Advertisement
০১ মে ২০২৪

ধোনিদের আসল ‘বস’ কে, বুঝিয়ে দিল বোর্ড

ইংল্যান্ড সফরের কোনও একটা সাংবাদিক সম্মেলনে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বলেছিল, টিম ইন্ডিয়ার নাকি এক জনই ‘বস’। তিনি ভারতের কোচ ডানকান ফ্লেচার। তবে ভারতীয় দলের আসল ‘বস’ কে, এই নিয়ে যাঁদের মনে এত দিন সন্দেহ ছিল, শুক্রবার বোর্ডের ঘোষণার পর তাঁদের সন্দেহ নিশ্চয়ই কেটে গিয়েছে।

অশোক মলহোত্র
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩১
Share: Save:

• ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত টিম ডিরেক্টর হিসেবে থেকে যাচ্ছেন রবি শাস্ত্রী।

• ধোনিদের হেড কোচ হিসেবে থাকছেন ডানকান ফ্লেচার।
সঞ্জয় বাঙ্গার, ভরত অরুণ এবং আর শ্রীধর থাকবেন বিশ্বকাপের শেষ পর্যন্ত।

ইংল্যান্ড সফরের কোনও একটা সাংবাদিক সম্মেলনে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বলেছিল, টিম ইন্ডিয়ার নাকি এক জনই ‘বস’। তিনি ভারতের কোচ ডানকান ফ্লেচার। তবে ভারতীয় দলের আসল ‘বস’ কে, এই নিয়ে যাঁদের মনে এত দিন সন্দেহ ছিল, শুক্রবার বোর্ডের ঘোষণার পর তাঁদের সন্দেহ নিশ্চয়ই কেটে গিয়েছে।

রবি শাস্ত্রীকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত ধোনিদের টিম ডিরেক্টর হিসেবে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বোর্ড পরিষ্কার বুঝিয়ে দিল, শাস্ত্রীই এই দলটার বস। অন্তত আমার সেটাই মনে হচ্ছে।

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, ইংল্যান্ডে ধোনি তো ফ্লেচারকেই বস বলে ঘোষণা করেছিল। এর পর তা হলে ভারতীয় ক্যাপ্টেন কী করে রবি শাস্ত্রীকে সেই জায়গায় মেনে নেবে? জানি না কেন ধোনি এই মন্তব্য করেছিল। তবে তার পর থেকে কিন্তু আর এক বারও ধোনি এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি। যদিও এই নিয়ে ওর কোনও ব্যাখ্যাও আর পাওয়া যায়নি। বোর্ডের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে ওর রসায়ন যখন ভাল এবং তাঁরাই যখন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন ধোনি সিদ্ধান্তটা মেনে নিয়েছে বলেই আমার মনে হয়।

মাহি যথেষ্ট বিচক্ষণ এবং এত দিন ধরে ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন থাকায় দলটার কীসে ভাল আর কীসে খারাপ, তা-ও ভালই জানে। দলের উন্নতির কথা ভেবে ও নিশ্চয়ই রবির মতো এক উজ্জ্বল ব্যক্তির সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়েই চলবে।

ফ্লেচার এত দিন ধরে ভারতীয় দলের সঙ্গে থেকে দলটার নাড়ি-নক্ষত্র কতটা জেনেছে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে আমার। এই ব্যাপারটাতেই রবি কিন্তু ফ্লেচারের চেয়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬— এই চার বছর ভারতীয় দলের হয়ে দেশে, বিদেশে রবির সঙ্গে একাধিক সফরে ছিলাম। ওর সঙ্গে বহু ম্যাচ খেলেছি। তাই ও মানুষটা কেমন, খুব ভাল করে জানি। ওর ব্যক্তিত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট হল, ও লোকের সঙ্গে খুব সহজে মিশে যেতে পারে। সবাইকে সহজেই বন্ধু বানিয়ে নিতে পারে। কারও সঙ্গে আলাপ করার ইচ্ছা হলে ওর খুব একটা বেশি সময় লাগে না।

ফ্লেচারকে এতটা কাছ থেকে অবশ্য আমি চিনি না। তবে ওর সম্পর্কে বিভিন্ন ক্রিকেটারের কাছ থেকে শুনে যতটুকু ধারণা হয়েছে তাতে এটা বুঝেছি যে, রবির ঠিক উল্টো চরিত্রের মানুষ এই ফ্লেচার। এক জন গম্ভীর ক্রিকেট বোদ্ধা হিসেবে কোনও সিরিয়াস ক্রিকেটীয় আলোচনায় ও অনায়াসে মানিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এক ঝাঁক তাজা তরুণ ক্রিকেটারের সঙ্গে মিশে যেতে পারে কি না, এই নিয়ে সন্দেহ আছে আমার। আর বিদেশি কোচদের ক্ষেত্রে ভাষাটা তো বরাবরই ভারতীয় ক্রিকেটারদের কাছে একটা বড় সমস্যা। কোনও নতুন টেকনিক বা কনসেপ্ট পরিষ্কার করে বুঝতে হলে তাতে ভাষাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমাদের তরুণ ক্রিকেটাররা যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সমুদ্রে নামে, তখন বিদেশি কোচদের কাছ থেকে অনেক নতুন কিছু শিখতে চায়। কিন্তু ভাষার সমস্যার জন্য অনেকের পক্ষেই তা সম্ভব হয় না। তাই এক জন স্বদেশীয় অভিভাবক থাকলে এই সমস্যা আর থাকে না। রবির উপস্থিতিতে এই সমস্যার সমাধান হবে।

ধোনি এই ভারতীয় দলের দাদা। ওকে দলের ছেলেরা দাদার মতোই শ্রদ্ধা করে। ধোনিও দলের ছেলেদের ভাইয়ের মতোই স্নেহ করে বলে শুনেছি। তার সঙ্গে রবি শাস্ত্রীর মতো একজন বড়দা জুটে গেলে মন্দ কী? এই পরিবেশে ফ্লেচারের মতো এক জন রাশভারী ‘জ্যাঠামশাইয়ের’ একটু অসুবিধা হলেও হতে পারে। বিশ্বকাপে দেখবেন ধোনি-শাস্ত্রীর এই জুটিটাই ক্লিক করে যাবে। বিশ্বকাপের আগের কয়েক মাস একসঙ্গে ওরা কাটালে নিজেদের মধ্যে এমনিতেই একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়ে যাবে। তার উপর বিদেশে মানসিকতার সমস্যা তৈরি হলে তা সমাধানে ক্যাপ্টেন ও টিম ডিরেক্টর দু’জনেই যথেষ্ট পারদর্শী।

বিদেশে যেটা প্রধান সমস্যা হয়, তা হল নতুন পরিবেশ ও আবহাওয়ায় তরুণ ক্রিকেটাররা হকচকিয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানের রাস্তা খুঁজতে এমন এক জনকে দরকার, যে এই ব্যাপারে ওয়াকিবহাল এবং অভিজ্ঞ। রবি শাস্ত্রীই সেই লোক। অন্য দিকে ধোনি ভারতীয় ক্রিকেটারদের কাছে সব সময়ই প্রেরণা। তাই দু’জন যে যার নিজের কায়দায় দলকে চাঙ্গা ও মানসিক ভাবে শক্তিশালী করে রাখার কাজটা করতে পারবে বলেই আমার বিশ্বাস। বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে যেটা খুবই দরকার।

ফ্লেচার? ও বরং টেকনিকের দিকটা দেখুক। তার বাইরে ওর বেরনোর দরকার পড়বে না। আর সেটা ও পারবে বলেও মনে হয় না। আসল কাজটা করতে হবে ধোনি-শাস্ত্রী জুটিকেই।

বিশ্বকাপ পর্যন্ত কমেন্ট্রি বক্সে নেই শাস্ত্রী

টিম ডিরেক্টর হিসেবে তাঁর মেয়াদ ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় মিডিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে আর দেখা যাবে না রবি শাস্ত্রীকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টি শেষ হওয়ার পর থেকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত ধারাভাষ্য দেবেন না শাস্ত্রী, কলামও লিখবেন না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ চলাকালীন তাঁর মিডিয়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে থাকা নিয়ে বোর্ডের আপত্তি ছিল না। তারা শাস্ত্রীকে প্রস্তাব দেয়, অস্ট্রেলিয়ায় টিমের সঙ্গে যোগ দেওয়ার। কিন্তু নিজের এবং টিমের ভালর জন্য শাস্ত্রী নিজেই সিদ্ধান্ত নেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। ঘনিষ্ঠমহলে শাস্ত্রী নাকি বলেছেন, যে প্লেয়ারদের সঙ্গে তিনি কাজ করবেন তাঁদের সম্পর্কে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় মতামত দেওয়াটা ঠিক হবে না। তাঁদের সঙ্গে ড্রেসিংরুমে যোগ দেওয়ার আগে এ রকম কিছু হলে ক্রিকেটারদের সেটা সঠিক সিগন্যাল না-ও দিতে পারে। বোর্ড সূত্রের খবর, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজের টিম ম্যানেজার অমিতাভ চৌধুরি তাঁর রিপোর্টে শাস্ত্রীকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন। বলেছেন, ভারতীয় দলের জুনিয়রদের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়া দারুণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ashok malhotra ravi shastri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE