এ যেন গল্পের সেই হিংসুটে দৈত্য। এত দিন চৈত্র-বৈশাখে দিনভর বসে থাকতেন বাগান পাহারায়। কেউ এঁচোড়টা নিতে, কেউ বা পাকা আম-কাঁঠালের লোভে কখন যে আসে! গাঁ গঞ্জে ছেলেছোকরাদের তো বিশ্বাস নেই!
কিন্তু সে দিন গাঁয়ের লোক চমকে গিয়ে দেখল, পাড়ার ছেলে আশারুলের হাতে এঁচোড়। জিগ্গেস করলে জানা গেল, খোদ বাগানমালিকই বলেছেন পেড়ে নিয়ে যেতে। সকলের তো চোখ কপালে, মণি সিংহের হল কী! এ কথা সে কথায় তার পর বেরিয়ে পড়ল আসল রহস্য। এ বার পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন তিনি। তাই এত উদারহস্ত। যদিও মণির বক্তব্য, “ধুস! ও সব ছেলের দল কী বলে! কোনও দিন কাউকে ফল পাড়তে বাধা দিইনি।”
শুধু কী মণি সিংহ? এমন বাগানভর্তি ফল যাঁদের আছে, তাঁদের ঘরে ঘরে যেন ঘুরছে দাদাঠাকুরের সেই ছড়া। ‘মাছ কুটলে মুড়ো দিব, গাই বিয়ালে দুধ দিব / ভোট দিয়ে যা, আয় ভোটার আয়’।
এই পরিবর্তন কেন? গ্রামের লোকেরা বলছেন, পঞ্চায়েতের আসনে ভোটার সংখ্যা সব সময়ই খুব কম। কোথাও চারশো, তো কোথাও ছ’শো। এক একটা পাড়া নিয়ে এক একটা পঞ্চায়েত। এর মধ্যে আদালতের রায়ে ভোট গিয়ে ঠেকেছে মে মাসের মাঝামাঝি। এই সময়ে সবে আম-কাঁঠাল-পেয়ারায় পাক ধরেছে। লিচুর রং লালচে হচ্ছে। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ জলপাইগুড়ির পঞ্চায়েত প্রার্থীরাও। কেউ নিজের গাছের আম বিলিয়ে দিচ্ছেন। কেউবা খেতের আলু হিমঘরে না ঢুকিয়ে পড়শিদের বিলিয়ে দিচ্ছেন।
জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া মোহিতনগরের গোস্বামী বাড়ির বাগান এখন খোলা হাট। পেয়ারা, লিচু, আম, কাঁঠাল— কোনও গাছই বাদ নেই বাগানে। পাঁচিল-ঘেরা সেই বাগানের গেটে সম্বৎসর তালা দেওয়া থাকে। এখন গেট সারাদিন খোলাই থাকে। এই বাড়ির কর্ত্রী সাবিত্রী চক্রবর্তী এ বার বিজেপি প্রার্থী। ১৫ বছর ধরে জেতা আসন। গাছের ছায়াতেই চলে মিটিং। কর্মী-সমর্থকেরা ইচ্ছেমতো লিচু-আম পেড়ে খাচ্ছেন। কাঁঠাল কাঁধে নিয়ে বার হচ্ছেন বাড়ি থেকে। ভ্রূক্ষেপই নেই কারও। সাবিত্রীর কথায়, “সারা বছরই তো লোকজন বাগানে এসে ফল খান। বাধা দিতে যাব কেন? এর সঙ্গে ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই।”
বেলাকোবার এক অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক এ বার বাম প্রার্থী। আগে তাঁর বাড়ির মাচায় লাউ বা চালকুমড়োর দিকে কেউ তাকালেই লাঠি হাতে তেড়ে যেতেন। তাঁর বাড়িতে আতা, জামরুল এবং নারকেল গাছও রয়েছে। এক পড়শির কথায়, “কাল তো উনি নিজের গাছের নারকেল দিয়ে গেলেন বাড়িতে। সঙ্গে ফাউ ভোটপ্রচার!’’
বাহাদুরপুরের এক নির্দল প্রার্থী রোজ গাছ থেকে আম পেড়ে চাটনি রেঁধে পড়শিদের বিলোচ্ছেন। হিমঘরে না রেখে জমির আলু বাড়ি বাড়ি দিয়ে এসেছেন দেবনগরের কংগ্রেস প্রার্থী। তবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আলু হাতে ভোটের কথা ভুলেও তুলছেন না। শুধু বলছেন, “এ বার আলুটা বেশ ভাল হয়েছে। তাই একটু আনলাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy