মঙ্গলবারের রামকুমার রামনাথন। কলকাতা ওপেনে। ছবি: উৎপল সরকার।
ধরুন এক জন প্লেয়ার দু’দিন আগেই ফাইনালে এক সেট আর পরের সেটেও একটা ব্রেকে পিছিয়ে পরেও দুধর্র্র্ষ কামব্যাকে চূড়ান্ত সেট প্রতিদ্বন্দ্বীকে লাভ-এ উড়িয়ে টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু পরের টুর্নামেন্টে প্রথম রাউন্ডেই নির্ণায়ক সেটে ৪-১ এগিয়েও চরম অপ্রত্যাশিত ছিটকে গেল। পরে সে দিনই তাকে গুরুত্বহীন ডাবলসে নামতে হল। তখন ঠিক কী মনে হয় তার?
স্বয়ং সেই চরিত্রের মুখেই শোনা যাক। “সব মিলিয়ে ঘেঁটে যাওয়া অবস্থা হয় নিজের,” মঙ্গল-বিকেলে সল্ট লেকের বিটিএ কমপ্লেক্সে বসে বলে দিলেন দেশের এক নম্বর সিঙ্গলস তারকা সোমদেব দেববর্মন। যিনি তখনই সুপার টাইব্রেকে ডাবলস ম্যাচ জিতলেও তার ঘণ্টা দুয়েক আগে সিঙ্গলস থেকে ছিটকে গিয়েছেন প্রথম ম্যাচেই রামকুমার রামনাথনের কাছে ৬-৪, ৩-৬, ৪-৬ হেরে। “প্রথমে তো ভেবেছিলাম ডাবলসে নামব না। কিন্তু জীবন (কলকাতা ওপেন চ্যালেঞ্জারে সোমদেবের ডাবলস পার্টনার জীবন নেদুনচেঝিয়ান) খুব ভাল ছেলে। আমার ভাল বন্ধু। ওকে ডোবাতে চাইনি,” টেবিলে গুঁজে রাখা মাথা তুলে কথাগুলো বলার সময়েও সোমদেবের চোখমুখে হতাশার ঘন প্রলেপ। “না, আমার কোনও অজুহাতের জায়গা নেই। রবিবার দিল্লি চ্যালেঞ্জার চ্যাম্পিয়ন হয়ে গভীর রাতে কলকাতায় পৌঁছেছি। পরের দিন ভাল প্র্যাকটিস হয়নি। কিন্তু এ সব তো এটিপি ট্যুরে সপ্তাহের পর সপ্তাহ দেশে-বিদেশে টেনিস পেশাদারের খেলতে গিয়ে মাঝেমধ্যে হয়ই।”
আসলে তিরিশের সোমদেবের তাঁর চেয়ে বছর দশেকের ছোট রামকুমারের হাতে হারের ভেতর যেন ভারতীয় টেনিসে পুরনোকে সরিয়ে নতুন প্রজন্মের আগমন-বার্তা ঘোষিত হল। জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, “সোমদেবের দিন ফুরিয়ে আসছে। তা ছাড়া ওর হাতে কোনও কিলিং শট না থেকে শুধু ওই রিট্রিভার গোছের টেনিস খেলে বেশি ম্যাচ জেতা কঠিন। রামকুমার ওর বিরুদ্ধে খেলতে পছন্দ করে। তিনবারে দু’বার হারাল।”
চেন্নাইয়ে ত্যাগরাজনগরের ছ’ফুট দু’ইঞ্চির রামকুমার অবশ্য বললেন, “ম্যাচ যে অবস্থাই থাক, প্রত্যেকটা পয়েন্ট খেলার সময় আমার নাছোড় অ্যাটির্টিউড সাফল্যের আসল কারণ।” সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্যেই বাবাকে ফোনে সুখবরটা দেওয়ার চেষ্টা করে মোবাইল নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় তাঁকে বিরক্ত দেখাচ্ছিল। যিনি কিনা পাঁচ বছরের বাচ্চার হাতে টেনিস র্যাকেট তুলে দিয়েছিলেন। তবে রামনাথন কৃষ্ণনের শহরের নতুন রামনাথনের আসল টেনিস-পৃষ্ঠপোষক তামিলনাড়ু টেনিস সংস্থার সর্বেসর্বা, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের ছেলে কার্তি চিদম্বরম। অধুনা আইএমজি-র আর্থিক আনুকূল্যও নাকি সেই জেরেই পাচ্ছেন রামকুমার। বার্সেলোনায় সের্জিও কাসালের অ্যাকাডেমিতে গত চার বছর ট্রেনিং করা যে টিনএজার সম্পর্কে জয়দীপ বলছেন, “ভবিষ্যতে ডেভিস কাপে আমাদের এক নম্বর সিঙ্গলস প্লেয়ার।”
বর্তমান দু’নম্বর য়ুকি ভামব্রিও অবশ্য ফর্মে আছেন। দিল্লি ওপেন রানার আপ এখানে প্রি-কোয়ার্টারে উঠলেন স্পেনের লোপেজকে ৬-২, ৬-২ অনায়াস হারিয়ে। কলকাতা ওপেনের সর্বোচ্চ টিআরপি সোমদেবকে এখন ‘সান্ত্বনা পুরস্কার’ (বুধবার তাঁকে সাউথ ক্লাব আজীবন সদস্যপদ দিচ্ছে) নিয়ে শহর ছাড়তে হবে। এ বার দেখার ৫০ হাজার ডলার পুরস্কারমূল্যের টুর্নামেন্টে এখনও টিকে থাকা মাত্র তিন ভারতীয় (অন্য জন সনম সিংহ) চূড়ান্ত রাউন্ড পর্যন্ত স্থানীয় আগ্রহ জাগিয়ে রাখতে পারেন কি না। দিল্লিতে কিন্তু ‘অল ইন্ডিয়ান’ ফাইনাল হয়েছিল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy