, সোজা কথায় সেটা বলের চামড়া খুলে নেওয়া!
এর পরেও ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিংয়ের ছবিটা পুরো স্পষ্ট হচ্ছে না? ছেলেটা সুইচ-হিট মারার চেয়েও বেশি উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখাচ্ছে। রিভার্স পুলে ছক্কা মারছে! ওর ক্যাচগুলো শুধু বলবয় আর দর্শকদের জন্যই বরাদ্দ। ফিল্ডারদের জন্য নয়। ওর বিরুদ্ধে ডট বল মানে বোলিং টিমের পাওয়া সেরা ট্রফি। পঞ্জাব ডাগআউটের আর আলাদা ভাবে এক্সারসাইজ করার দরকার পড়ছে না। ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিং দেখার আনন্দে এত বেশি লাফঝাঁপ দিতে হচ্ছে, এত বেশি বার ওঠ-বস করতে হচ্ছে, ঘনঘন কান পর্যন্ত হাসতে হচ্ছে, একে অন্যের সঙ্গে হাই-ফাইভ করতে করতে হাতের তেলো লাল হয়ে উঠছে!
কে বলতে পারে, এর পর ম্যাক্সওয়েল যে শহরেই খেলবে, সেখানে টিকিটের চাহিদা হু-হু করে বাড়বে না? লোকসভা নির্বাচনের জন্য পঞ্জাবের এ বার হোমগ্রাউন্ড নেই। কিন্তু এখন তারা নিশ্চয়ই সেটা পেতে চাইবে। চণ্ডীগড় অচিরেই ‘ম্যাক্সওয়েল সিং’ নামে কোনও পুরস্কার চালু করে দিতে পারে!
তবে মুম্বইকে এর জন্য শোকবার্তা দেওয়া যাবে না। সুপার ম্যাক্সের আবির্ভাব কেউই আন্দাজ পায়নি। আসল ম্যাক্সওয়েলের বয়স মাত্র ক’মাস। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের টিম ম্যানেজমেন্টে সব সেরা মাথারা আছে, কিন্তু কোনও গনৎকার তো নেই! ম্যাক্সওয়েলের পিছনে পঞ্জাব যা খরচ করেছে, তার কয়েকশো গুণ বেশি পেয়ে গিয়েছে। টি-টোয়েন্টি, যা সর্বসাধারণের ফেভারিট ক্রিকেট ফর্ম্যাট, তার পুরোপুরি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত জর্জ বেইলির কাছে। ম্যাক্সওয়েলকে যে তিন বা চারে পাঠানোর সিদ্ধান্তটা নিয়েছে।
এখনও অবধি ম্যাক্সওয়েল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আর ভারতে টি-টোয়েন্টি খেলেছে। বিশ্বের আরও নানা টি-টোয়েন্টি লিগ ওর ম্যাজিক দেখার অপেক্ষায়। যে কোনও ক্রিকেট কোচের চাকরি ইন্টারভিউয়ে একটা প্রশ্ন এখন থেকে অবধারিত আপনি সুইচ-হিট শেখান তো? ম্যাক্সওয়েলের শটটার এতটাই বিশাল প্রভাব! সুপার ম্যাক্স, তুমি সত্যিই অসাধারণ!