Advertisement
০২ মে ২০২৪

ডোমজুড়ে সম্প্রীতির নয়া নজির, মন্দির গড়তে চেক দিলেন মুসলিম যুবক

রবিবার সন্ধ্যায় সাঁতরাগাছির জানা গেটে আয়োজিত মিলনমেলার মঞ্চে খসমোরার গ্রামবাসীদের হাতে ওই চেক তুলে দেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার সইদুল।

সইদুল শেখ। নিজস্ব চিত্র

সইদুল শেখ। নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
ডোমজুড় শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৮ ০৩:৪৫
Share: Save:

দেড় বছর আগে অশান্তির আগুনে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিল হাওড়ার ধূলাগড়ি। তার কয়েক কিলোমিটার দূরে ডোমজুড়ের খসমোরা দিঘিরপাড় গ্রামে এখন সম্প্রীতির নয়া নজির। অর্থাভাবে গ্রামে মন্দির নির্মাণ করতে পারছিলেন না গ্রামবাসী। তিন লক্ষ টাকা দিয়ে সাহায্য করলেন সইদুল শেখ নামে উলুবেড়িয়ার কাঁটাবেড়িয়ার এক সংখ্যালঘু যুবক।

রবিবার সন্ধ্যায় সাঁতরাগাছির জানা গেটে আয়োজিত মিলনমেলার মঞ্চে খসমোরার গ্রামবাসীদের হাতে ওই চেক তুলে দেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার সইদুল। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামবাসীদের স্বপ্ন থাকলেও সাধ্য নেই। সেটা জানার পরেই সিদ্ধান্ত নিই, মন্দির তৈরিতে সাধ্যমতো সহায়তা করব।’’

কিন্তু অন্য এলাকার বাসিন্দা হয়েও সইদুল খসমোরায় মন্দির তৈরির কথা জানলেন কী ভাবে?

আরও পড়ুন: তথ্যের অভাবেই গুজব-তদন্তে জট

পেশাগত কারণে একসময়ে কুয়েতে ছিলেন ওই যুবক। বছর দুয়েক আছেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে। মাসপাঁচেকের জন্য ছুটিতে নিজের গ্রামে ফিরেছেন। সম্প্রতি উলুবেড়িয়ারই একটি রেস্তরাঁয় সইদুলের সঙ্গে আলাপ হয় খসমোরা গ্রামের বাসিন্দা বিনয় চক্রবর্তীর। তিনি সইদুলকে কথায় কথায় মন্দির তৈরিতে সমস্যার কথা বলেন। সইদুল সাহায্যে রাজি হয়ে যান।

রবিবারের অনুষ্ঠানটির আয়োজক ‘আমরা ফ্যামিলি’ নামে একটি ফেসবুক-গ্রুপ। সইদুল তার সদস্য। গ্রুপটি তৈরি করেছেন আন্দুলের রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে ধূলাগড়ি, তারপরে বাদুড়িয়ার অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি মিলনের বার্তা দিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি করা দরকার। গত বছরেও ইদের আগে আমরা মিলনোৎসব করে সম্প্রীতির বার্তা দিই। আমরাই সইদুলকে মিলনমেলার মঞ্চ থেকে চেক দিতে বলি। যাতে অনেক মানুষ জানতে পারেন।’’ পরে সকলে মিলে ইফতারে যোগ দেন।

খসমোরা দিঘিরপাড় গ্রামে মূলত গরিব হিন্দু সম্প্রদায়ের বাস। অধিকাংশই কৃষিজীবী। এখানে ব্রহ্মাপুজো হয়। প্রতি বছর বৈশাখী পূর্ণিমায় উৎসব হয়। ব্রহ্মামন্দিরটি যেন একটি ইটের দেওয়াল ঘেরা কুঁড়েঘর! মাথায় ফুটো হয়ে যাওয়া টিনের ছাউনি। দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামবাসীরা একটি পুরোদস্তুর ব্রহ্মামন্দির তৈরির স্বপ্ন দেখছেন। এ জন্য মাঝেমধ্যে গ্রামে চাঁদাও তোলা হয়। কিন্তু যে হারে চাঁদা উঠছে, তাতে মন্দির কবে হবে, তা নিয়ে গ্রামবাসীরাই সন্দিহান।

সইদুল নিজে গ্রামে এসে বর্তমান ‘মন্দির’টি দেখে গিয়েছেন। তার পরে তিনি সাহায্যে এগিয়ে আসায় ভরসা পেয়েছেন গ্রামবাসী। সোমবার গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সইদুলকে নিয়ে উৎসবে মেতেছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা প্রণব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ধূলাগড়ি-কাণ্ডে মানুষের উপরে আমাদের বিশ্বাস চলে গিয়েছিল। সইদুলের কাজে সেই বিশ্বাস আবার ফিরে এসেছে।’’

সইদুল বলেন, ‘‘সব ধর্ম সমান। আমার গ্রামের মসজিদেও যখন সহায়তা করি, তখন মন্দিরে তা পারব না কেন? গ্রামবাসীদের বলেছি, কাজ শুরু করুন। আবার পাশে থাকব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Muslim Man Temple সইদুল শেখ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE