Advertisement
E-Paper

দিল্লির কাছে হেরে ‘গৃহযুদ্ধ’ শুরু হাবাসের দলে

আন্তোনিও লোপেজ হাবাসকে এ দেশে গত দেড় বছরে এ রকম ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি! ইনজুরি টাইমের শেষ মুহূর্তে কলকাতার গোল হজম করাটা স্প্যানিশ কোচকে যেন আকাশ থেকে মাটিতে আছড়ে ফেলেছে।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩২
স্যান্টোসের গোলের পর দিল্লির উচ্ছ্বাস।

স্যান্টোসের গোলের পর দিল্লির উচ্ছ্বাস।

দিল্লি ১ (স্যান্টোস)

আটলেটিকো ০

আন্তোনিও লোপেজ হাবাসকে এ দেশে গত দেড় বছরে এ রকম ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি!

ইনজুরি টাইমের শেষ মুহূর্তে কলকাতার গোল হজম করাটা স্প্যানিশ কোচকে যেন আকাশ থেকে মাটিতে আছড়ে ফেলেছে।

‘কান্নাকাটি’ শব্দটা যাঁর কোচিং অভিধানে নেই, সেই কঠোর মানুষটি রবের্তো কার্লোসের টিমের কাছে হেরে যেন হঠাৎ-ই অন্য রকম। ম্যাচের পর চোখের সামনে ‘গৃহযুদ্ধ’ দেখেও নির্বিকার থেকে গেলেন অদ্ভুত ভাবে। ব্যর্থতার অন্ধকার গলিতে ঢুকে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে স্প্যানিশ কোচের সেই ‘দাদাগিরি’। মাথা নিচু করে মেনে নিচ্ছেন, ‘‘চোটের ধাক্কায় বারবার প্রথম এগারো পাল্টাতে হলে সাফল্য পাওয়া যায় না। আজ গোলটার সময় আমাদের ভুল ছিল গোটা পজিশনে।’’

যুবভারতীর চল্লিশ হাজার দর্শক বৃহস্পতি সন্ধ্যায় দেখতে এসেছিলেন দু’টো জিনিস। এক) হাবাসের চওড়া কপাল জোড়া হারের ধাক্কা সামলে কলকাতাকে জয়ে ফেরাতে পারে কি না। দুই) বুলেট ম্যান রবের্তো কার্লোসের সেই ফ্রি-কিক ম্যাজিক দেখাবে কি না ?

দু’টোই দেখতে পেলেন না মাঠে রঙিন হয়ে আসা দর্শকেরা। হতাশা আর বিষণ্ণতা সঙ্গী করে বাড়ি ফিরলেন। এটিকের পতাকা পকেটে লুকিয়ে। মুখের রঙ মুছে ফেলে।

ইনজুরি টাইমে গোল খেয়েছে কলকাতা। কার দোষে গোল তা নিয়ে মাঠেই তর্কাতর্কি আর ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দেন বোরহা, নাতো, অর্ণব মন্ডলরা। হাবাসের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অর্ণব সোজা বেরিয়ে যেতে চাইলেন মাঠ থেকে। তাঁকে আটকান অন্য সতীর্থরা। মালুদার তীব্র শট গোললাইনের সামনে দাঁড়িয়ে বুক দিয়ে বাঁচানোর পর মাঠেই লুটিয়ে পড়েছিলেন দেশের এক নম্বর স্টপার। কয়েক সেকেন্ডের জন্য হারিয়েছিলেন জ্ঞান। কিন্তু দিল্লির একমাত্র গোলটার জন্য মাঠেই অর্ণবকে দোষারোপ করছিলেন বোরহা। নাতোও। তার থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত। তাঁর দেড় বছরের কোচিং জীবনে হাবাসকে প্রথম বার দেখতে হল এ রকম দৃশ্য।

মহাপ্রতিদ্বন্দ্বী কার্লোসের ছাব্বিশ মিনিটের নামচাটা কেমন হল এ দিন?

প্রথম বলটা ধরেই মিসপাস করলেন! পরের বলটা তাঁর পায়ে লেগেই প্রায় সেমসাইড গোল হয়ে যাচ্ছিল! তারপর হাঁটি-হাঁটি পা-পা। দু’একবার এ দিক-ও দিক পাস বাড়ানো। নেমেছিলেন স্টপার জন রিসেকে বসিয়ে। কিন্তু কোন পজিশনে খেললেন ব্রাজিলীয় কিংবদন্তি লেফট ব্যাক? ধন্ধ লাগছিল।

বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের সেরা সাইডব্যাক শেষ পর্যন্ত শো পিস হয়েই থেকে গেলেন। জয় করতে পারলেন না যুবভারতীর মন। অথচ ব্রাজিলীয় মহাতারকার একটা বাঁকানো ফ্রি কিক দেখার আশায় যুবভারতীর সে কী আকাঙ্খা!

চৌষট্টি মিনিটে কার্লোস নামলেন মাঠে। তার চার মিনিট আগে থেকে ওয়ার্ম আপ শুরু করেন বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন ফুটবলার। বেঞ্চ থেকে দিল্লির কোচ-কাম মার্কি ফুটবলার উঠতেই দাঁড়িয়ে পড়েছিল পুরো স্টেডিয়াম। উচ্ছ্বাসে ভেসে। কিন্তু কোথায় কী? বিজ্ঞানের স্বাভাবিক নিয়মে বিয়াল্লিশের কার্লোস এখন তাঁর ছায়া। চেষ্টা আছে, ইচ্ছে আছে। কিন্তু শরীর যে অচল। দেখে মনে হচ্ছিল, টিমে তাঁর কোচ থাকা মানায়, ফুটবলার নয়।

কার্লোসের সেই বাঁকানো ফ্রি কিকের দর্শন হয়তো এ দিন পাননি কলকাতার দর্শক। কিন্তু দেখতে পেলেন সেই তেরো বছর আগের ছবিটা। ২০০২ বিশ্বকাপ জেতার পর যে ভাবে দু’টো পেশিবহুল হাতে ট্রফি নিয়ে আকাশের দিকে তুলে ধরেছিলেন তিনি, এ দিন ম্যাচ জেতার পর সে রকমই করলেন কার্লোস। হয়তো হাবাসকে ফের হারানোর উচ্ছ্বাসেই। দু’হাত আকাশে তুললেন।

কিন্তু তা দেখতে তখন হাতে গোনা দর্শক যুবভারতীতে। প্রিয় এটিকের হার, সঙ্গে কার্লোস নিয়ে স্বপ্নভঙ্গ। থাকবেনই বা কেন!

শেষ দশ মিনিট দিল্লি দশ জনে খেলল। গোলটা যখন হল তখন তো নিজেদের বক্সে সাত-আট জন এটিকে ফুটবলার দাঁড়িয়ে। তার মধ্যেও ফাঁকায় দাঁড়িয়ে গোল করে গেলেন দিল্লির বদলি ফুটবলার ডস স্যান্টোস। মালুদার নিরামিষ পাস থেকে। কিন্তু হাবাসের কলকাতা পুরো ম্যাচে সেই অর্থে একটাও পজিটিভ সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।

তবে ‘ফাটাফাটি ফুটবলের’ ফানুস উড়িয়ে এসে দু’দলই খেলল ঝুঁকিহীন, ম্যাড়মেড়ে ফুটবল। কোথায় সেই ভয়ঙ্কর হিউম? আইএসএল-ওয়ানের সেরা ফুটবলারের ছয় নম্বর ম্যাচ খেলা হয়ে গেল এ বার। একটা গোলও নেই। হাফটাইমে এক জন লম্বা লোককে গোলকিপার দাঁড় করিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় গোলে বল মারছিলেন। কিপার নড়ছে না, এই অবস্থায় সৌরভ দু’টো গোল করলেন, তিনটের মধ্যে। হিউমের এ বার যা অবস্থা তাতে ওই রকম ‘স্থির কিপার’ যদি দিল্লির গোলে থাকতেন, তা হলেও হয়তো গোল করতে পারতেন না হিউম।

হাবাসের কাছে ম্যাচটা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্যই সৌরভ থেকে পস্টিগা— ম্যাচের আগে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এটিকে-কে। মাদ্রিদ থেকে পস্টিগার ফেসবুক পোস্ট এসেছিল ম্যাচের তিন ঘণ্টা আগে। ‘‘ভাই সব, আজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। লড়াই করো। জিততেই হবে। আমি সুস্থ হচ্ছি। ফিরছি।’’ আর সৌরভ নিজের টিমের জয়ের প্রত্যাশায় খেলা শুরুর অনেক আগেই মাঠে এসে বসেন নিজের আসনে।

পস্টিগা মেসেজ পাঠালেও হাবাস তাঁর জন্য ‘কান্নাকাটি’ শুরু করে দিয়েছেন এ দিনের পর। এখনও পর্যন্ত যা খবর, ২০ নভেম্বর হয়তো আসবেন পস্টিগা। কিন্তু তত দিনে কি আর সেমিফাইনাল যাওয়ার আশা বেঁচে থাকবে কলকাতার? সে জন্যই গত বারের ফাইনালের গোলদাতা রফিক এবং সুইডেনে থাকা ডুডু-র মতো চেনা স্কোরারকে নেওয়ার কথা ভাবছে এটিকে।

চোট পাওয়া লারা-ভালদো-আরাতা নিয়েও কলকাতা শিবিরে চলছে হা-হুতাশ। কলকাতার ব্যর্থতার অন্যতম কারণ চোট-আঘাত, এটা মানতেই হবে। কিন্তু যাঁরা নিয়মিত খেলছেন, সেই বোরহা-নাতোদের পারফরম্যান্স গত বারের ধারেকাছে নেই কেন? প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, ব্যারেটোর বদলে ভাইচুংয়ের পরামর্শে এ বার স্বদেশি ফুটবলার যাঁদের নেওয়া হয়েছে, তাঁদের অবস্থা এত খারাপ কেন?

গত বারের চ্যাম্পিয়ন টিমের এ বারের ক্যাচলাইন— ‘‘আপনার টিম, আপনার স্বপ্ন’। আটলেটিকো কলকাতার এই মুহূর্তে যা হাল, তাতে তাদের নিয়ে কোনও স্বপ্নই দেখা যাচ্ছে না!

আটলেটিকো দে কলকাতা: অমরিন্দর, রিনো, অর্ণব, তিরি, অগাস্টিন, বোরহা, নাতো, গ্যাভিলান, দ্যুতি (সুশীল), বলজিৎ (জুয়েল), হিউম।

ছবি: আইএসএল ও শঙ্কর নাগ দাস।

isl
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy