Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

৫ গুলি, ভদ্রেশ্বরে খুন পুরপ্রধান

চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার পীযূষ পাণ্ডে জানিয়েছেন, বুধবার মুন্না রায় নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে খুনের কথা কবুল করেছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা হচ্ছে। আটক করা হয়েছে আরও চার জনকে।

মনোজ উপাধ্যায়।

মনোজ উপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১৬
Share: Save:

দুষ্কৃতী-তাণ্ডবে এ বার বলি হলেন শাসকদলের এক পুরপ্রধান।

শহরকে তিনি সাজাচ্ছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাতে বাড়ির কাছে রাস্তায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়ে গেলেন ভদ্রেশ্বরের সেই পুরপ্রধান, মনোজ উপাধ্যায় (৪৪)।

পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে দুষ্কৃতীরা মনোজকে পরপর পাঁচটি গুলি করে। দু’টি গুলি লাগে পেটে, দু’টি কপালের পাশে, একটি বুকে। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এমন এক নেতা খুন হওয়ায় দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে রাত থেকেই পথে নামেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, পুরসভায় দুর্নীতি রোধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় মনোজ দলেরই কয়েকজনের চক্ষুশূল হয়েছিলেন। সেটাই কাল হল।

চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার পীযূষ পাণ্ডে জানিয়েছেন, বুধবার মুন্না রায় নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে খুনের কথা কবুল করেছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা হচ্ছে। আটক করা হয়েছে আরও চার জনকে।

ঠিক কী হয়েছিল মঙ্গলবার?

ভদ্রেশ্বরের গেট বাজারে মনোজের বাড়ি। রাত ১১টা নাগাদ পাড়ার ক্লাব থেকে চিন্টু দুবে নামে এক জনের মোটরবাইকে জি টি রোড ধরে ফিরছিলেন তিনি। গলির মুখেই মনোজদের থামায় জনাছয়েক যুবক। মনোজ তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে এগিয়ে যান। চিন্টু সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। কয়েক মিনিট পরেই তিনি গলি থেকে ‘দাদা’র উত্তেজিত কথাবার্তা শুনতে পান। বিপদ আঁচ করে চিন্টু ক্লাবের ছেলেদের ডাকতে যান। তখনই শোনেন গুলির শব্দ। সকলে এসে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন পুরপ্রধান। চিন্টুর কথায়, ‘‘মনে হয়, দাদা ওই ছেলেগুলোকে চিনতেন। সবাইকে নিয়ে এসেও দাদাকে বাঁচাতে পারলাম না।’’

বুধবার ভোর থেকেই ভদ্রেশ্বর কার্যত বন্‌ধের চেহারা নেয়। মনোজের দাদা গোপালবাবু বলেন, ‘‘ওর যে শত্রু আছে, জানতাম না। ও মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াত। রক্ষী নিত না। কেন খুন হল বুঝতে পারছি না।’’

অন্তিম: মনোজের মৃতদেহ নিয়ে ভদ্রেশ্বরের পথে দলীয় কর্মীরা। বুধবার। ছবি: তাপস ঘোষ

মনোজের আমলে এই তিন বছরে শহরের উন্নয়নের কথা এ দিন যেমন অনেকের মুখে মুখে ফিরেছে, তেমনই ফিরেছে তাঁর দুর্নীতি-বিরোধী কঠোর অবস্থানের কথাও। কয়েক মাস আগে তেলেনিপাড়া ঘাটে অস্থায়ী জেটি ভেঙে ২২ জনের সলিল-সমাধি হয়েছিল। রাজ্য সরকার অস্থায়ী জেটি তৈরির জন্য ১৫ লক্ষ টাকা দেয়। কিন্তু সেই টাকা ফিরিয়ে দিয়ে জেলাশাসককে লিখিত ভাবে মনোজ জানান, জিএসটি চালু হওয়ার পরে যথাযথ মানের অস্থায়ী জেটি তৈরিতে ১৮-২০ লক্ষ টাকা লাগবে। না হলে জেটির মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, মনোজের এই কঠোর অবস্থান মেনে নিতে পারেননি জেলা পরিষদের কেউ কেউ। তাঁরা চেয়েছিলেন, ১৫ লক্ষ টাকাতেই কাজ হোক। কিন্তু তা না হওয়ায় মনোজ অনেকের চক্ষুশূল হন।

দিগড়ার বাসিন্দা স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘অনেক নেতা দেখেছি। কিন্তু মনোজবাবুর মতো এমন সৎ মানুষ কমই মেলে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি কাউকে রেয়াত করতেন না।’’

মনোজের উদ্যোগে গাছ বসেছে জি টি রোডের দু’ধারে। স্টেশন রোড ও ফুটপাথ দখলমুক্ত হয়েছে। সেজেছে গঙ্গার ঘাট। রাস্তায় নতুন আলো বসেছে। তাঁর পাড়ার ক্লাবের এক জনের খেদ, ‘‘মঙ্গলবার রাতেই দাদা রবীন্দ্রভবন তৈরির কথা বলছিলেন। সেটা বোধহয় আর হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE