ট্রফি দিয়ে ফুরফুরে। মেরিন ড্রাইভে রফিক। রবিবার মুম্বইয়ে। ছবি: উত্পল সরকার
মাত্র একটা ম্যাচের একটা গোলই চব্বিশ ঘণ্টার এ দিক-ও দিক বদলে দিয়েছে মহম্মদ রফিকের জীবন!
গোল করে কলকাতাকে আট কোটির ট্রফি এনে দেওয়া সোদপুরের বঙ্গসন্তানকে মুম্বইয়ের পাঁচতারা হোটেলের লবিতে যিনিই দেখছেন, তিনিই শুভেচ্ছা জানিয়ে যাচ্ছেন। অন্যতম টিম মালিক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, দলের কোচ আন্তোনিও হাবাস তো ফাইনালের পরেই নতুন মহানায়ককে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। হোটেলের লবিতে ফেডারেশন সচিব কুশল দাস থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত দত্ত, আই এম বিজয়ন থেকে ফাইনালে তাঁর প্রতিপক্ষ শিবিরের প্রধান অস্ত্র মেহতাব হোসেনসবাইকে দেখলাম শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন রফিককে।
যাঁর কর্নার থেকে রফিকের অসাধারণ হেড, সেই পদানিও টিম বাসে ওঠার আগে তাঁকে রসিকতা করে গেলেন, “ওদের গোলকিপার জেমস লম্বা বলে দ্বিতীয় পোস্টে না তুলে প্রথম পোস্টে তোমাকে লক্ষ্য করে তুলেছিলাম বলটা। দারুণ হেডটা করেছ ভাই। না হলে তো ম্যাচটার পরের মিনিটেই একস্ট্রা টাইমে চলে যাওয়ার কথা। কে জানে হয়তো টাইব্রেকারেও!” আসছে প্রচুর এসএমএস। ফোন। সাফল্যের সেই আনন্দ পোহাতে-পোহাতে ফাইনালে কলকাতার ম্যাচ উইনার বলে দিলেন, “আমার সঙ্গে কলকাতার চুক্তি এক বছরের। পরের বার ওরা নিলে এখানেই খেলব। হাবাসের কোচিংয়ে আবার খেলার ইচ্ছে আছে।”
এ মরসুমেই ইস্টবেঙ্গলে সই করেছেন রফিক। গত বছর ইউনাইটেডের হয়ে খেলেছেন অনেক ম্যাচ। সেই রফিককে আইএসএলে ফুটবলার নিলামের সময় দলে নেওয়ায় প্রচুর সমালোচনা হয়েছিল কলকাতার সহকারী কোচ হোসে ব্যারেটোর। হাবাসের দাপটে একেবারে কোণে পড়ে থাকা এবং টিমের আলোর নীচ থেকে কার্যত ছিটকে যাওয়া ব্রাজিলিয়ানকে কিন্তু ভোলেননি রফিক। বলছিলেন, “ব্যারেটো এ দেশের ক্লাবে খেলা সবচেয়ে সফল বিদেশি ফুটবলার। ওঁর মতো ফুটবলার আমাকে সে দিন বেছেছিলেন অন্যদের ছেড়ে। এ জন্য ওঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”
গার্সিয়া, হোফ্রে, বোরহা, ফিকরুকে নিয়েই হইচই হচ্ছিল। মহম্মদ রফিক সুযোগই পাচ্ছিলেন না দলে। সতেরো ম্যাচের মধ্যে মাত্র দু’টো মাচ খেলেছেন। তা-ও বদলি হিসাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর গোলেই চ্যাম্পিয়ন আটলেটিকো দে কলকাতা। সুযোগ পাচ্ছিলেন না বলে কোনও দুঃখ নেই এখন। “আমি বাংলার ছেলে। কলকাতা আমার গোলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এটা আমার ফুটবলার জীবনের এখনও পর্যন্ত সেরা সাফল্য বলতে পারেন। আর কোচ কোথায় খেলাবেন আমাকে? প্রচুর ফুটবলার। কিন্তু হাবাস স্যার বারবার আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। বলেছেন, সুযোগ পেলেই খেলাবেন। আমার প্রমাণ করার দরকার ছিল। সুযোগ পেয়েই প্রমাণ করেছি।”
বিকেলেই কলকাতা থেকে মাদ্রিদের বিমান ধরতে হবে বলে কোচ হাবাস-সহ স্প্যানিশ ফুটবলার ও অন্যান্য বিদেশি কোচিং স্টাফ সবাই সকালের বিমানে ফিরে গিয়েছেন সৌরভের শহরে। কিন্তু কিংশুক দেবনাথ, ক্লাইম্যাক্স লরেন্সদের সঙ্গে টিম হোটেলেই রয়ে গিয়েছেন রফিক। কারণ, জায়গা হয়নি ছত্রিশ সিটের চার্টার্ড বিমানে। দুপুর পর্যন্তও জানতে পারেননি ক’টার বিমানে বাড়ি ফিরবেন? কোন বিমান? হোটেলের লবিতেই নিজের কিট গোছাতে গোছাতে বলছিলেন, “আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এ বার ইস্টবেঙ্গলকে ফেড কাপ চ্যাম্পিয়ন করতে হবে। এই গোলটা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে বলতে পারেন। ইস্টবেঙ্গলে সেটা কাজে লাগবে। শুনছি ভারতীয় দলেও নতুন কোচ আসছেন। দেশের সিনিয়র টিমে খেলার স্বপ্ন আছে। যদি সুযোগ পাই।”
একটা স্বপ্ন শেষ করে ‘চ্যাম্পিয়ন’ মহম্মদ রফিক আবার নতুন স্বপ্নের সরণিতে ঢুকে পড়ছেন। একটা সাফল্যেই যে থেমে থাকতে চান না আটলেটিকো দে কলকাতার ফিনিক্স পাখি! ফিনিক্স-ই তো! আগুনের ভেতর থেকেই যেন বেঁচে উঠলেন রফিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy