Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ছোট্ট লাল এই পোকা কামড়ালে মৃত্যুও হতে পারে, সতর্কতা রাজ্যে

দু’বছর আগে পোকাবাহিত রোগ ‘স্ক্রাব টাইফাসের’ বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে নির্দেশিকা দিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। কিন্তু স্ক্রাব টাইফাস বাড়ছে কেন, অধরাই রয়ে গিয়েছে উত্তর।

এই ট্রম্বিকিউলিড মাইটস-ই স্ক্রাব টাইফাস রোগের বাহক।

এই ট্রম্বিকিউলিড মাইটস-ই স্ক্রাব টাইফাস রোগের বাহক।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪১
Share: Save:

পুজোর আগে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন কলেজের কর্মী আবীরলাল মণ্ডল। ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণ মিশনের ভিতরে বাইক চালিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর চোখের পাতায় কামড় দেয় একটি পোকা (মাইটস)। পরের দিন থেকে ধুম জ্বর। ১৩ দিনের মাথায় শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় ইএম বাইপাসে মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তত দিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁর কিডনি, ফুসফুস এবং লিভার।

দু’বছর আগে পোকাবাহিত রোগ ‘স্ক্রাব টাইফাসের’ বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে নির্দেশিকা দিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। কিন্তু স্ক্রাব টাইফাস বাড়ছে কেন, অধরাই রয়ে গিয়েছে উত্তর।

চিকিৎসকদের মতে, ‘ট্রম্বিকিউলিড মাইটস’ নামে লাল রঙের একটি ছোট্ট পোকার কামড়ে শরীরে ব্যাক্টিরিয়ার অনুপ্রবেশ ঘটে। প্রবল জ্বর আসে স্ক্রাব টাইফাস আক্রান্তের। সময়ে রোগ ধরা না-পড়লে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক জ্যোতির্ময় পাল বলেন, ‘‘জ্বরের সঙ্গে মাথাব্যথা হয়। বমি হয়। মূল লক্ষণ ‘ফিভার উইথ কনফিউশন’। ‘কনফিউশন’ মানে ঘোর-ঘোর ভাবের মধ্যে পরিচিতদের চিনতে অসুবিধা হয় রোগীর।’’

আরও পড়ুন: ডাইনোসর নাকি! কঙ্কাল ঘিরে চাঞ্চল্য আমডাঙায়

‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেল্‌থ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস’ বা নিমহ্যানসের সঙ্গে যৌথ সমীক্ষার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য ভবন ২০১৭ সালে এক নির্দেশিকায় জানিয়েছিল, মাইটস-বাহিত রোগ নিয়ে রাজ্যে কোনও তথ্য নেই। আবহাওয়া বদলের পাশাপাশি কলকাতার শহরতলিতে আবাসন তৈরির হিড়িক এই রোগের কারণ হতে পারে। ২০১৯-এও সম্ভাবনাতেই আটকে রয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। জাল বিস্তার করে চলেছে স্ক্রাব টাইফাস।

‘‘পোকার কামড়ে যে এমন রোগ হতে পারে, তা জানা ছিল না,’’ বলছেন নরেন্দ্রপুরের কলেজকর্মী আবীরবাবু। হাওড়ার নান্টু সাহার বক্তব্য একই রকম। মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘‘শহরাঞ্চলে এই রোগ যে-ভাবে বাড়ছে, তা সত্যিই উদ্বেগের। ‘অজানা জ্বর’-এর সঙ্গে এর যোগ আছে কি না, দেখা দরকার। জ্বর সাত দিনের বেশি থাকলেই স্ক্রাব টাইফাসের পরীক্ষা করানো উচিত।’’

স্ক্রাব টাইফাস কোথায় হচ্ছে, কী ভাবে হচ্ছে, জীবাণুর দাপট রোধে কী করণীয়— এর উত্তর পাওয়া জরুরি বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘নেগলেক্টেড ট্রপিক্যাল ডিজ়িজ়ের’ কো-অর্ডিনেটর প্রীতম রায় বলেন, ‘‘বিচ্ছিন্ন ভাবে সচেতনতার প্রচার না-চালিয়ে নির্দিষ্ট কর্মসূচিই স্বাগত।’’

সেই কর্মসূচিই তো নেই! স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডিরেক্টর প্রতীপ কুণ্ডু বলেন, ‘‘এখন অনেক বেশি রোগ নির্ণয় হচ্ছে। ফলে এমনও হতে পারে যে, রোগটা ছিলই। এখন তার কথা জানতে পারছি। আবার অন্য কিছুও হতে পারে। মাইটস কোথায় আছে, বছরের কোন সময়ে বাড়ছে, ব্যাক্টিরিয়ার চরিত্র কেমন, তা না-দেখে এই বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্ক্রাব টাইফাসের প্রকোপ যে বাড়ছে, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরাও তা জানাচ্ছেন। কেস স্টাডি ছাড়া এর বাড়বাড়ন্তের কারণ বোঝা মুশকিল।’’ পোকাবাহিত এই রোগ প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা বলছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই। প্রশ্ন হল, সেই পরিকল্পনাটা হবে কবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE