Advertisement
E-Paper

হাবাসের ‘ঘুষি’ই আজ তাতাচ্ছে জিকোর টিমকে

আন্তোনিও হাবাস যখন টিম বাস থেকে মাঠে নামলেন তখন ঠিকরে বেরোচ্ছিল ‘চাঁদের হাসি’। আর যখন অনুশীলন সেরে বেরোলেন তখন কপালের ভাঁজ দেখে মনে হল স্প্যানিশ কোচের রাতের ঘুমটা গেল। মুখটা গম্ভীর। যেন অমাবস্যা নেমেছে। অনুশীলনে নামার সময় বললেন, “চেন্নাইয়ান টু নিল। গুড ভেরি গুড রেজাল্ট।” আর টিম হোটেলে ফেরার সময় স্প্যানিশ কোচের মুখ থেকে বেরোল, “টাফ, ভেরি টাফ। ২-২ ব্যাড রেজাল্ট।” হোটেলে ফিরে কেরল ব্লাস্টার্স ১-০ জিতছে দেখার পর কী বলেছেন লুই গার্সিয়াদের কোচ।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৯
ক্লাব ফুটবলে তাঁর শুরু ব্রাজিলের যে ক্লাবে তার জার্সির রংও লাল-হলুদ। ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে পা দিয়ে মঙ্গলবার এ কথাই জানালেন এফসি গোয়ার কোচ জিকো। ব্রাজিলীয় মহাতারকার সংবর্ধনায় স্মারক তুলে দিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ আর্মান্দো কোলাসো।  ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

ক্লাব ফুটবলে তাঁর শুরু ব্রাজিলের যে ক্লাবে তার জার্সির রংও লাল-হলুদ। ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে পা দিয়ে মঙ্গলবার এ কথাই জানালেন এফসি গোয়ার কোচ জিকো। ব্রাজিলীয় মহাতারকার সংবর্ধনায় স্মারক তুলে দিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ আর্মান্দো কোলাসো। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

আন্তোনিও হাবাস যখন টিম বাস থেকে মাঠে নামলেন তখন ঠিকরে বেরোচ্ছিল ‘চাঁদের হাসি’। আর যখন অনুশীলন সেরে বেরোলেন তখন কপালের ভাঁজ দেখে মনে হল স্প্যানিশ কোচের রাতের ঘুমটা গেল। মুখটা গম্ভীর। যেন অমাবস্যা নেমেছে।

অনুশীলনে নামার সময় বললেন, “চেন্নাইয়ান টু নিল। গুড ভেরি গুড রেজাল্ট।” আর টিম হোটেলে ফেরার সময় স্প্যানিশ কোচের মুখ থেকে বেরোল, “টাফ, ভেরি টাফ। ২-২ ব্যাড রেজাল্ট।” হোটেলে ফিরে কেরল ব্লাস্টার্স ১-০ জিতছে দেখার পর কী বলেছেন লুই গার্সিয়াদের কোচ। অতি ঘনিষ্ঠ এক কর্তা জানালেন, সজোরে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর লবিতে এসে একাই পায়চারি করেছেন। বিড়বিড় করেছেন।

বিকেল থেকে রাত—সাড়ে চার ঘণ্টার দুটি ম্যাচের ফল আইএসএলের লিগ টেবিলের ভুগোলটাই বদলে দিয়েছে। নাটকীয় ভাবে ওলট-পালট করে দিয়েছে সব হিসেব নিকেশ। দশ রাউন্ড পর্যন্ত শীর্ষে থাকা আটলেটিকো দে কলকাতা ডুবন্ত মানুষের মতোই মুখ তুলে এখন অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেমিফাইনালে যাওয়ার অক্সিজেন। চুলচেরা নিখুঁত হিসেব এবং সহজ অঙ্ক—অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকা জিকোর এফসি গোয়ার সঙ্গে ড্র করতেই হবে বাঁচতে গেলে। যা বেশ কঠিন। সত্যিই কঠিন। যদি না দয়া করে ব্রাজিলিয়ান লেজেন্ড নিজের দু’নম্বর দল খেলান। না হলে, বাক্স প্যাটরা গুটিয়ে বাড়ি চল বাছা।

ক্রিকেট আইপিএলের প্রথম বছরে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের টিম শেষ করেছিল ছয়-এ। আজ বুধবার তাঁর ফুটবল টিমেরও প্রথম মরসুমে কি একই পরিণতি হবে? না কি শেষ চারের শৃঙ্গ ছুঁয়ে ভাগ্যের চাকা অন্যদিকে ঘোরাবে সৌরভের এখনকার ক্লাব? যুবভারতীর কোণে কোণে পয়া, অপয়ার নানা গল্প ঘুরপাক খাচ্ছিল। সবাই কাজ করছে, কিন্তু তাতে যেন প্রাণ নেই। ব্যাপারটা অনেকটা সেই বিয়েবাড়ির মতো-- যেখানে খাবার-মালা-চেয়ার-টেবিল সব আছে আপ্যায়নের জন্য। কিন্তু বরের দেখা নেই। টেনশন সর্বত্র—যদি না আসে, যদি সব উৎসব শেষ হয়ে যায়!

কঠিনতম ম্যাচের বাইশ ঘণ্টা আগে মাঠে অনুশীলন চলছে, গার্সিয়া, ফিকরু, অর্ণব, বলজিৎরা বল নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করছেন—কিন্তু সেদিকে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই টিমের সঙ্গে থাকা কর্তাদের। হয়তো কোচেরও। হাতের মোবাইলে ইন্টারনেট আছে। কিন্তু কেউ খুলছেন না, যদি খারাপ কিছু হয়। চেন্নাইয়ের ম্যাচের ফল জানতে কখনও ড্রেসিংরুমে দৌড়ে আসছেন দলের ম্যানেজার, কখনও হাবাস স্বয়ং। যা গত দু’মাসে কখনও কোনও ম্যাচে দেখা যায়নি। আট দলের লিগে শেষ মুহূর্তের মজা তো এটাই। আটলেটিকোর অনুশীলনের সময় চেন্নাইয়ান-দিল্লি খেলা হচ্ছিল। সেটা ২-২। আর হোটেলে ফিরে ডিনারের আগে আরও বড় দুঃসংবাদ। কেরল জিতে গেছে। হাবাস ঘনিষ্ঠ এক কর্তা রাতে ফোন করে জানতে চাইছিলেন, “আচ্ছা আমাদের টিমটার শেষ পর্যন্ত এই হাল হল কেন বলুন তো?” এ যেন মৃত্যুর আগেই শ্রাদ্ধের প্রস্তুতি! তাঁকে বোঝানো যাচ্ছিল না, গোয়ার সঙ্গে না হারলেই তো কেল্লাফতে। সাংবাদিকদেরও তো সেটাই বলছিলেন আটলেটিকো কোচ, “অন্য ম্যাচে কী হচ্ছে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। কাল ভাল ফল করে শেষ চারে যেতে চাইছি।”

দশ বছর আগে এই মাঠ প্রথম দেখেছিল জিকোকে। তারপর আবার। চুলে বেশি পাক ধরলেও ব্রাজিলিয়ান কোচ একই রকম রয়ে গিয়েছেন। হাসিখুশি। কিন্তু এক ঘণ্টার অনুশীলন সেশনে তাঁকে দেখে মনে হল, অনেক বেশি সিরিয়াস। যে ম্যাচ না জিতলেও কোনও ক্ষতি নেই তার আগেও নাগাড়ে ফ্রিকিক থেকে পেনাল্টি, সিচুয়েশন মুভমেন্ট করিয়ে গেলেন। এবং সবচেয়ে যা শিক্ষার তা হল, নিজে তো বটেই তাঁর সঙ্গে আসা দোভাষী, মিডিয়া ম্যানেজার সবাইকে দাঁড় করালেন ফ্রিকিকের সময় ওয়াল তুলতে। টিমে সংবদ্ধতা বাড়াতে জিকোর এই চমকপ্রদ রসায়ন দেখতে মাঠে অবশ্য আসেননি বাংলার কোনও কোচই। মারগাওতে জিকোর কোচিং দেখার জন্য আর্মান্দো কোলাসো, ডেরেক পেরিরা-সহ অন্তত জনা বারো কোচ নিয়মিত এসে বসে থাকতেন। প্রতিদিন ‘চক্রান্ত চক্রান্ত, আমাদের কোচিং করতে দেওয়া হচ্ছে না কেন’ বলে হাহুতাশ করে গলা ফাটানো সেই বাংলার কোচেরা কোথায়? গোয়ার কোচেরা কেন সফল ও কাজ পান আর বাংলার কোচেরা কেন বেকার হচ্ছেন তা দেখিয়ে দেয় এই পার্থক্য। বিশাল স্টেডিয়ামে পাওয়া গেল মাত্র দু’জনকে। প্রাক্তন ফুটবলার অচিন্ত্য বেলেল আর মোহনবাগানের লালকমল ভৌমিক। জিকোর অনুশীলন দেখে বাগান মিডিও স্বগোতোক্তির ঢংয়েই বললেন, “টিমটার গভীরতা দেখেছেন। আক্রমণে কত বৈচিত্র।” জিকো সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলছিলেন, “৫ ম্যাচে ১ পয়েন্ট থেকে সেমিফাইনালে পৌঁছোন এবং সেটা এক ম্যাচ বাকি থাকতেই। আমার কোচিং জীবনের স্মরণীয় ঘটনা এটা।”

কিন্তু সেটা আরও স্মরণীয় করতে কি গোয়া কোচ পুরো টিম নামাবেন আজ? চাইছেন কি দেড় মাস আগের ঘরের মাঠের মধুর প্রতিশোধ তুলতে? না কি বিশ্রাম দেবেন প্রথম একাদশের কিছু ফুটবলারকে? রবার্ট পিরেজ, র্যান্টি মার্টিন্স, ক্লিফোর্ড মিরান্ডাদের অনুশীলন দেখে সেটা বোঝা গেল না। তবে গোয়ায় গিয়ে আটলেটিকো কোচ হাবাসের সেই ‘ঘুষি মারার’ ঘটনা যে এখনও ভোলেননি রবার্ট পিরেজ বা তাঁর সঙ্গীরা তা বোঝা গেল একটা দৃশ্যে।

জিকোর টিম যখন ড্রেসিংরুম থেকে টিম বাসের দিকে যাচ্ছে, তখন মাঠে অনুশীলন করতে যাচ্ছিলেন লুই গার্সিয়া, বোরহা, হোফ্রেরা। তাঁদের দেখে ফ্রান্সকে বিশ্বকাপ দেওয়া জিনেদিন জিদানের সতীর্থ পিরেস নিজেই এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন গার্সিয়াদের। পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলেন হাবাস। কেউ তাঁর দিকে হাতও বাড়ালেন না। মুখ ফিরিয়ে নিলেন জিকোও। হাবাস বলছিলেন, “আমি পুরানো কথা ভুলে গেছি। সামনের দিকে তাকাতে চাই।” গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে বিতর্কিত ঘটনা সামনে এনে বিপক্ষকে মোটিভেট করতে দিতে চান না বোঝাই যায় কথা শুনে।

কিন্তু তাতে মনে হল ভুলছে না গোয়া। সুতোর উপর ঝুলতে থাকা আটলেটিকো দে কলকাতার বিরুদ্ধে হাবাসের সেই ‘ঘুষি-ই’ যে আজ মোটিভেশন জিকোর টিমের।

zico isl ratan chakraborty habas antonio lopez habas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy