Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal News

যাত্রা বাতিল করল বিজেপি, তিন দিনে পাঁচ জেলায় জনসভা করতে আসছেন অমিত শাহ

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দিলেন, যাত্রার পথে আপাতত আর এগোচ্ছেন না তাঁরা। বিকল্প কর্মসূচি ঘোষণা করে দিলীপ জানালেন, ব্রিগেডে তৃণমূলের মেগা র‌্যালি শেষ হওয়া মাত্রই পর পর তিন দিন প্রায় গোটা বাংলা চষে পাঁচ জনসভা করতে চলেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।

তিন দিন প্রায় গোটা বাংলা চষে পাঁচ জনসভা করতে চলেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।— ফাইল চিত্র।

তিন দিন প্রায় গোটা বাংলা চষে পাঁচ জনসভা করতে চলেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।— ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১৮:৩০
Share: Save:

বাতিল হয়ে গেল বিজেপির ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’। মঙ্গলবারই সুপ্রিম কোর্ট যাত্রা স্থগিত করে দিয়েছিল। নতুন করে রাজ্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাতে বলেছিল বিজেপি-কে। কিন্তু রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দিলেন, যাত্রার পথে আপাতত আর এগোচ্ছেন না তাঁরা। বিকল্প কর্মসূচি ঘোষণা করে দিলীপ জানালেন, ব্রিগেডে তৃণমূলের মেগা র‌্যালি শেষ হওয়া মাত্রই পর পর তিন দিন প্রায় গোটা বাংলা চষে পাঁচ জনসভা করতে চলেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ

কিন্তু এ দিন রাতেই খবর আসে অমিত শাহ সোয়াইন ফ্লু-তে আক্রান্ত। শাহ নিজেই টুইট করে তাঁর অসুস্থার কথা জানিয়েছেন। রাত ৯টা নাগাদ তাঁকে দিল্লির এইমস-এ ভর্তি করানো হয়। ফলে বাংলায় জনসভা করতে তিনি আসতে পারবেন কি না তা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা তৈরি হল। যদিও রাজ্য বিজেপির তরফে গভীর রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে শাহের অসুস্থতা রাজ্য বিজেপিকে বেশ চিন্তায় ফেলল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

এ দিন সকালে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছিল। বৈঠকে ছিলেন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, নির্বাচন ব্যবস্থা কমিটির আহ্বায়ক মুকুল রায়, কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়, রাজ্যসভার সদস্য রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের তরফ থেকে বৈঠকে ছিলেন শিব প্রকাশ, কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং অরবিন্দ মেনন। এ ছাড়া সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাজ্য সাধারণ সম্পাদকরা, মহিলা মোর্চার রাজ্য সভাপতি লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্য স্তরের অন্য পদাধিকারীরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জেরে যে ভাবে আটকে গিয়েছে গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার পরিকল্পনা, তার প্রেক্ষিতেই এই বৈঠক ডাকা হয়েছিল। আপাতত গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার পরিকল্পনা নিয়ে আর না এগনোর সিদ্ধান্তই নেওয়া হয় বৈঠকে। বিকল্প কর্মসূচি হিসেবে রাজ্যের ৪২টি বিধানসভা কেন্দ্রে আলাদা আলাদা জনসভা করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে দিলীপ ঘোষ সাংবাদিক সম্মেলনে জানান যে, ওই জনসভাগুলির নাম দেওয়া হবে, ‘গণতন্ত্র বাঁচাও সভা’। তবে শুধু লোকসভা কেন্দ্র স্তরে নয়, বিধানসভা কেন্দ্র স্তরেও কর্মসূচি নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে তিনি এ দিন জানান।

আরও পড়ুন: প্রশান্ত কিশোরকে জেডিইউ-তে নিতে অমিত শাহ ফোন করেছিলেন নীতীশকে!

কবে কোন লোকসভা কেন্দ্রে সভা হবে, তা এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে পাঁচটি সভার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এ দিনই হয়ে গিয়েছে। সেই পাঁচ সভাতেই প্রধান বক্তা হতে চলেছেন অমিত শাহ। দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘২০, ২১ এবং ২২ জানুয়ারি অমিতজি পাঁচটি জনসভা করবেন। ২০ তারিখ তাঁর সভা হবে মালদহে। ২১ জানুয়ারি সভা করবেন সিউড়ি এবং ঝাড়গ্রামে। ২২ জানুয়ারি অমিত শাহ সভা করবেন কৃষ্ণনগর এবং জয়নগরে।’’

১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে তৃণমূলের মেগা সমাবেশ। দিলীপ ঘোষের ঘোষণা এ দিন বুঝিয়ে দিল, বিজেপি বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে তৃণমূলের ওই সমাবেশের পরের দিনই বাংলায় সভা করতে চাইছেন অমিত শাহ। এক দিন নয়, ওই সময়ে টানা তিন দিন বাংলাকে সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। মালদহ, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা— এই পাঁচ জেলাকে ওই তিন দিনের সফরে ছুঁয়ে যাবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি।

আরও পড়ুন: লক্ষ্য রেকর্ড জমায়েত, আজই থাকা-খাওয়া পরিদর্শনে অভিষেক

অন্য জেলাগুলোয় বা লোকসভা কেন্দ্রগুলোয় যে সমাবেশ হবে, সেখানে কারা আসবেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ আসবেন কি না, অমিত শাহকে আরও এক দফা দেখা যাবে কি না, সে সব এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই যে রাজ্যের সর্বত্র ‘গণতন্ত্র বাঁচাও সমাবেশ’ সেরে ফেলতে চাইছে বিজেপি, তা দিলীপ স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভা হতে পারে বলে দিলীপ এ দিন জানান। বিজেপি সূত্রের খবর, ৮ ফেব্রুয়ারির ব্রিগেডে সমাবেশের জন্য সেনার কাছে অনুমতি চেয়ে রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে চূড়ান্ত সম্মতি এলেই সভার প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া হবে।

বিকল্প কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং অমিত শাহকে টানা তিন দিন ধরে বাংলার পাঁচ জেলায় ঘুরিয়ে বিজেপি মুখরক্ষার চেষ্টা করছে ঠিকই। কিন্তু বিজেপির যাত্রাকে ঘিরে অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে বলে যে তত্ত্ব রাজ্য প্রশাসন বার বার খাড়া করছিল, সুপ্রিম কোর্ট প্রায় সেই তত্ত্বেই সিলমোহর দিয়ে দেওয়ায় বিজেপির মুখ যথেষ্টই পুড়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপ ঘোষ অবশ্য যাবতীয় অস্বস্তি ঢাকার চেষ্টা করেছেন। গত বছর রাজ্যে বিজেপি যে হাজার তিনেক সভা করেছে, তার জেরে কোথায় অশান্তি হয়েছে, কোথায় দাঙ্গা হয়েছে? প্রশ্ন তোলেন দিলীপ ঘোষ। অশান্তির আশঙ্কায় যাত্রা আটকানো যে যুক্তিযুক্ত নয়, তা দিলীপ এ দিন ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তবে বলেছেন, ‘‘আদালত যে হেতু রায় দিয়েছে, সে হেতু আমরা মেনে নিচ্ছি। কারণ আদালতে আমরাই গিয়েছিলাম।’’

(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া -পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবরআমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE