ধর্মতলার ধর্নামঞ্চে রবিবার সন্ধেয় মুখ্যমন্ত্রীর পাশে (বাঁ দিক থেকে) অনুজ শর্মা, রাজীব কুমার, বীরেন্দ্র। ফাইল চিত্র
সিবিআই-রাজ্য সরকার সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে চাপ আরও বাড়ানোর কৌশল নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
রবিবার রাতে কলকাতার সিপি রাজীব কুমার ছাড়া যে-পাঁচ আইপিএস অফিসার মেট্রো চ্যানেলের ধর্নামঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে বসে ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে রাজ্যকে নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পরবর্তী পদক্ষেপে ওই অফিসারেরা যে-সব সরকারি পদক পেয়েছেন, তা কেড়ে নেওয়া এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাঁদের কেন্দ্রীয় ক্যাডারে যোগদানে বিধিনিষেধ আরোপ করার কথাও ভাবছে কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি শিবিরের পাল্টা দাবি, কেন্দ্রের অভিযোগ ভিত্তিহীন। ধর্নামঞ্চে আইপিএস অফিসারেরা ছিলেনই না।
রবিবার রাতে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর পাশে কয়েক জন পদস্থ আইপিএস অফিসারকে বসে থাকতে দেখা যায়। কেন্দ্রের মতে, রাজনৈতিক ধর্নামঞ্চে উপস্থিত থেকে ওই অফিসারেরা ‘অল ইন্ডিয়া সার্ভিস (কন্ডাক্ট)’-এর শর্ত ভেঙেছেন। তাই রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, অতিরিক্ত ডিজি বিনীত গোয়েল (নিরাপত্তা), অতিরিক্ত ডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা, বিধাননগরের সিপি জ্ঞানবন্ত সিংহ এবং কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সুপ্রতিম সরকারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। যদিও নবান্ন সূত্রের দাবি, পাঁচ অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চিঠি তো দূরের কথা, মঙ্গলবার দিল্লি থেকে রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে পাঠানো চিঠিই এখনও হাতে পায়নি তারা। একই সঙ্গে তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, গত ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন ডিজি (বিএসএফ) কে কে শর্মা কলকাতায় আরএসএস-ঘনিষ্ঠ একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। কেন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল।
আরও পডু়ন: কাল শিলংয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু রাজীব কুমারকে
সূত্র বলছে, রবিবার রাতের ঘটনা নিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর পাঠানো রিপোর্টে রাজীব কুমার ছাড়াও ওই পাঁচ অফিসারের ভূমিকার সবিস্তার বিবরণ দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতেই ওই অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। প্রথমে অফিসারদের বিরুদ্ধে অল ইন্ডিয়া সার্ভিস মেনে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। পরবর্তী পদক্ষেপে ওই অফিসারেরা যে-সব সরকারি পদক পেয়েছেন, তা কেড়ে নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। যদিও রাজ্যের যুক্তি, রাজ্য সরকার পদকের জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ পাঠায়। দিল্লি চাইলেই তা কেড়ে নিতে পারে না। পদক কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওই অফিসারদের কেন্দ্রীয় ক্যাডারে যোগদানে বিধিনিষেধ আরোপের কথাও ভাবছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমলাদের গোটা কর্মজীবনের অন্তত পাঁচ বছর কেন্দ্রীয় ক্যাডারে যোগ দিয়ে দিল্লিতে কাজ করতে হয়। তা না-হলে পদোন্নতির প্রশ্নে সমস্যার মুখে পড়তে পারেন ওই আমলারা।’’
রবিবার সিবিআই অফিসারদের হেনস্থার ঘটনা ভাল ভাবে নেননি স্বরাষ্ট্র-কর্তারা। বিষয়টির শেষ দেখে ছাড়তে চান বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বও। অনেকেই মনে করছেন, লোকসভার আগে আইপিএস অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের আমলাদের বার্তা দিতে চান মোদী-অমিত শাহেরা।
ধর্নামঞ্চে আইপিএস অফিসারদের থাকার কথা মানতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ শিবির। তাদের যুক্তি, রবিবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী প্রাথমিক ভাবে রাস্তাতেই ধর্নায় বসেছিলেন। তাঁর নিরাপত্তার জন্যই পদস্থ অফিসারেরা তাঁকে ঘিরে ছিলেন। রাজ্যের আমলাদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে মমতা-ঘনিষ্ঠ শিবিরের বক্তব্য, ওই আমলারা রাজ্যের অফিসার, দিল্লির নয়। এ নিয়ে প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভেবে রেখেছে রাজ্য সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy