Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু লোক আর মাফিয়া এ সব করছে’

গত সপ্তাহে ঝাড়গ্রামের বৈঠক থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বেআইনি সব খাদান বন্ধের বার্তা দেওয়া শুরু করেছিলেন।

মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:২০
Share: Save:

এত দিন অভিযোগ ছিল। বেআইনি খাদানের রমরমা নিয়ে এ বার সরকারি আধিকারিকদের একাংশের দিকে আঙুল তুললেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মঙ্গলবার মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু লোক আর মাফিয়া এ সব করছে। সে যেই হোক, এ সব করা যাবে না। আমি যখন এসে বলি বন্ধ করতে তখন বন্ধ হয়। পরে আবার চালু হয়। কেন? আমি রিপোর্ট চাই।’’

‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করানোরও ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে ছিলেন রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, ‘‘কে টাকা খাচ্ছে, দেখতে হবে। সুরজিৎ, আমি তোমাকে বলি, অ্যান্টি কোরাপশন ব্রাঞ্চটা স্ট্রং করো। নজর রাখো, হাতেনাতে পটাপট ধরো।’’ এরপর সুর চড়ে মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি বলেন, ‘‘বিএলআরও, বিডিও, আইসি, ওসি-দের একটা দায়িত্ব থাকে। পুলিশ যদি শক্ত হয় আর ভূমি দফতরের অফিসাররা যদি নজর রাখে তাহলে এটা হয় না।’’ পাশাপাশি তাঁর নির্দেশ, ‘‘নোডাল অফিসার থাকবে। সে এগুলো মনিটরিং করবে।’’

গত সপ্তাহে ঝাড়গ্রামের বৈঠক থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বেআইনি সব খাদান বন্ধের বার্তা দেওয়া শুরু করেছিলেন। তারপর দুর্গাপুরের প্রশাসনিক বৈঠকেও কয়লা মাফিয়া এখান থেকে দিল্লি পর্যন্ত টাকা পাঠায় অভিযোগ তুলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন যদি শক্ত হয়, এই বাঁদরামো বন্ধ হয়।’’ মেদিনীপুরে এসেও মুখ্যমন্ত্রীর গলায় শোনা গেল সেই খাদান-হুঁশিয়ারি।

আরও পড়ুন: আর চাইবে না, এলাকায় যাও, বিধায়কদের ধমক মমতার

পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে রয়েছে বালি ও মোরাম খাদান। মূলত কংসাবতী, শিলাবতী ও সুবর্ণরেখার বুকে এই সব খাদান থেকে বেআইনি ভাবে বালি ও কিছু জায়গায় মোরাম পাচারের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। ভূমি দফতরের একাংশ আধিকারিকের যোগসাজশেই কোটি কোটি টাকার বেআইনি কারবার চলে বলে অভিযোগ। তাতে বিপুল রাজস্ব হাতছাড়া হয় রাজ্যের।

এ দিনের বৈঠকে গোড়াতেই বেআইনি খাদান প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রথমেই শুরু করব বালি খাদান দিয়ে। বালি খাদান নিয়ে ডিএম, এসপি-র কাছে কী রিপোর্ট আছে?’’ পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক পি. মোহন গাঁধী জানান, খাদানে সিসিটিভি বসানো হচ্ছে। তল্লাশি চলছে। গত ৬ মাসে ২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। জেলাশাসককে মমতার পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘প্রশাসনের যে লোকটা জানে কখন লরি যাবে, সে যদি সিসিটিভিটা বন্ধ করে রাখে?’’ এরপর অবশ্য চুপই ছিলেন জেলাশাসক। মুখ্যমন্ত্রী বলে চলেন, ‘‘এ সবের জন্য পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, ব্রিজগুলোর সর্বনাশ হচ্ছে, সুবর্ণরেখা নদীর সর্বনাশ হচ্ছে। আর যারা এ সব করে খাচ্ছে, তাদের পকেটে টাকা যাচ্ছে।’’

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপের ঘোষের অভিযোগ, তৃণমূলের প্রশ্রয়েই বেআইনি খাদান চলছে। দিলীপ বলেন, ‘‘তৃণমূলের ঝান্ডাধারী মাফিয়ারাই তো এই কারবার করছে। নিজেদের মধ্যে মারামারিও করছে। মানুষ তিতিবিরক্ত। তাই মানুষের মন পেতে মুখ্যমন্ত্রী এ সব বলছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE