Advertisement
১৮ মে ২০২৪
আনন্দই এ বার চ্যালেঞ্জার

একা ভিশির পক্ষেই এটা সম্ভব

অবিশ্বাস্য! গত বছর নভেম্বরে ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে একটাও গেম না জিতে যখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুটটা হারিয়েছিল বিশ্বনাথন আনন্দ, তখন এই শব্দটা মনে হয়েছিল। ওই রকম একটা ধাক্কার পাঁচ মাস পরেই ভিশি যে ভাবে উঠে দাঁড়িয়ে ক্যান্ডিডেটস খেতাব জিতে ফের বিশ্ব খেতাবি লড়াইয়ের যোগ্যতা অর্জন করল, তাতে আজও সেই শব্দটাই মনে হচ্ছে।

খেতাবি লড়াইয়ে ফের মুখোমুখি কার্লসেনের

খেতাবি লড়াইয়ে ফের মুখোমুখি কার্লসেনের

দিব্যেন্দু বড়ুয়া
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩৭
Share: Save:

অবিশ্বাস্য!

গত বছর নভেম্বরে ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে একটাও গেম না জিতে যখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুটটা হারিয়েছিল বিশ্বনাথন আনন্দ, তখন এই শব্দটা মনে হয়েছিল।

ওই রকম একটা ধাক্কার পাঁচ মাস পরেই ভিশি যে ভাবে উঠে দাঁড়িয়ে ক্যান্ডিডেটস খেতাব জিতে ফের বিশ্ব খেতাবি লড়াইয়ের যোগ্যতা অর্জন করল, তাতে আজও সেই শব্দটাই মনে হচ্ছে।

যে ম্যাগনাস কার্লসেনের কাছে আনন্দ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট হারিয়েছিল, তাঁকেই আবার চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে আনন্দ। পারবে না ভিশি এ বার বদলা নিতে?

এক রাউন্ড বাকি থাকতেই আনন্দের ক্যান্ডিডেটস চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারটা সত্যিই টুর্নামেন্টের গোড়ার দিকে আঁচ করা যায়নি। এমনকী আগের (১২ নম্বর) রাউন্ডেই আন্দ্রেইকিনের সঙ্গে এক সময় জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলেও আনন্দ ঝুঁকি না নিয়ে ড্র করেছিল। তাতে অনেক সমালোচনা হয়েছিল ওর। ধরে নেওয়া হয়েছিল আনন্দের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারটা শেষ অর্থাৎ ১৪ নম্বর রাউন্ড পর্যন্ত ঝুলে থাকবে। কিন্তু আনন্দের দুর্দান্ত কামব্যাকের পাশাপাশি ভাগ্যও ওর সঙ্গে ছিল। আন্দ্রেইকিনই এ দিন টুর্নামেন্টের শীর্ষবাছাই লেভন অ্যারোনিয়ানকে হারিয়ে দেয়। কারজাইকিনের সঙ্গে তাই শনিবার ১৩তম রাউন্ড ড্র করেও চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত করে ফেলে আনন্দ।

সম্ভবত কেউই ভাবতে পারেনি পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের তাজ হারানোর পর এ ভাবে আনন্দ এ ভাবে উঠে দাঁড়াবে। এমনকী চেন্নাইয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়শিপের পর লন্ডন ক্লাসিক আর জুরিখ চেস চ্যালেঞ্জেও তো ও আহামরি ফল করতে পারেনি। এখন মনে হচ্ছে, নিজের টাচে ফিরতেই আনন্দ হয়তো ওই দুটো টুর্নামেন্টে নেমেছিল আর ভেতরে ভেতরে আসল টুর্নামেন্ট মানে ক্যান্ডিডেটসের জন্য মোক্ষম প্রস্তুতিটা নিচ্ছিল! হয়তো লন্ডন আর জুরিখে ওর ব্রহ্মাস্ত্র চালগুলো লুকিয়ে রেখেছিল ক্যান্ডিডেটসের কথা ভেবেই!


কার্লসেন

তবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের চাপটা আনন্দের ঘাড় থেকে নেমে যাওয়ায় অনেক খোলা মনে এ বার ক্যান্ডিডেটসে খেলতে দেখা গিয়েছে ওকে। বোর্ডে সেই পরিচিত ক্ষিপ্রতা, ওপেনিংয়ে উদ্ভাবনী দক্ষতা, ধৈর্য সব মিলিয়ে আনন্দ চতুর্থ বাছাই হিসেবে নামলেও নিজেকে অ্যারোনিয়ানদের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যেতে পেরেছে। গোটা টুর্নামেন্টে ওর একটাও গেম না হেরে চ্যাম্পিয়ন হওয়াতেই সেটা পরিষ্কার।

অনেকে বলবেন কার্লসেনের কাছে হারের আগেই ও হেরে বসেছিল। আমার সেটা মনে হয় না বিশ্বের সেরা দাবাড়ুদের খেলা নিয়ে ‘চেস ইনফর্মেটর’ বলে একটা ম্যাগাজিন আছে। তাদের বিচারে গত বছর সবচেয়ে উদ্ভাবনী চালের পুরস্কার পেয়েছিল আনন্দই। প্রশ্ন উঠবে তার পরেও কেন কার্লসেনের বিরুদ্ধে ও দাঁড়াতেই পারেনি? সেটা এখনও আমার কাছে রহস্য। হয়তো নিজের শহরে অনন্ত প্রত্যাশার চাপই হারের বড় কারণ। তবে সেই ধাক্কা কয়েক মাসের মধ্যেই ও যে ভাবে কাটিয়ে উঠল, সেটা ভারতীয় দাবার জন্যই বিরাট সুখবর। আনন্দকে নিয়েই তো আমাদের যাবতীয় ওঠা-নামা। তাই ওর এই ফিরে আসাটা ভারতীয় দাবায় গুমোট আবহে এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়ার মতো। সঙ্গে সমালোচকদের যোগ্য জবাবও ওর।

ভিশি, তোমায় স্যালুট!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

viswanathan anand chess
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE