Advertisement
E-Paper

জার্মান মিডিয়ার ব্যঙ্গ, রোনাল্ডো তো মদ্যপ ভালুক

আধুনিক ফুটবলের সেরার রাজমুকুট নিয়ে যে দু’জনের মধ্যে লড়াই চলছে, সেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আর লিওনেল মেসির মুখে এমনিতে একে অন্যের সমালোচনা থাকে না। ব্যালন ডি’অর ঘোষণার ঘণ্টাখানেক আগেও মেসি বলে দিয়েছিলেন, ২০১৪-এ রোনাল্ডো যা করেছেন, দুর্দান্ত। তবে পারস্পরিক ‘সম্মান’ যে অনেকটাই বাহ্যিক, তার হাতেগরম প্রমাণ আবার পাওয়া গেল। পাওয়া গেল ব্যালন ডি’অরের রাতেই, ফিফা বর্ষসেরার ভোটাভুটির খুঁটিনাটি প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে। যেখানে দেখা গেল, মেসি বা রোনাল্ডো কেউই একে অপরকে বর্ষসেরা মনে করেন না।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৪৩

আধুনিক ফুটবলের সেরার রাজমুকুট নিয়ে যে দু’জনের মধ্যে লড়াই চলছে, সেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আর লিওনেল মেসির মুখে এমনিতে একে অন্যের সমালোচনা থাকে না। ব্যালন ডি’অর ঘোষণার ঘণ্টাখানেক আগেও মেসি বলে দিয়েছিলেন, ২০১৪-এ রোনাল্ডো যা করেছেন, দুর্দান্ত। তবে পারস্পরিক ‘সম্মান’ যে অনেকটাই বাহ্যিক, তার হাতেগরম প্রমাণ আবার পাওয়া গেল। পাওয়া গেল ব্যালন ডি’অরের রাতেই, ফিফা বর্ষসেরার ভোটাভুটির খুঁটিনাটি প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে। যেখানে দেখা গেল, মেসি বা রোনাল্ডো কেউই একে অপরকে বর্ষসেরা মনে করেন না।

রোনাল্ডোর বিচারে সোনার বলের তিন প্রধান দাবিদার রিয়াল মাদ্রিদেরই তিন সতীর্থ সের্জিও র্যামোস, গ্যারেথ বেল এবং করিম বেঞ্জিমা। মেসির পছন্দের তিন: তাঁর জাতীয় সতীর্থ অ্যাঞ্জেল দি’মারিয়া, বার্সা টিমমেট আন্দ্রে ইনিয়েস্তা এবং ক্লাব-দেশের সতীর্থ জাভিয়ের মাসচেরানো। তবে মেসি যাঁকেই ভোট দিন না কেন, তাতে রোনাল্ডোর খুব একটা অসুবিধে হত না। ৩৭.৬৬ শতাংশ ভোট যিনি পেয়েছেন, তাঁর একটা-দুটো ভোটে কীই বা আসে-যায়! আর মাঠের যুদ্ধে মেসি বনাম রোনাল্ডো যতই গায়ে-গায়ে হোক না কেন, ব্যালন ডি’অরের যুদ্ধক্ষেত্রে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে দ্বিগুণেরও বেশি ‘গোলে’ টপকে গেলেন সিআর সেভেন। মেসি মাত্র ১৫.৭৬ শতাংশ ভোট পেয়ে অন্য দাবিদার ম্যানুয়েল নয়্যারের (১৫.৭২) চেয়ে ভগ্নাংশে এগিয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। পুসকাস পুরস্কারের ভোটেও ছিল চমক। রবিন ফান পার্সির উড়ন্ত গোলকে টপকে দু’নম্বরে ছিলেন আইরিশ মেয়ে ফুটবলার স্টেফানি রোচ। তবে সব ছাপিয়ে উঠে এসেছে রোনাল্ডোর জয়।

আর ব্যালন ডি’অর জয়ের পরের কয়েকটা দিন রোনাল্ডোর ক্যারিশমার কাছে মেসি-ম্যাজিক যদি কিছুটা ম্লান দেখায়, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ‘ব্রাত্য’ নয়্যারের ক্ষোভে জার্মান পত্রপত্রিকায় রোনাল্ডো নিয়ে কার্টুন, পুরস্কারমঞ্চে তাঁর চিত্‌কারকে ‘মদ্যপ ভালুকের’ সঙ্গে তুলনা করা নিছকই খ্যাতির বিড়ম্বনা!

বাস্তব বলছে, ট্রফি ক্যাবিনেটের তিনটে সোনার বলের মধ্যে তৃতীয়টাই ছিল সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশিত। আর সেটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরে রোনাল্ডো-ভক্তরাও উচ্চকণ্ঠে নায়কের স্তুতিতে নেমে পড়েছেন। ব্রাজিল বিশ্বকাপে রোনাল্ডো কিছুই করতে পারেননি এই জাতীয় প্রশ্ন উড়িয়ে বলা হচ্ছে, তখন তো রোনাল্ডো হাঁটুর চোটে কাবু ছিলেন। দেশের জার্সিতে ব্যর্থতা ঢাকতে তুলে ধরা হচ্ছে ২০১৪ সালে রিয়ালে তাঁর চোখধাঁধানো ফর্ম। স্পোর্টস কোম্পানি ‘নাইকি’ ঘোষণা করে দিয়েছে, সামনের উইকএন্ডে রোনাল্ডো নামবেন বিশেষ বুট পায়ে। যার রং সোনালি, যার গায়ে অসংখ্য হিরে বসানো।

এই বুটজোড়া নাকি রোনাল্ডোর ফুটবল-দর্শনের প্রতীক। যে দর্শন বলে যা নিখুঁত, তাকে অসামান্য করে তোলো। নিন্দুকেরা যা-ই বলুন, এই চেষ্টায় রোনাল্ডোর ত্রুটি দেখা যায় না। প্রথম আর তৃতীয় ব্যালন ডি’অর জয়ের মধ্যে কেটে গিয়েছে ছ’বছর। যেটাও একটা ছোটখাটো রেকর্ড। আর কেউ এত বছরের ব্যবধানে এই স্বর্ণ-পুরস্কার পাননি। সেরার মুকুট পাওয়ার অর্ধ যুগ পরেও সেই মুকুটের উপর নিজ-দাবি আরও মজবুত করা, ফুটবল গ্রহের নানা বৈচিত্রের মধ্যেও বিরল।

মেসি না রোনাল্ডো এই তর্ক তাই আপাতত স্থগিত। ফুটবলবিশ্ব এখন ডুবে রোনাল্ডো নামক আধুনিক বিস্ময়ে। মেসির নৈসর্গিক সৃষ্টিশীলতা যাঁর নেই, কিন্তু আছে অপার্থিব গতি। যাঁর ফুটবল মেসির মতো সেতারের সুর নয়, কানফাটানো বিস্ফোরণ। গত বছর নিজের ফুটবলকে সূক্ষ্মতার অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন রোনাল্ডো। মুভমেন্ট কমিয়ে দিয়েছেন, বল ছোঁয়া কমিয়ে দিয়েছেন, আক্রমণ শোধিত করতে করতে যেন হয়ে দাঁড়িয়েছেন নিষ্ঠুর, ধারালো একটা ক্ষুর।

যা দেখেশুনে বিগত বছরটাকে শুধু ২০১৪ বলা যাচ্ছে না। ওটার নতুন একটা নাম দিয়েছেন রোনাল্ডো-ভক্তরা— সিআর ২০১৪!

balon d'or ronaldo cr7 golden boot diamond boot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy