Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

‘কলকাতাবাসী, আপনাদের দ্বিতীয় সন্তানকে শেষ মিশনেও সমর্থন করুন’

টিমের সঙ্গে গত দু’দিন ছিলেন না। কলকাতা থেকে নয়াদিল্লি গিয়েছিলেন। কেকেআর ক্যাপ্টেন নাইট সংসারে যোগ দিচ্ছেন আজ, শনিবার। ফাইনালের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে নয়াদিল্লির বাড়ি থেকে আনন্দবাজারকে দেওয়া দীর্ঘ ই-মেল সাক্ষাৎকারে গৌতম গম্ভীর নিজ-দর্শন, ফাইনাল নিয়ে ভাবনাচিন্তা যে ভাবে ব্যক্ত করলেন...

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৪ ০৩:৪০
Share: Save:

টিমের সঙ্গে গত দু’দিন ছিলেন না। কলকাতা থেকে নয়াদিল্লি গিয়েছিলেন। কেকেআর ক্যাপ্টেন নাইট সংসারে যোগ দিচ্ছেন আজ, শনিবার। ফাইনালের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে নয়াদিল্লির বাড়ি থেকে আনন্দবাজারকে দেওয়া দীর্ঘ ই-মেল সাক্ষাৎকারে গৌতম গম্ভীর নিজ-দর্শন, ফাইনাল নিয়ে ভাবনাচিন্তা যে ভাবে ব্যক্ত করলেন...

প্রশ্ন: আইপিএলে আপনাদের শুরু হয়েছিল সাতটা ম্যাচের পাঁচটায় হার দিয়ে। আজ আপনি ট্রফি থেকে ঠিক এক ম্যাচ দূরে। কোন জাদুমন্ত্রে টিম এমন প্রত্যাবর্তন ঘটাল?

গম্ভীর: আহ্, ব্যাপারটা সত্যিই অসাধারণ। মাঝে মাঝে তো মনে হয় স্বপ্ন দেখছি! ব্যাপারটা অনেকটা এ রকম: ম্যারাথন শুরু হল হোঁচট দিয়ে। অ্যাথলিট শেষ পজিশনে নেমে গেল। পরের দিকে সে-ই নতুন এনার্জি নিয়ে ফিরে এসে প্রথম দুইয়ে উঠে এল! এখন শুধু ফাইনাল ল্যাপটা বাকি। মনে হয় আমরা আশীর্বাদধন্য। যে ভাবে সব সময় কলকাতার সমর্থন পাই... টুইটার, মেসেজ, ই মেল...অবিশ্বাস্য! গোটা বাংলার কেকেআর সমর্থকদের থেকে যে সমর্থনটা পাই, সেটাই আমাদের এক্স ফ্যাক্টর। আমরা ভাগ্যবান, তাই এমন সমর্থনটা পাই।

প্র: পরের ম্যাচটাই ফাইনাল। গৌতম গম্ভীরের কি একটু টেনশন হচ্ছে? কোথাও গিয়ে মনে পড়ছে ২০১২-র কথা?

গম্ভীর: আমি নার্ভাস হতে একটু ভালবাসি। কারণ সেটা আমাকে রিল্যাক্স করতে দেয় না। কখনও কখনও লোকে খেলাধুলো করে আনন্দের জন্য। তার পর যখন সে প্রোফেশনাল হয়ে যায়, মর্যাদার জন্য খেলে, জিততে চায়, তখন আনন্দ একেবারে থাকে না, বলব না। কিন্তু সেটা ব্যাকসিটে চলে যায়। একজন ক্রীড়াবিদ যখন যে সময়ের মধ্যে থাকে, তখন সে সেই নির্দিষ্ট সময়ের দাস। এখনকার দিনে জয়ের চেয়ে কম কিছুতে চলে না। কিন্তু চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর আগে এই খেলাটাই ছিল সপ্তাহ শেষের বিনোদন খোঁজার জায়গা। আর স্মৃতি? নাহ, এখনও পর্যন্ত সে রকম কিছু নেই। আসলে পিছনে ফিরে তাকানোর সময়ই নেই।

প্র: একটা টিম আটটা ম্যাচ ফ্লুকে জেতে না। টিমে নিশ্চয়ই স্পেশ্যাল কিছু একটা ঘটেছে, যা কেকেআরকে এমন আমূল বদলে দিয়েছে। কোনও একটা এক্স ফ্যাক্টর নিশ্চয়ই আছে?

গম্ভীর: ওই যে কেকেআর সাপোর্টারদের সমর্থনের কথা বললাম। ওটাই আমার টিমের এক্স ফ্যাক্টর। আমি তো আগের দিন টুইটও করেছি যে, আমি শুধু মাঠের এগারো জনের অধিনায়কত্ব করি না। গ্যালারিতে যে সত্তর হাজার বসে থাকেন, তাঁদেরও করি। তাঁরাও আমার টিম। এর বাইরে বলতে পারি, নিজের উপর বিশ্বাসই আমাদের আটটা ম্যাচ জিতিয়েছে। বেসিক ক্রিকেট খেলা দরকার ছিল, যেটা আমরা করেছি। এ ছাড়া আমরা সব সময় একটা পজিটিভ কল নিতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম ম্যাচের কঠিন ব্যাপারগুলোর বিরুদ্ধে জিতে বেরোতে। যেমন রান তাড়া করা। আমি জেনেবুঝেই রান তাড়া করতে নামতাম। আমি মনে করি সেটা যেমন আমাদের চাপে ফেলবে, ঠিক তেমনই টিমের সেরাটাও বের করে আনবে। আজ মনে হয়, এই চাপ সামলানো আমাদের সাহায্য করেছে। এত দূর পৌঁছে দিয়েছে। এখন আর কোনও পরিস্থিতিকেই অসম্ভব বলে মনে হয় না।

প্র: আইপিএল সেভেনের কেকেআরের একটা বিশেষ দিক হল, টিমটায় সে রকম বিরাট নাম নেই। টিম ম্যানেজমেন্ট কি জেনেশুনেই এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিল? কেকেআর কি এই তত্ত্বে বিশ্বাসী যে, তারকা আমরা কিনব না। তারকা তৈরি করব?

গম্ভীর: তারকা প্লেয়ার বলে কিছু হয় না। তারকা টিম হয়। টিম স্পোর্টে এক জন বা দু’জনকে আকাশে তুলে দেওয়াটা বাড়াবাড়ি। আমি যেমন মনে করি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে এতটা কার্যকরী দেখাত না যদি রিয়াল মাদ্রিদে একটা জাবি আলন্সোর মতো মিডফিল্ডার বা অন্যান্যরা না থাকত। ঠিক সে রকমই একটা সুনীল নারিন মোটেও অতটা এফেক্টিভ দেখাবে না, যদি শুরুতে উল্টো দিক থেকে একটা উমেশ যাদব ভাল বোলিং না করে। দেখুন, আমি বরাবরই টিমে বিশ্বাসী। ব্যক্তিতে নয়। আমি চাই আমার টিমও সেটা বুঝুক। তারকা তৈরির কথায় বলব, আমি ঠিক নিশ্চিত নই। আমরা প্রত্যেকের মধ্যে একটা করে লিডার তৈরিতে বিশ্বাসী। তারকা নয়। যে এক এক জন লিডার নিজেদের খেলাটাকে নিয়ন্ত্রণ করবে আর টিমের লক্ষ্যপূরণে সাহায্য করবে।

প্র: নিলামের পর আপনার নতুন টিম নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছিল। বলাবলি হয়েছিল, টুর্নামেন্টে সবচেয়ে দুর্বল টিমটার নাম কেকেআর। আজ মনে হচ্ছে, সমালোচকদের ঠিকঠাক জবাবটা দেওয়া গেল?

গম্ভীর: আমি কাউকে ভুল প্রমাণ করতে চাইনি। ক্রিকেট আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমি এখনও তাতে আচ্ছন্ন। লোকে তখন হয়তো সমালোচনা করেছিল কারণ তারা একটা টিমকে বিচার করে স্টার দিয়ে। কিন্তু দিনের শেষে এটা তো স্রেফ ব্যাট আর বলের খেলা। প্লেয়ারদের শুধু একটাই ব্যাপার দরকার। ঠিকঠাক দিশা আর ভাল লিডারশিপ। ভাগ্য ভাল, আমরা সেটা দিতে পেরেছি।

প্র: রবিন উথাপ্পা আর ইউসুফ পাঠানের কামব্যাক নিয়ে কী বলবেন?

গম্ভীর: ব্রিলিয়ান্ট। একটা সিস্টেম কী ভাবে প্লেয়ারদের এগিয়ে নিয়ে যায়, ওরা দু’জন তার উদাহরণ। রবি অসাধারণ। লোকে ওর ব্যাটিং নিয়ে বলছে, কিন্তু আমার মনে হয় উইকেটকিপার হিসেবে ওর দক্ষতাও আমাদের পক্ষে গিয়েছে। টিমে ব্যালান্সটা আছে ও কিপ করতে পারে বলেই। পাঠান আর এক গল্প। খুব আবেগপ্রবণ। অনেক কথা বলতে হয় ওর সঙ্গে। ওকে বলতে হয়, ও কতটা ভাল। ক্যাপ্টেন হিসেবে আমার এটাই কাজ ছিল। ওকে এমন প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে দেখে ভাল লাগছে।

বেঙ্গালুরুতে পিচ-পরিচর্যা। এখানেই হবে আইপিএল ফাইনাল। শঙ্কর নাগ দাসের ক্যামেরায়।

প্র: আপনি মাঝে মাঝেই ছোট ছোট কন্ট্রিবিউশনের উপর জোর দেওয়ার কথা বলে থাকেন। যে কথাটা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেও বলতে শোনা যেত। যিনি মনে করতেন টপ অর্ডারে একটা সেঞ্চুরির মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ লোয়ার মিডলে একটা ১৯ বলে ৩৫। এর নেপথ্য দর্শনটা কী?

গম্ভীর: জানি, সৌরভদা ওটা বিশ্বাস করতেন। আমি ক্যাপ্টেন্সির অনেক কিছুই ওঁর থেকে শিখেছি। মনে আছে, উনি কী ভাবে দেশের বাইরে জেতার ব্যাপারে জোর দিতেন। আমিও সেটা প্রবল ভাবে বিশ্বাস করি। ছোট ছোট কন্ট্রিবিউশেনর ব্যাপারটা হচ্ছে, বেসিক ঠিকঠাক রেখে লোককে সুযোগ দেওয়া একটা সিস্টেমের মধ্যে নিজেকে প্রকাশ করার। কেকেআর বিশাল বিশাল ছক্কা মারার টিম নয়। কিন্তু আমরা ছোট ছোট বিন্দুগুলোকে জুড়ে একটা বড় ক্যানভাসের জন্ম দিই।

প্র: আচ্ছা, আইপিএল সেভেনের কেকেআর আর দু’বছর আগের চ্যাম্পিয়ন টিমটার মধ্যে মিল কোথায়?

গম্ভীর: দু’টো জয়ী টিমের মধ্যে একমাত্র মিল হচ্ছে নিজের উপর বিশ্বাসে। ধৈর্যে। কঠিন পরিশ্রম আর ইচ্ছেয়।

প্র: আপনাকে ইংল্যান্ড সফরের জন্য নির্বাচিত করা হল। এ বারের আইপিএল কতটা সাহায্য করল?

গম্ভীর: সত্যি বলতে, আমি কখনওই আইপিএলকে সে ভাবে দেখিনি। যা আমি প্লেয়ারদের করতে বারণ করি, সেটা নিজে কী ভাবে করব? এই টুর্নামেন্টটা জেতার কথা মাথায় রেখে আমার খেলে যাওয়া আর একই সময়ে ইন্ডিয়া টিমে ডাক পাওয়া, দু’টো কাকতালীয় ব্যাপার। তেমন কিছু ভাবিওনি ওটা নিয়ে।

প্র: ফাইনালের আগে কলকাতাকে কোনও মেসেজ দিতে চান?

গম্ভীর: অবশ্যই। প্রত্যেক কেকেআর সমর্থককে জড়িয়ে যদি বলতে পারতাম, আপনারা আমার কাছে কতটা স্পেশ্যাল, খুব ভাল হত। শুধু ওঁদের বলুন, আপনাদের দ্বিতীয় সন্তান, প্রথম জন অবশ্যই সৌরভদা, রবিবার একটা মিশনে নামছে। তাকে শুধু ব্যাক করে যান।

প্র: আর টিম? টিমকে কী বলবেন ফাইনালের আগে?

গম্ভীর: শুধু বলব, সিম্পল ক্রিকেট খেলো। নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখো। আর জেতার খিদে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rajarshi gangopadhyay ipltag gambhir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE