দিন ছাড়াও এডিসের একটা ‘পপুলেশন’ রাতেও সক্রিয়।
চিকিৎসকদের অনেকেই বলে থাকেন। এমনকি সচেতনতার প্রচারেও বহু সময়েই বলা হয়, ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী এডিস মশা দিনেই কামড়ায়। রাতে নয়। প্রচলিত এ ধারণাকে এ বার ভুল অ্যাখ্যা দিলেন পতঙ্গবিদদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, নিজেদের জীবনচক্রে ‘বিশ্রামের সময়’ কমিয়ে এনেছে এডিস। আর তাতেই ডেঙ্গি সংক্রমণের হার বাড়াচ্ছে তারা।
এই দাবির পক্ষে পতঙ্গবিদেরা দু’টি ভিন্ন সময়ে করা গবেষণার তথ্য তুলে এনেছেন। সেই তথ্যই বলছে, এডিস মূলত দিনে কামড়ালেও তাদের একটা অংশ সন্ধ্যা বা রাতেও কামড়ায়। বিশেষ করে রাতে আলো জ্বলা থাকলে এডিস দিনের মতোই আচরণ করে।
অতীতে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পতঙ্গবিদ অমিয়কুমার হাটির নেতৃত্বে টানা এক বছর এক জন মানুষের উপরে এই গবেষণা চালানো হয়। মশা ধরতে মানুষকে ব্যবহার করার এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘হিউম্যান বেট অব কালেকশন অব মসকিউটো’, অর্থাৎ যেখানে মানুষকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে (যদিও বর্তমানে মানুষকে নিয়ে এই ধরনের পরীক্ষা নিষিদ্ধ)। ওই গবেষণায় আপাত ভাবে দেখা গিয়েছিল, এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবোপিকটাস (যাদের মূলত গ্রামে বা গাছপালা ভর্তি জায়গায় পাওয়া যায়) উভয়েই দিনে কামড়ায়। এডিস ইজিপ্টাইয়ের ‘পিক আওয়ার্স’ হল সকাল ৭টা থেকে ১০টা এবং দুপুর ৩টে থেকে সন্ধে ৬টা। আর এডিস অ্যালবোপিকটাসের ‘পিক আওয়ার্স’ দুপুর ৩টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা।
আরও পড়ুন: জল তোলায় রাজ্যের কড়া পদক্ষেপ চান বিশেষজ্ঞেরা
কিন্তু পরবর্তী কালে তথ্যের বিশ্লেষণে তাঁরা দেখেন, দিন ছাড়াও এডিসের একটা ‘পপুলেশন’ রাতেও সক্রিয়। দিনে ৮৪ শতাংশ কামড়ালেও বাকি ১৬ শতাংশ কামড়ায় সন্ধে ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। ফের ভোর ৪টে থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তারা সক্রিয়। মাঝখানে রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টের মধ্যে কোনও এডিস ইজিপ্টাইয়ের সক্রিয় হওয়ার প্রমাণ মেলেনি। ওইটুকু তাদের ‘বিশ্রামের সময়’। পতঙ্গবিদ অমিয়কুমার হাটি বলছেন, ‘‘রাতেও এডিসের সক্রিয়তার প্রমাণ রয়েছে আমাদের কাছে।’’
ওই গবেষণার সূত্রেই চলতি বছরে রাজ্যে একটি গবেষণা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে ‘বিশ্রামের সময়’ কমিয়ে রাতে আরও সক্রিয় এডিস। বিশেষ করে আলোকিত জায়গাগুলিতে। পরীক্ষায় কোনও প্রাণী ব্যবহার করা যাবে কি না, সে ব্যাপারে ‘অ্যানিমাল এথিক্যাল কমিটি’-র অনুমতি নিয়ে ওই গবেষণায় একটি পায়রা ব্যবহার করা হয়। পায়রাটির দেহের এক অংশ থেকে একটু লোম তুলে উন্মুক্ত করে সেটিকে ১০০টি স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাইয়ের সঙ্গে একটি খাঁচায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পরীক্ষাটির প্রথম ধাপে ঘরটি অন্ধকার করে প্রতি দশ মিনিট অন্তর আলো জ্বেলে দেখা গিয়েছিল, পায়রাটিকে কখনও মশা কামড়াচ্ছে, কখনও কামড়াচ্ছে না। অর্থাৎ ঘুরে-ফিরে অতীতের মতোই এ বারও ওই ১৫-১৬ শতাংশ এডিস অন্ধকারে সক্রিয় ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে ঘরে সারা রাত আলো জ্বেলে দেখা গিয়েছিল, আলোয় প্রায় সবক’টি এডিসই দিনের মতো সক্রিয় থাকছে।
এখন আগের থেকে কলকাতায় রাতে আলোর পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে। ফলে রাতে এডিসের সক্রিয়তাও বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন পতঙ্গবিদেরা। বর্তমান গবেষণার সঙ্গে যুক্ত পতঙ্গবিদ গৌতম চন্দ্র বলছেন, ‘‘রাতের আলোয় এডিসের বিশ্রামের সময়েও পরিবর্তন ঘটছে। প্রায় ২৪ ঘণ্টাই তাদের চক্র চলছে।’’ ফলে চিন্তা বাড়ছে মানুষের! স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘পালানোর আর পথ থাকল না। নয়া এই তথ্য আমাদেরও রাতের ঘুম কাড়ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy