Advertisement
০১ মে ২০২৪
কাপ ছুঁতে ধ্যানমগ্ন বার্সার দুই সতীর্থ

স্কোলারির চালে নেইমারের কান্না

এক যুগ আগে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়া রোনাল্ডোর চোখে তিনি এ বারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের প্রধান আশা-ভরসা।

কান্নায় ভেঙে পড়লেন নেইমার।

কান্নায় ভেঙে পড়লেন নেইমার।

সংবাদ সংস্থা
রিও ডি জেনেইরো শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৪ ০৩:৪৬
Share: Save:

এক যুগ আগে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়া রোনাল্ডোর চোখে তিনি এ বারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের প্রধান আশা-ভরসা।

তেরোসোপোলিসে চলা সেলেকাও ব্রিগেডের বিশ্বকাপ শিবির থেকে বার্সেলোনায় তাঁর দেশোয়ালি সতীর্থ দানি আলভেজও তাঁকে বলছেন, “বিশ্বকাপে আমাদের বিশেষ অস্ত্র।”

আর তিনি, নেইমার ডি সিলভা স্যান্টোস জুনিয়র, তাঁর বিশ্বকাপ প্রস্তুতির মাঝে ভেঙে পড়লেন কান্নায়।

এ দিনই নেইমারদের অনুশীলন দেখতে এসেছিলেন বছর সতেরোর সমর্থক লিওনার্দো মার্কেস। দুরারোগ্য অসুখে চলাফেরা করতে না পারায় হুইলচেয়ারই তাঁর একমাত্র সম্বল। অনুশীলন শুরুর আগে বিশেষ এই সমর্থককে দেখেই তাঁকে মাঠের মাঝখানে এনে নেইমারদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন ব্রাজিল কোচ লুই ফিলিপ স্কোলারি। স্বপ্নের নায়কদের হাতের সামনে পেয়ে ছবি আর সই শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন লিওনার্দো। এক সময় দেখা যায় দাভিদ লুইজ হুইলচেয়ার থেকে লিওনার্দোকে নামিয়ে সাইডলাইনে নিয়ে গিয়ে বসিয়েছেন। চলছে বল জাগলিংয়ের পালা। নেইমার সামনে আসতেই তাঁর হাতটা চেপে ধরে বলেন, “দেশের মাটিতে বিশ্বকাপটা জেতাও। তা হলে শরীরের সব যন্ত্রণা ভুলে যাব।” যা শোনার পর থেকেই গোটা ট্রেনিং সেশনে চোখের জল মুছতে দেখা যায় ব্রাজিলের ভরসাকে। পরে থিয়াগো সিলভা, দাভিদ লুইজরা শান্ত করেন নেইমারকে।

তেরোসোপলিসে ব্যাকভলি ঝালানো

এমনিতেই এ বারের বিশ্বকাপে নেইমারের উপর প্রত্যাশার পাহাড়। লিওনার্দোর আবদারে কি সেটা আরও বেড়ে গেল? ব্রাজিল শিবির মানতে নারাজ। বরং দানি আলভেজদের দাবি, এতে বিশ্বকাপে ভাল পারফর্ম করার জন্য আরও একাগ্র হবেন নেইমার। সতীর্থরা যাই বলুন না কেন, এ বারের বিশ্বকাপ আক্ষরিক অর্থেই বছর বাইশের এই ব্রাজিলীয় ফুটবলারের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ রোনাল্ডিনহো, কাকা, রবিনহোরা দলে না থাকায় প্রত্যাশার স্পটলাইট সবচেয়ে বেশি তাঁর উপরেই। বছরের শুরুতে দেশের জার্সি গায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক দিয়ে শুরু করলেও বার্সেলোনার জার্সিতে সে ভাবে দাগ কাটতে না পারার সমালোচনা বয়ে বেড়াচ্ছেন নেইমার। বিশ্বকাপ আয়োজনের বিরোধী গোষ্ঠীর প্ল্যাকার্ডেও তাঁকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে, “নেইমারের চেয়ে একজন অধ্যাপকের মূল্য অনেক বেশি।” ব্রাজিলের দশ নম্বর জার্সির মালিক জানেন, ঘরের মাটিতে ষষ্ঠ বার বিশ্বকাপ এনে দিতে পারলেই পেলে-গ্যারিঞ্চা-রোমারিও-রোনাল্ডোদের কক্ষপথে ঢুকে পড়বেন।

ব্রাজিলীয় সাংবাদিকদের অনুমান, এ রকম প্রেসার কুকার সিচুয়েশনে নেইমারকে চাগিয়ে দেওয়ার জন্যই লিওনার্দোকে প্রস্তুতি পর্বে হাজির করার নেপথ্য-নায়ক স্বয়ং স্কোলারি। যে ভাবে ২০০২ বিশ্বকাপের আগে রোনাল্ডো-রিভাল্ডোদের দারিদ্রক্লিষ্ট ব্রাজিলের শৈশব-বার্ধক্যের ছবি দেখিয়ে টিম মিটিংয়ে বলতেন, “তোমরা বিশ্বকাপ জিতলে এই মানুষগুলো এক দিনের জন্য হলেও শান্তি পাবে। তারই চেষ্টা করো।” লিওনার্দোর আগমন তারই সিক্যুয়েল বলে মনে করছে ব্রাজিলীয় মিডিয়ার একাংশ।

প্রতিবন্ধী শিশুর সান্নিধ্যে শুক্রবার নেইমার।

ব্রাজিল অনুশীলনে খোলামেলা পরিবেশ রেখেছেন স্কোলারি। ফেন্সিং টপকে সমর্থকদের মাঝে গিয়ে সই দিয়ে আসার জন্য জুলিও সিজারকে বকাঝকা করার বদলে ফুটবল জনতাকে এককাট্টা করার জন্য উৎসাহও দিচ্ছেন ‘বিগ ফিল’। এমনিতেই স্কোলারির যোগদানের পর এখনও পর্যন্ত ব্রাজিলের পারফরম্যান্স বেশ ঝলমলে। ২০ ম্যাচে ১৪ জয়, চারটে ড্র। গত বছর কনফেডারেশনস কাপে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে সেলেকাওরা করেছিল ১৪ গোল। যার মধ্যে ফাইনাল-সহ তিন ম্যাচেই শুরুর দশ মিনিটের মধ্যে গোল করেছিল পেলের দেশ। বিপক্ষ ব্রাজিলের নেটে বল জড়াতে পেরেছিল মাত্র তিন বার। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে বেশ কয়েকটা প্রশ্ন ভাবাচ্ছে স্কোলারিকেও। যেমন, হাল্ক বা নেইমার ভিতরের দিকে কাট করে ঢোকার সময় আটকে গেলে কী হবে? মার্সেলো এবং দানি আলভেজ দুই সাইডব্যাক ওভারল্যাপে গিয়ে ডিফেন্সে নামতে যেন দেরি না করে। এই সব ব্যাপার ঝালিয়ে নিতেই মঙ্গলবার পানামার বিরুদ্ধে ওয়ার্ম আপ ম্যাচ খেলতে নামছে ব্রাজিল। সেই ম্যাচে কাদের নিয়ে দল গড়বেন, তার আভাস এখনও দেননি স্কোলারি। তবে ৬ জুন সার্বিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম দলকেই খেলানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্রাজিল কোচ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

fifa world cup neymar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE