Advertisement
E-Paper

বিশ্বাস হয় না, তিকিতাকা ছেড়ে দেবে স্পেন

দেল বস্কির টিম ব্রাজিল রওনা হওয়ার আগের সপ্তাহেই স্পেনে গিয়েছিলাম ছুটি কাটাতে। ডেনমার্কে আমার ক্লাবের সিজন শেষ হয়ে গিয়েছিল। কলকাতায় ফিরে আসার আগে তাই গিয়েছিলাম প্রিয় বার্সেলোনার ঘরের মাঠ ন্যুক্যাম্পে। দেওয়াল জুড়ে জাভি, বুস্কেতস, ইনিয়েস্তাদের ছবি। স্পনসর কাতার এয়ারলাইন্সের বিজ্ঞাপনেও বার্সার ফুটবলারদের ছবি ভর্তি। কিন্তু স্পেনের অন্য কোথাও বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের কোনও ছবি বা কাটআউট চোখে পড়েনি।

সুব্রত পাল

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০৩:৫৯

দেল বস্কির টিম ব্রাজিল রওনা হওয়ার আগের সপ্তাহেই স্পেনে গিয়েছিলাম ছুটি কাটাতে।

ডেনমার্কে আমার ক্লাবের সিজন শেষ হয়ে গিয়েছিল। কলকাতায় ফিরে আসার আগে তাই গিয়েছিলাম প্রিয় বার্সেলোনার ঘরের মাঠ ন্যুক্যাম্পে। দেওয়াল জুড়ে জাভি, বুস্কেতস, ইনিয়েস্তাদের ছবি। স্পনসর কাতার এয়ারলাইন্সের বিজ্ঞাপনেও বার্সার ফুটবলারদের ছবি ভর্তি। কিন্তু স্পেনের অন্য কোথাও বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের কোনও ছবি বা কাটআউট চোখে পড়েনি। হোটেলে বা আমরা যেখানে যেখানে গিয়েছিলাম, সেখানেও ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর টিম নিয়ে কোনও কথাবার্তা নেই। নেই কোনও আদিখ্যেতা বা উত্তেজনাও। কিছুটা অবাক হয়েছিলাম স্পেনের মানুষের মনোভাব দেখে। পরে মনে হল, হয়তো সবাই ধরেই নিয়েছে, এ বারও দেল বস্কির টিম কাপ নিয়ে ফিরবে।

চার বছর আগে বিশ্বকাপ, তার আগে আর পরে দু’বার ইউরো কাপ— পরপর টানা তিনটে টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন! পাঁচ বছর ধরে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর স্পেন। নিজেদের দলকে নিয়ে স্প্যানিশ জনতা হয়তো স্বপ্ন দেখছেন আমার মতোই। স্পেনে এটা আমার প্রথম যাওয়া নয়। পাঁচ বছর আগে বব (হাউটন) স্যারের আমলে ভারতীয় দলের শিবির হয়েছিল ওখানে। চুয়াল্লিশ দিন ছিলাম ন্যুক্যাম্পেই। একই হোটেলে আমাদের সঙ্গে থাকতেন বার্সেলোনার তখনকার দুই ফুটবলার ইব্রাহিমোভিচ এবং বোয়ান। ওদের সঙ্গে দেখা হত, কথাও। নানা বিষয়ে জানতে চাইতাম। এ বার স্পেনের ক্লাব ফুটবলের সিজন শেষ হয়ে গিয়েছে। আলবা, জাভি-রা বিশ্বকাপের শিবিরে। ফলে বার্সেলোনায় গিয়ে কারও দেখা পাইনি। যদি সুযোগ পেতাম তা হলে প্রশ্ন করার ইচ্ছে ছিল, দেল বস্কির টিমের গত পাঁচ বছর ধরে এক নম্বর থেকে যাওয়ার রসায়নটা কী? ব্রাজিল বিশ্বকাপে এটাই কি স্পেনের এগিয়ে থাকার কারণ?

গত বারের ফাইনালিস্টরা এ বার গ্রুপ লিগেই মুখোমুখি। এটা বেশ চমকপ্রদ ব্যাপার। স্বাভাবিক ভাবেই দেল বস্কি তাঁর অশ্বমেধের ঘোড়া ছোটাতে মরিয়া হবেন। আর নেদারল্যান্ডস গত বারের হারের মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করবে। বারো বছর পর আবার তাদের কোচ হয়ে এসেছেন লুই ফান গল। মোরিনহোর মেন্টর হিসেবে যিনি এক সময় ছিলেন বার্সায়।

আমার ধারণা, এই গ্রুপ থেকে যে দল রানার্স হবে, তাদের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা ব্রাজিলের। ফলে স্পেন বা নেদারল্যান্ডস, কেউই ম্যাচটা হারতে চাইবে না। সতর্ক থাকবেন দুই কোচই। তবে শেষ পর্যন্ত দু’দল যে মনোভাব নিয়েই নামুক, আমি চাইব খেলাটা ভাল হোক। গত বিশ্বকাপের ফাইনালের মতো যেন চোরাগোপ্তা মারামারি, লাল-হলুদ কার্ডের ভিড়ে ফুটবলটাই না হারিয়ে যায়!

দেল বস্কি বনাম লুই ফান গলের লড়াই মানেই একটা অন্য রকম যুদ্ধ। ট্যাকটিক্স আর বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবলের মিশেল। বলা যায়, গত বারের ফাইনালের রিপ্লেতে এ বার আমরা দেখতে পাব তিকিতাকা বনাম আলট্রা ডিভেন্সিভ ফুটবল। কারণ স্পেনের আক্রমণাত্মক ফুটবল আটকাতে শুধু কমলা জার্সিই নয়, সব দলই রক্ষণের দিকে বেশি নজর দেবে। পাল্টা আক্রমণে গিয়ে গোল করার চেষ্টা করবে। যদি নেদারল্যান্ডস কোচ আজ রাতে পাঁচ রক্ষণ নিয়ে স্পেনের বিরুদ্ধে নামেন, অবাক হব না।

গত বার স্পেন ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ‘ফলস নাইন’ খেলে। বিশ্ব ফুটবলের চিরাচরিত ধারণা বদলে দিয়ে কোনও সেন্টার ফরোয়ার্ড ছাড়াই ছয় মিডিওকে ব্যবহার করে ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন দেল বস্কি। ফাব্রেগাস ছিলেন ফলস নাইন অর্থাৎ ইনসাইড ফরোয়ার্ড। শোনা যাচ্ছে এ বার কোস্তাকে স্ট্রাইকার করে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলতে নামবে স্পেন। তা সত্ত্বেও তিকিতাকা বা পাসিং ফুটবল থেকে স্পেন পুরোপুরি বেরিয়ে আসবে বলে মনে হয় না। কারণ এখন এটাই তো স্পেন ঘরানা হয়ে গিয়েছে। বার্সা খেলছে, রিয়াল খেলছে। ক্লাবেরই তো সব ফুটবলার। সেটা রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যাবে জাতীয় দলে! পুরোপুরি ‘ফলস নাইন’ না খেলিয়ে হয়তো কিছুটা ডাইরেক্ট ফুটবল খেলবে স্পেন। কিন্তু তিকিতাকাকে মুছে দিয়ে নয়। কোস্তা অনেকটা ব্রাজিলীয় ঘরানার ফুটবলার। বলটা ধরে খেলতে পারেন। বল পায়ে এগোনোর সময় কাঁধ ব্যবহার করেন। অনুশীলন ম্যাচে ওঁকে আর তোরেসকে খেলিয়ে দেখে নিয়েছেন স্পেন কোচ। দশ রকম ফর্মেশন নাকি তৈরি করে রেখেছেন দেল বস্কি। দেখার, কোনটা তিনি প্রয়োগ করেন গত বারের রানার্সদের বিরুদ্ধে।

এ বারের স্পেন টিমটা কার্যত গত বারের চ্যাম্পিয়ন দলই। পরিবর্তন সামান্যই। এই টিমটা বহু দিন একসঙ্গে খেলছে। সেই আমাদের আর্মান্দো কোলাসোর আমলের ডেম্পোর মতো। একসঙ্গে একটা টিম বহুদিন থাকলে সাফল্য আসতে বাধ্য। কারণ কাসিয়াস, পিকে, জাভি, ইনিয়েস্তারা একে অন্যকে হাতের তেলোর মতো চেনেন। এ বারের টিমটাতেও বার্সার ফুটবলার বেশি। গত বারের মতো। সঙ্গে রয়েছেন রিয়াল, আটলেটিকো মাদ্রিদের ফুটবলাররা। যাঁরা স্প্যানিশ লিগে একসঙ্গে নিয়মিত খেলেন। এটা বাড়তি সুবিধে স্পেনের।

স্পেন দলটায় সিনিয়র ফুটবলার অনেক। নেদারল্যান্ডসের যা নেই। এই বিশ্বকাপ খেলেই হয়তো রবিন ফান পার্সি অবসর নেবেন। আর্জেন রবেন, স্নাইডারের মতো দু’একজন ছাড়া বাকি সবাই নতুন। গত বার কমলা জার্সি পরে রানার্স হওয়া বেশির ভাগই অবসর নিয়েছেন। তবে নেদারল্যান্ডসের প্লাস পয়েন্ট তাদের অভিজ্ঞ কোচ। বারো বছর আগে লুই ফান গল দায়িত্ব নিয়ে কিছু করতে পারেননি। এ বার তাঁর শাপমোচনের পালা। তবে ‘ইউরোপের ব্রাজিল’ বলা হয় যে টিমকে, সেই নেদারল্যান্ডসের গত দশ-পনেরো বছর তেমন কোনও সাফল্য নেই। দু’এক বার দু’একটা টুর্নামেন্টে রানার্স হওয়া ছাড়া।

স্পেনের একটা বড় সুবিধে, তাদের গোলে কাসিয়াস থাকবেন। এটা ওঁর চার নম্বর বিশ্বকাপ। শ’দেড়েক ম্যাচ খেলে ফেলেছেন স্পেনের গোলে দাঁড়িয়ে। বিশ্ব ফুটবলে ট্রেন্ড হল, কিপাররা নায়ক হন বেশি বয়সে এসে। তিরিশ বা তার পরে। বুফোঁ, অলিভার কান, পিটার শিল্টন, ফান ডার সার-দের সাফল্যও এসেছে তিরিশের কোটা পেরিয়ে। নিজে কিপার বলেই জানি, একজন অভিজ্ঞ কিপার পিছনে থাকলে যে কোনও টিম চল্লিশ শতাংশ এগিয়ে থাকে। স্পেন সেই সুবিধেটা পাবে।

এই ম্যাচটা নক আউট হলে স্পেনকে এগিয়ে রাখতাম। গ্রুপ লিগের প্রথম ম্যাচ তাই বলছি ফিফটি-ফিফটি। কারণ, যে কোনও টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ জেতা কঠিন। দেল বস্কি কী ভাবে শুরু করেন, সেটা দেখার জন্য আমার মতো মুখিয়ে থাকবে ফুটবল বিশ্ব।

উদ্বোধনের আগেই উত্তপ্ত শহর
সংবাদ সংস্থা • সাও পাওলো


বিক্ষোভের আগুন। সাও পাওলোয়। ছবি: রয়টার্স।

বিশ্বকাপের প্রথম বাঁশি বাজার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে আগুন জ্বলল সাও পাওলোর রাস্তায়। চলল রবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস। মার্কিন সংবাদ সংস্থা সিএনএন-এর দুই কর্মী-সহ আহত অন্তত পাঁচ। বিশ্বকাপ নিয়ে পেলের দেশ উত্তপ্ত ছিল বহুদিন ধরেই। এই মহাযজ্ঞে যে কোটি কোটি ডলার খরচ হচ্ছে, সেটা দেশবাসীর জীবনধারণের ন্যূনতম চাহিদাগুলো পূরণের ক্ষেত্রে কেন খরচ হবে না মূলত এই দাবি নিয়েই লাগাতার বিক্ষোভ চলেছে ব্রাজিলে। আজ দাঙ্গা-পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। শ’খানেক লোকের একটি জমায়েতকে প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও শব্দ-বোমা ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। ঘণ্টা দুয়েক পর দু’দলে ভাগ হয়ে ফের জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। যে এরিনা কোরিন্থিয়ান্স স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ হল, সেখানে পৌঁছনোর একটি প্রধান রাস্তা আটকে দেন তাঁরা। রাস্তায় জঞ্জাল জড়ো করে আগুন লাগানো হয়। শুরু হয় পুলিশকে লক্ষ করে ইট বৃষ্টি। শেষ পর্যন্ত প্রথমে লাঠি ও পরে শূন্যে রবার বুলেট চালায় পুলিশ।

subrata pal tikitaka spain fifaworldcup fifa world cup 2014
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy