বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট যুদ্ধ মানেই গরমাগরম বিতর্ক। মাঠের বাইরে দু’দলের ক্রিকেটারদের যে রকম সম্পর্কই থাকুক, মাঠে নামলেই উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। তেমনই কিছু বিতর্কিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত বা সে রকম ঘটনার সাক্ষী চার প্রাক্তন ক্রিকেটার আনন্দবাজারকে জানালেন তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা।
বেঙ্কটেশ প্রসাদ
(১৯৯৬। বেঙ্গালুরুর কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁর সঙ্গে পাক ওপেনার আমির সোহেলের বাগযুদ্ধ প্রসঙ্গে)
এমন ঘটনা তো আর বলে-কয়ে হয় না। হঠাৎ ঘটে যায়। ভারত-পাক ম্যাচে যত বার এমন ঘটনা ঘটেছে, মনে হয় ও রকম আকস্মিকই ঘটেছে। সে দিন আমির আমার একটা বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে বলেছিল, ‘যাও বলটা কুড়িয়ে আনো’। তার আগে কিন্তু আমি ওকে একটাও বাজে কথা বলিনি। কিন্তু ওর কাছ থেকে ওই কথাটা শুনে ঠিক করে নিই, ওর উইকেটটা আমাকেই পেতে হবে। নিজের শহরে ওই অপমানের বদলা নিতেই হবে। ক্রিকেট মাঠে বোধহয় আর কখনও এত প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠিনি। যখন উইকেটটা পেলাম, তখন ওকে প্যাভিলিয়নের রাস্তা দেখানোর প্রতিক্রিয়াটা আপনা আপনিই বেরিয়ে এল। ওটা কিন্তু আগে থেকে ঠিক করে রাখিনি। ১৯৯৯-এও ভারত-পাক ম্যাচে সেই চাপটাই অনুভব করেছিলাম, যা তিন বছর আগে নিজের শহরে টের পেয়েছিলাম। তবে ভাববেন না যেন যে, আমির সোহেলের ঘটনাটার কথা ভেবে পাঁচ উইকেট তুলেছিলাম। চিন্নাস্বামীর সেই ঘটনার কথা ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে মনেই ছিল না।
নয়ন মোঙ্গিয়া
(চিন্নাস্বামীর সেই বিতর্কিত ঘটনা সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেছিলেন যিনি)
বেঙ্কির মতো শান্ত ছেলের সঙ্গেও যে গোলমাল বাধতে পারে, তা আমাদের ধারণাই ছিল না। আসলে বেঙ্কি তখন এত ভাল বল করছিল বলেই ওদের মেজাজ চড়ে যায়। বারবার ওর বলে আমির সোহেল বিট হচ্ছিল আর বিড়বিড় করে ওকে গালাগালি করছিল। আমি স্টাম্পের পিছনে থেকে সেটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছিলাম। শেষে ওই বলটায় বাউন্ডারি হাঁকানোর পর আমিরই গোলমালটা প্রথম বাধাল। তার পর বেঙ্কি যেটা দিল, সেটা মাস্টারস্ট্রোক। ও যে ও রকম করতে পারে, আমরা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে দলের অনেকে ওকে অভিনন্দনও জানিয়েছিল। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই মাঠে বাড়তি কিছু করে দেখানোর তাগিদ থাকে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে। ১৯৯৬-এর ম্যাচে যেমন আমার আঙুলে চিড় ধরেছিল। সেই চোট থাকা সত্ত্বেও খেলেছিলাম। আর অজয় জাডেজার তুমুল পেটানো তো চিরকাল মনে থাকবে।
কিরণ মোরে
(১৯৯২। সিডনিতে জাভেদ মিয়াঁদাদের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা প্রসঙ্গে)
এমনিতেই ম্যাচটার আগে থেকে দুই শিবিরেই চাপা টেনশন ছিল। একেই ভারত-পাক। তার উপর আবার বিশ্বকাপ। আমাদের বোলাররা এত টাইট বোলিং করছিল যে, ওরা ২৫ ওভারে ৮৫-২-এর বেশি তুলতে পারেনি। সে জন্যই জাভেদের মেজাজটা এমনিতেই খিঁচড়ে ছিল। উল্টো দিক থেকে সচিন বোলিং করছিল। বোলারকে চেঁচিয়ে উৎসাহ জোগানো, তাকে ঠিকমতো বলটা জায়গায় ফেলতে বলা আমার দায়িত্ব। আমি সেটাই করছিলাম। হঠাৎ জাভেদ একটা বল না খেলে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে, “অ্যাই, তুই এত চিৎকার করছিস কেন রে? অন্য কোনও মতলব আছে নাকি?” আমি উত্তর দিলাম, “আমাকে ক্যাপ্টেন যা করতে বলেছে, সেটাই করছি। তুমি তোমার কাজটা করো।” তার পর আর আমার সঙ্গে একটা কথাও বলেনি। পরে যখন ও রকম অসভ্যের মতো লাফিয়ে আমাকে নকল করল, তখন আমি একটা কথাও বলিনি। আমাদের ক্যাপ্টেন আজহারই প্রথম আম্পায়ারের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানায়। তখন জাভেদ ‘সরি’ বললেও সে না বলার মতোই।
জাভাগল শ্রীনাথ
(সিডনিতে মোরে বনাম মিয়াঁদাদ ঘটনার অন্যতম সাক্ষী)
মোরে-মিয়াঁদাদ ঘটনাটা ম্যাচে যতটা না উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, তার চেয়ে বেশি বোধহয় মজা পেয়েছিলাম সবাই। হঠাৎ জাভেদের অমন ক্যাঙারু-লাফ দেখে আমরা সকলে ব্যাপক হাসাহাসি করেছিলাম। আমি তখন বাউন্ডারির কাছাকাছি কোথাও একটা ফিল্ডিং করছিলাম। হঠাৎ কপিল পাজির চিৎকার কানে এল, “আরে দেখ দেখ, জাভেদ ক্যায়া কর রহা হ্যায়।” ও দিকে তাকিয়ে ঘটনাটা দেখা মাত্র আমরা হেসে গড়িয়ে পড়ি প্রায়। পরে ড্রেসিংরুমেও এই নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল। বরং ১৯৯৬-এ সোহেল আর বেঙ্কির মধ্যে ঘটনাটা আমাদের উত্তেজিত করে তুলেছিল। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বরাবরই এ রকম। কিছু না কিছু ঘটবেই ধরে নিয়ে মাঠে নামতাম আমরা। আর সব রকম ‘দুর্ঘটনা’র মোকাবিলা করার জন্য মানসিক প্রস্তুতিই থাকত আমাদের। ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে বেশি উত্তেজক ম্যাচ আমি খেলেছি বলে তো মনে পড়ে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy