Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ওডাফার চ্যালেঞ্জ

‘কোনও ভাবেই বাগানের অবনমন হতে দেব না’

মহমেডানের সঙ্গে ড্র করার পর মোহনবাগানের হাতে মাত্র পাঁচটা ম্যাচ থাকলেও ওকোলি ওডাফা মানছেন না তাঁর দল আই লিগে অবনমনের আতঙ্কে। পরের রাংদাজিদ ম্যাচেই তিনি গোলে ফিরতে চান। সব সমালোচনার জবাব দিতেও চান। রবিবার সন্ধেয় আনন্দবাজার-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দেওয়া বাগান অধিনায়ককে রীতিমতো সাহসী আর আত্মপ্রত্যয়ী মনে হল।

তানিয়া রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৪ ০৫:২০
Share: Save:

মহমেডানের সঙ্গে ড্র করার পর মোহনবাগানের হাতে মাত্র পাঁচটা ম্যাচ থাকলেও ওকোলি ওডাফা মানছেন না তাঁর দল আই লিগে অবনমনের আতঙ্কে। পরের রাংদাজিদ ম্যাচেই তিনি গোলে ফিরতে চান। সব সমালোচনার জবাব দিতেও চান। রবিবার সন্ধেয় আনন্দবাজার-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দেওয়া বাগান অধিনায়ককে রীতিমতো সাহসী আর আত্মপ্রত্যয়ী মনে হল।

প্রশ্ন: মহমেডান ম্যাচের পর কি অবনমনের লড়াই মোহনবাগানের কাছে আরও কঠিন হয়ে গেল?

ওডাফা: মিডিয়া এত আগে থেকে অবনমন, অবনমন করছে কেন বলুন তো? আমাদের পয়েন্ট এখন ২১। হাতে এখনও বেশ কয়েকটা ম্যাচ আছে। মনে করি না, অবনমন নিয়ে মোহনবাগান টিমের ভাবার সময় এসেছে। আমরা তো সাতে রয়েছি। আমাদের নীচে এই মুহূর্তে অনেক টিম রয়েছে, যাদের অবস্থা আমাদের চেয়েও খারাপ। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা সব ম্যাচেই হারছি তাও নয়। শেষ তিনটে ম্যাচ ড্র হয়েছে। একটা ম্যাচ জিততে পারলেই দেখবেন দলের চেহারা পুরো পাল্টে গিয়েছে।

প্র: সে ক্ষেত্রে শনিবার শিলংয়ে রাংদাজিদ ম্যাচ আপনাদের কাছে ‘ডু অর ডাই’ তো?

ওডাফা: ‘ডু অর ডাই’ ঠিক বলব না। তবে গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই। শিলংয়ে গিয়ে রাংদাজিদকে হারানোটাও বেশ কঠিন। ওরা এখন ভাল ফর্মে রয়েছে। অ্যাওয়ে ম্যাচে বেঙ্গালুরু-কে হারিয়েছে, ইউনাইটেড-কে এ দিনই চার গোল দিল। কিন্তু আমাদেরও শিলং থেকে তিন পয়েন্ট নিয়ে ফিরতেই হবে। দলের সব ফুটবলারই জানে, আমাদের কাছে রাংদাজিদ ম্যাচ কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

প্র: বহু দিন পর পুরো ম্যাচ খেললেন, মহমেডানের বিরুদ্ধে। চোটের জায়গায় কোনও নতুন ব্যথা?

ওডাফা: একেবারে না। আমি বরং অনেক ফিট। শনিবার যখন মাঠে নেমেছিলাম, ভাবিনি নব্বই মিনিট খেলতে পারব! কিন্তু কোনও ব্যথা অনুভব না করায় পুরো ম্যাচটাই খেলে দিলাম। তা ছাড়া ইচে, শিল্টনের চোট লাগার পর করিম তো তখন আর পরিবর্তন করতেও পারত না। তবে পুরো ম্যাচ খেলার পরেও আমার কোনও সমস্যা হয়নি। বরং আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি।

প্র: কিন্তু আপনি গোল না পাওয়ায় সমর্থকেরা হতাশ। ওডাফাকে পরিচিত ছন্দেও তো পাওয়া গেল না?

ওডাফা: চোট সারিয়ে প্রায় এক মাস পরে ম্যাচ খেললাম। পুরো ম্যাচ তো বহু দিন পর খেললাম। প্রথমে একটু জড়তা ছিল। মাঠে নামার আগে টেনশনেও ছিলাম। মনে হচ্ছিল, পারব তো! আর যে গোল যুবভারতীতে করতে পারিনি, রাংদাজিদ ম্যাচে করে দেব। (ফোনেই হেসে উঠলেন)।

প্র: মহমেডান ম্যাচ আপনার স্ত্রী এসেছিলেন দেখতে। খেলতে নামার আগে বিশেষ কিছু বলেছিলেন আপনাকে?

ওডাফা: ও এই মরসুমে প্রথম আমার ম্যাচ দেখতে মাঠে এসেছিল। খেলতে নামার আগে থেকে আমাকে সারাক্ষণ উৎসাহ দিয়ে গিয়েছে। আমি মাঠে নামার আগে বলেছিল, গোল করতে হবে। কিন্তু ওর কথা রাখতে না পারায় খুব হতাশ লাগছিল। তবে ওকে কথা দিয়েছি, পরের ম্যাচে গোল করবই। আসলে একটা গোল পেলেই দেখবেন আমাকে নিয়ে এত সমালোচনা বন্ধ হয়ে যাবে। আমি শেষ হয়ে যায়নি, প্রমাণ করতে চাই এই মরসুমেই।

প্র: আপনার ফুটবজীবনে এত খারাপ সময় আর কখনও এসেছে?

ওডাফা: চোট নিয়ে আমার এ রকম খারাপ অভিজ্ঞতা জীবনে কখনও হয়নি। দিনের পর দিন মাঠের বাইরে বসে আছি! খেলতে পারছি না! টিভিতে ম্যাচ দেখে যন্ত্রণায় ছটফট করছি। দুঃসহ লাগত সেই সময়গুলো। এক জন খেলোয়াড়ের কাছে চোট যে কী খারাপ ব্যাপার, আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। তবে আমার পরিবার, কোচ করিম, আমার টিমমেটরা, ক্লাব কর্তারা সবাইকে এই খারাপ সময় পাশে পেয়েছি। ওদের জন্যই হয়তো মাঠে আবার ফিরতে পেরেছি।

প্র: গত বছর কলঙ্কিত ডার্বির জেরে ফুটবলজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। এ বছর লাগাতার চোট। কোন সময়টা বেশি খারাপ?

ওডাফা: দু’টোই বিরাট সমস্যা। আমার কেরিয়ারে বড় ধাক্কা ছিল গত বছরের ঘটনা। এ বার চোটটাও তো আমার ফুটবলজীবনের অন্ধকার এক অধ্যায়।

প্র: সমালোচকেরা তো আপনাকে রীতিমতো কাঠগড়ায় তুলছেন। বলছেন, আপনি বাগানের বোঝা!

ওডাফা: (ফোনের অন্য প্রান্তে খানিকক্ষণ নিস্তব্ধতা) আসলে কী জানেন, ফুটবলারদের জীবনটাই এ রকম। ওঠা-পড়া থাকবেই। যখন আপনি পারফরম্যান্স করবেন, তখন সবাই মাথায় করে রাখবে। আর যখন চোট বা অন্য কারণে দু’-একটা ম্যাচ খারাপ খেলবেন বা খেলতেই পারবেন না, তখন সমালোচনার ঝড় বয়ে যাবে। সবাই ‘গো ব্যাক’ বলবে। এটাই বাস্তব।

প্র: গত বছরের মতো এ বছরও কিন্তু মোহনবাগান অবনমন বাঁঁচতে আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে।

ওডাফা: আবার অবনমনের কথা বলছেন? আর গত বছর আমি একা নই, সবাই মিলে লড়াই করে অবনমন বাঁচিয়েছিলাম। এ বারও মোহনবাগানের অধিনায়ক হয়ে বলছি, কোনও ভাবেই দলের অবনমন হতে দেব না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

odafa mohunbagan i league
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE