Advertisement
০১ মে ২০২৪

কুৎসিত আত্মসমর্পণ মনে পড়িয়ে দিল ৪২-এর লজ্জা

ভারতের এক নম্বর ব্যাটসম্যান কে? এই মুহূর্তে উত্তরটা নিঃসন্দেহে রবিচন্দ্রন অশ্বিন! চমকে উঠছেন? ঠাট্টা ভাবছেন? ভাববেন না। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টেস্ট টিমটার বাস্তব এই মুহূর্তে এটাই! যতই অবাক লাগুক। ভারতীয় হিসেবে গিলতে যতই কষ্টকর হোক। জানি না এই পারফরম্যান্স নিয়ে কী লিখব। জানি না, কী লেখা উচিত এদের নিয়ে। লজ্জা হচ্ছে ভেবে যে এরা বিদেশে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছে।

অশোক মলহোত্র
শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৫৮
Share: Save:

ভারতের এক নম্বর ব্যাটসম্যান কে?

এই মুহূর্তে উত্তরটা নিঃসন্দেহে রবিচন্দ্রন অশ্বিন! চমকে উঠছেন? ঠাট্টা ভাবছেন? ভাববেন না।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টেস্ট টিমটার বাস্তব এই মুহূর্তে এটাই! যতই অবাক লাগুক। ভারতীয় হিসেবে গিলতে যতই কষ্টকর হোক।

জানি না এই পারফরম্যান্স নিয়ে কী লিখব। জানি না, কী লেখা উচিত এদের নিয়ে। লজ্জা হচ্ছে ভেবে যে এরা বিদেশে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছে। যে দেশ থেকে গাওস্কর, বিশ্বনাথ, সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়ের মতো টেস্ট ব্যাটসম্যান বেরিয়েছে সে দেশের বর্তমান প্রতিনিধিরা এখন বিদেশে দু’টো ঘণ্টাও আর টিকে থাকতে পারে না। পারে না, সাধারণ একটা বোলিং অ্যাটাকের মহড়া নিতে। অন্য দিকে কুমার সঙ্গকারাকে দেখুন। যে দিন ভারতীয় ব্যাটিং এ রকম আত্মসমর্পণ করল, সে দিন ও ২২১ করে গেল। কী ধারাবাহিকতা। ব্র্যাডম্যানের ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড তাড়া করছে। আমাদের একটা সঙ্গকারা থাকলে আজ এই দিন হয়তো দেখতে হত না।

কী ছিল আজ ইংল্যান্ড বোলিংয়ে? স্টুয়ার্ট ব্রড ব্যাটিংয়ের সময় মুখে খাওয়ার পর বল হাতে আর নামলই না। তবু কি না ১৩-৫! না, স্কোর কখনও এ রকম হয়নি। কিন্তু ৫৩-১ থেকে ৬৬-৬ হয়ে গিয়েছে। কাদের বিরুদ্ধে? একটা জিমি অ্যান্ডারসন আর একটা মইন আলিকে খেলতে না পেরে।

টিভিতে শুনছিলাম কেউ একটা বলছে, মইনকে এখন আর ব্যাটসম্যান বলা উচিত নয়। বলা উচিত একজন স্পিনার যে ছ’নম্বরে ব্যাট করতে যায়। মইন আজও চার উইকেট পেল। কিন্তু আমি বলব, ও আহামরি কোনও স্পিনার নয়। অফস্টাম্প লাইনে বলটা রাখে। লুজ ডেলিভারি খুব দেয় না। একটা সৌরভ বা একটা দ্রাবিড় থাকলে মইনের বলের কিন্তু সুতো খুলে যেত!

দেখুন, ২১৫-র লিড যদি বিপক্ষ নিয়ে ফেলে টেস্ট বাঁচানো যে অলৌকিক কিছু ছাড়া হয় না, আমিও জানি। আশাও করিনি যে ভারত টেস্টটা আড়াই দিন ব্যাট করে বাঁচাবে। কিন্তু সম্মানজনক একটা হার আশা করেছিলাম। ইনিংস ও ৫৪ রানে হারটা ভাবিনি। ভাবতে পারিনি দেখতে হবে, টিমটার ওপেনিং বলে কিছু নেই। মিডল অর্ডার বলে কিছু নেই। এরা ব্যাট করতে শুরু করে লোয়ার মিডল অর্ডার থেকে। পরিস্থিতি যা-ই হোক ক্যাপ্টেন নিজের খেলাটা খেলতে চেষ্টা করে। যদিও এ দিন ধোনির আউটটা জঘন্য। আর আছে অশ্বিন। যে কি না সম্ভবত এখন টপ বা মিডল অর্ডারের ব্যাটিং ক্লাস নিতে পারে। বিপর্যয়ের মধ্যে ঠিক ৪৫ নটআউট থেকে গেল।

বুঝতে পারছি না, কোচ ডানকান ফ্লেচারের কাজটা এখন ঠিক কী। উনি এ রকম কেঁপে যাওয়া টপ বা মিডল অর্ডার নিয়ে আদৌ বসছেন কি? আজকের পর প্রশ্ন উঠে যাবে বিদেশে ভারতের এই টিমটাই সর্বকালের অন্যতম দুর্বল টিম কিনা। নিশ্চিত করে সেটা না বলতে পারলেও একটা কথা বলব। বিদেশে এটাই সর্বকালের কুৎসিত ভারতীয় ব্যাটিং। বিদেশে ভারতের লজ্জার রেকর্ড কম নয়। ’৭৪-এ জিওফ আর্নল্ড আর ক্রিস ওল্ডের বোলিংয়ের সামনে ৪২ অলআউট। ’৬৭-তে এজবাস্টন টেস্টে তিন দিনে উড়ে যাওয়া। আবার অ্যালান ডোনাল্ডের পেসের সামনে দু’ইনিংসে ৬৬ ও ১০০-এ আজহারের ভারতের পুড়ে যাওয়া। শনিবার যেটা দেখলাম, তাতে কিন্তু ‘সামার অব ফর্টি টু’ মনে পড়ে যাচ্ছে। সে দিন তো ইংল্যান্ডের ওল্ড-আর্নল্ড ছিল। এ দিন একটা অ্যান্ডারসন। একটা মইন। স্টুয়ার্ট ব্রড ছাড়াই ১৬১-তে খতম।

এই ভারতের উপর খুব বেশি আশা করাও অন্যায়। যে ব্যাটিং এক সময় আমাদের শক্তি ছিল, মেনে নিতে হবে যে সেই ব্যাটিংই এখন থেকে আমাদের উইক লিঙ্ক।

সবচেয়ে খারাপ লাগছে কোহলির অবস্থা দেখে। ভারতের এক নম্বর ব্যাটসম্যান এখন ও। ওকে কি না বলে বলে আউটসাইড অফস্টাম্পে রেখে নিয়ে যাচ্ছে অ্যান্ডারসন। এই নিয়ে সিরিজে চার বার অ্যান্ডারসনের কাছে আউট হল কোহলি। ওর আউটসুইংয়ের অ্যান্টিডোটটা বারই করতে পারল না! ও নামলেই ইংল্যান্ড যেন বুঝে যাচ্ছে, কোহলিকে কী ভাবে ফেরাতে হবে। পূজারাকে নিয়েও কিছু বলার নেই। ভাল শুরু করছে। কিন্তু বড় রান করতে পারছে না। আজকের আউটটা দুর্ভাগ্যজনক হয়তো। কিন্তু বাকি ইনিংসগুলোয় তো দুর্ভাগ্য ওকে তাড়া করেনি। গৌতম গম্ভীর এ বারের সফরে প্রথম বার নামল। আড়ষ্ট ভাবটা ছিল। নইলে কেউ শর্ট বল ও ভাবে খেলে না। গম্ভীর হয়তো শেষ টেস্টটাও পাবে। কিন্তু ওখানেও যদি কিছু না করতে পারে, মনে হয় ওর টেস্ট কেরিয়ার শেষ। ভারতীয় ব্যাটিং সবচেয়ে হাস্যকর কোথায় লাগল জানেন? মইন আলির বিরুদ্ধে। ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ, লেগ স্লিপ নিয়ে মইন তো বুঝিয়ে যাচ্ছিল, ও কী প্ল্যান নিয়ে এগোতে চাইছে। কোন লাইনে বল করবে। তা সত্ত্বেও ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ওর ফাঁদে পা দিল। রাহানে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফিরে গেল। জাডেজাও দেখেশুনে একটা ক্যাচ প্র্যাকটিস দিয়ে চলে গেল। এ সবের পর বিশ্লেষণ করার কিছু পড়ে থাকে? একটা টেস্ট তিন দিনে শেষ হতে চলেছে, তা-ও মাঝে প্রায় একটা দিন বৃষ্টিতে ধুয়ে গিয়েছে, প্রথম ইনিংসে ছ’উইকেট নেওয়া বোলার চোট পেয়ে বাইরে তার পরেও ভারত ন্যূনতম প্রতিরোধ তৈরি করতে পারছে না। পারছে না দেশে সমর্থকদের ন্যূনতম সম্মানটা ফিরিয়ে দিতে। ধোনির ক্যাপ্টেন্সিও সমালোচনার মুখে পড়বে। ওর আগ্রাসী মনোভাবটা আর দেখতে পাচ্ছি না, যেটা লর্ডসে দেখেছিলাম। শনিবার সকালে ইংল্যান্ডের একটা উইকেট গেলেই ওদের ব্যাটিংয়ের লেজ শুরু হয়ে যেত। কিন্তু ধোনি সে ভাবে আক্রমণে গেল না। তবে যা টিম, তাতে করেও কত দূর কী হবে জানি না। টিমে আমূল বদল দরকার, কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়। এরাই দেশে কাঁপিয়ে এসেছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও খারাপ খেলেনি। কিন্তু ইংল্যান্ডে এসে কঙ্কালটা বেরিয়ে পড়ল। প্রমাণ হয়ে গেল, ভারতের নতুন প্রজন্ম পেস খেলতে পারে না। সুইং খেলতে পারে না। স্পিনটাও আর পারছে না!

লর্ডস টেস্টটা সত্যি এখন মনে হচ্ছে আগের জন্মে ঘটেছিল!

মৃত্যুর চিত্রনাট্য

আইসিইউ ইংল্যান্ডের লিড ২১৫, ধোনিদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু অবস্থা স্থিতিশীল ২১ ওভারে ভারত ৫৩-১ মুমূর্ষু ২৭ বল ১৩ রান ৫ উইকেট ডেথ সার্টিফিকেট ৪৩ ওভার, ১৮৭ মিনিট, পঙ্কজ সিংহ আউট

ম্যাঞ্চেস্টারের স্কোরবোর্ড

ভারত প্রথম ইনিংস ১৫২।

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস (আগের দিন ২৩৭-৬ এর পর)

রুট ক ধোনি বো পঙ্কজ ৭৭
বাটলার ক পূজারা বো পঙ্কজ ৭০
ওকস ২৬ ন. আ
ব্রড আহত অবসৃত ১২
অ্যান্ডারসন এলবিডাব্লিউ জাডেজা ৯
অতিরিক্ত ২৯
মোট ৩৬৭
পতন: ৩০৪, ৩২৫, ৩৩৮ (*ব্রড), ৩৬৭।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ২৪-৭-৭৫-৩, পঙ্কজ ২৮-৫-১১৩-২, অ্যারন ২৬-৪-৯৭-৩, অশ্বিন ১৪-১-২৯-০, জাডেজা ১৩.৩-১-৩৬-১।

ভারত দ্বিতীয় ইনিংস

বিজয় এলবিডব্লিউ ওকস ১৮
গম্ভীর ক বাটলার বো অ্যান্ডারসন ১৮
পূজারা এলবিডাব্লিউ আলি ১৭
বিরাট ক বেল বো অ্যান্ডারসন ৭
রাহানে ক ও বো আলি ১
ধোনি ক ব্যালান্স বো আলি ২৭
জাডেজা ক জর্ডন বো আলি ৪
অশ্বিন ন.আ ৪৬
ভুবনেশ্বর রান আউট ১০
অ্যারন ক বাটলার বো জর্ডন ৯
পঙ্কজ বো জর্ডন ০
অতিরিক্ত
মোট ১৬১।
পতন: ২৬, ৫৩, ৫৩, ৬১, ৬১, ৬৬, ১০৫, ১৩৩, ১৬১, ১৬১।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ৯-৪-১৮-২, ওকস ৯-২-৩৭-১, জর্ডন ১২-১-৬৫-২, আলি ১৩-৩-৩৯-৪।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE