Advertisement
০১ মে ২০২৪

‘ডারউইন’ আছেন বলেই ট্রফি হয়তো মিউনিখ যাবে

গুয়ার্দিওলার মগজাস্ত্র কি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ তুলে দেবে রবেন-রিবেরিদের হাতে? কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখ-ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচ দেখার পর আনন্দবাজারে বিশ্লেষণ অ্যালভিটো ডি’কুনহা-রহোসে মোরিনহো? না, পেপ গুয়ার্দিওলা? বুধবার রাতের পর বিশ্বসেরা ক্লাব কোচ এখন কে, এই প্রশ্নটা যদি উঠে পড়ে আমি অন্তত অবাক হব না। প্যারিস সাঁ জাঁ-র বিরুদ্ধে দু’টো মুভে ম্যাচ শেষ করে দিয়েছিলেন মোরিনহো। এক, ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে তুলে দেম্বা বা-কে নামিয়ে দিয়েছিলেন। দুই, ম্যাচের শেষ দিকে আচমকাই চলে গিয়েছিলেন তিন স্ট্রাইকারে।

যুগলবন্দি... রিবেরি-রবেন। বুধবার। ছবি: এএফপি।

যুগলবন্দি... রিবেরি-রবেন। বুধবার। ছবি: এএফপি।

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪৯
Share: Save:

ম্যাঞ্চেস্টার ১ (এভ্রা)

বায়ার্ন ৩ (মান্ডজুকিচ, মুলার, রবেন)

হোসে মোরিনহো? না, পেপ গুয়ার্দিওলা?

বুধবার রাতের পর বিশ্বসেরা ক্লাব কোচ এখন কে, এই প্রশ্নটা যদি উঠে পড়ে আমি অন্তত অবাক হব না।

প্যারিস সাঁ জাঁ-র বিরুদ্ধে দু’টো মুভে ম্যাচ শেষ করে দিয়েছিলেন মোরিনহো। এক, ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে তুলে দেম্বা বা-কে নামিয়ে দিয়েছিলেন। দুই, ম্যাচের শেষ দিকে আচমকাই চলে গিয়েছিলেন তিন স্ট্রাইকারে।

ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে আবার দু’টো নয়, মাত্র একটা স্ট্র্যাটেজিক পরিবর্তনে ধ্বংস করে দিলেন পেপ গুয়ার্দিওলা! মারিও গোটজে-র জায়গায় রাফিনহাকে নামিয়ে। রাইটব্যাকে ব্রাজিলিয়ান রাফিনহা নামতেই সব দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়ে গেল ভ্যালেন্সিয়া-রুনিদের।

বুধবার রাতের পর গুয়ার্দিওলার টিমের দাপটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে চলে যাওয়ার পর অনেকে দেখছি বলাবলি করছেন, সেমিফাইনাল ড্র-তে যদি মোরিনহো-র মুখোমুখি হয়ে যান গুয়ার্দিওলাতা হলে কী হবে? আমি তো বলব, মেসি বনাম রোনাল্ডোর চেয়ে কোনও অংশে কম হবে ওই দুই কোচের ম্যাচ! নিঃসন্দেহে তখন ওটা হবে দুই ধুরন্ধর কোচের এল ক্লাসিকো!

কেউ কেউ ভিন্ন মত দিতে পারেন। মোরিনহো বনাম গুয়ার্দিওলা হলে আমি কিন্তু এগিয়ে রাখব বায়ার্ন কোচকেই। কেন বলছি? পেপ আমার কাছে বিশ্ব ফুটবলের চার্লস ডারউইন। স্পেন হোক কি জার্মানি। তিকিতাকার আমদানি উনি ঠিক করে ফেলেন। অস্বাভাবিক দ্রুততায়। বার্সায় যখন ছিলেন তখন এক রকমের ফুটবল উপহার দিয়েছেন। এখন বায়ার্নে এসে সেই খেলাটাকেই আরও পরিমার্জিত সংস্করণে মাঠে পেশ করছেন। শুধু পাসিং ফুটবল নয়। জার্মানদের পাওয়ার ফুটবলকেও ওর সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন পেপ। মোরিনহো নিঃসন্দেহে বড় কোচ। কিন্তু মোরিনহো কবে কী করবেন, সেটা উনি নিজেও জানেন না! গুয়ার্দিওলার কিন্তু নিজের অঙ্কটা ভাল বোঝেন। যে অঙ্ক দিয়ে বুধবার রাতে শেষ করে দিলেন মোয়েসের ম্যাঞ্চেস্টারকে।

প্রথমার্ধে খুব সুবিধে করতে পারছিলেন না পেপ। বরং ম্যাঞ্চেস্টারই তখন বেশি ভাল খেলছিল। বায়ার্ন কোচ ফিলিপ লামকে নামিয়েছিলেন রাইটব্যাকে। কিন্তু লাম উঠে গিয়ে খেলছিল মাঝমাঠে। বায়ার্নের লেফট ব্যাক আলাবাও ঠিক সে ভাবেই মিডফিল্ডার টনি ক্রুজের পাশে দাঁড়িয়ে রুনি-কাগাওয়া-ভ্যালেন্সিয়ার ত্রিভুজ আক্রমণ সামলাচ্ছিল। ৪-১-৪-১ শুরু করেও বায়ার্ন খেলছিল ২-৩-২-৩। ফুটবলের সেই পুরনো ডব্লিউ-ডব্লিউ ফর্মেশন। এতে দুই সাইড ব্যাক পাশে না থাকায় ভ্যালেন্সিয়ারা আক্রমণে উঠে আসছিল বারবার। এবং এ ভাবেই ভ্যালেন্সিয়ার ক্রস থেকে এভ্রার বিশ গজের রকেট শটে ম্যান ইউয়ের এগিয়ে যাওয়া।

যদিও মোয়েসদের উৎসব ২২ সেকেন্ডের বেশি টেকেনি! এভ্রার গোল হতে না হতে গোল শোধ। আর তার দশ মিনিটের মধ্যে ৩-১, এবং ম্যাঞ্চেস্টারের দৌড় শেষ! আসলে এভ্রাকেই দাঁড় করিয়ে রেখে মান্ডজুকিচ গোল করে যাওয়ার পরপরই ব্রাজিলিয়ান রাইটব্যাক রাফিনহাকে নামিয়ে দিলেন গুয়ার্দিওলা। আলাবাও এ বার একটু নেমে এল। আর লাম হয়ে গেল সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার। এতে দু’টো কাজ হল। এক, টনি ক্রুজের পাসগুলো ধরে এতক্ষণ প্রায় নিষ্প্রভ বায়ার্নের উইং প্লে রবেন-রিবেরির যুগলবন্দিতে ঝলমল করে উঠল। তাঁদের জার্মান তিকিতাকা সামলাতে গিয়ে এ বার ভুলভ্রান্তি শুরু হল ম্যান ইউ-এর ব্যাক ফোরে। পরিণামদু’টো গোল। একটা মুলার। একটা রবেন। রবেনের গোলটার ক্ষেত্রে অবশ্য ম্যান ইউ কিপার ডি’জিয়ার কিছু করার ছিল না। ভিদিচের পায়ে লেগে বল দিক পরিবর্তন করে গোলে ঢুকে যায়।

ম্যাচের শেষ তিরিশ মিনিট গুয়ার্দিওলার দলের এই দাপটে উড়ে গেল রুনিরা। কিন্তু প্রথমে বেশ ভালই খেলছিল। বায়ার্নের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল লেগ পড়ার পরপরই যে ভাবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ‘আসুন, ইউনাইটেডের জন্য আমরা নীরবতা পালন করি’ মার্কা মন্তব্য চালু হয়েছিল, দু’টো লেগ ধরলে কখনওই অতটা খারাপ দেখায়নি মোয়েসের টিমকে। অ্যালিয়াঞ্জ এরিনাতেও একটা সময় ড্যারেন ফ্লেচার আর ক্যারিক মিডল করিডরে প্রায় পাঁচিল তুলে দিয়েছিলেন গোটজে, মুলারদের সামনে। উইংয়ে রিবেরির দাপাদাপিও মোয়েস প্রথমার্ধে ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নিয়েছিলেন ভ্যালেন্সিয়াকে নামিয়ে।

কিন্তু উল্টো দিকে একটা পেপ গুয়ার্দিওলা থাকলে আর কী করা যাবে!

মোয়েসের জায়গায় যদি কোনও এক স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন ম্যান ইউ ম্যানেজার হিসেবে থাকতেন, কিছু হওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু পেপের টক্কর নেওয়ার সাধ্য মোয়েসের ছিল না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে যে বাকি দুই কোচ টিমকে তুললেন, সেই কার্লো আন্সেলোত্তি এবং দিয়েগো সিমিওনে-ও মারাত্মক। সিমিওনে তো জায়ান্ট কিলার। প্রচারে না থাকলেও মহাতারকা কী ভাবে অকেজো করতে হয়, জানেন। আন্সেলোত্তির টিম আবার রোনাল্ডো খেললে এক রকম, না খেললে আর এক। পেপ সে দিক থেকে আলাদা। ধারাবাহিকতার জন্য মোরিনহোর চেয়েও এগিয়ে।

সোজাসুজি বলছি, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যদি এ বারও মিউনিখে যায়, অবাক হওয়ার কিছু নেই। ফুটবলের চার্লস ডারউইন আর কোন টিমে আছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

alvito d'cunha champions league
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE