চাওয়ার অভ্যেসে ইতি টানুন। মন দিন জনসংযোগে। মঙ্গলবার মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে দলের জনপ্রতিনিধিদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বললেন, তার মর্মার্থ এটাই।
মূলত বিধায়কদেরই ‘দিদির ধমক’ হজম করতে হয়েছে। শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোকে বলেছেন, ‘‘আর কিছু চাইবে না। এত কলেজ, হাসপাতাল হয়েছে। তা-ও চাইছে। আগে নিজেরা এলাকায় পরিষেবা দাও।’’ কেশিয়াড়ির বিধায়ক পরেশ মুর্মুর উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘অনেক দেওয়ার পরও এত হেরেছো। আবার ঠিক করো। পরে দেখে দেব।’’ বাদ যাননি অন্য বিধায়কেরাও।
পঞ্চায়েত ভোটের ফল ইঙ্গিত দিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে প্রভাব বাড়ছে বিজেপির। দলীয় ময়নাতদন্তে উঠে এসেছে জনসংযোগে ঘাটতির কথা। এর আগেও নানা সময়ে ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা, গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতোকে সতর্ক করেছেন দলনেত্রী। বলেছেন, মাঠে নেমে মানুষের মনের খবর জানতে। তাই মেদিনীপুর সফরে মমতার এমন ধমক ‘প্রত্যাশিত’ ছিল বলেই মনে করছে তৃণমূলের একাংশ।
যাঁরা ধমক খেলেন, বৈঠক শেষে কী বলছেন তাঁরা? কেশিয়াড়ির বিধায়ক মেনে নিয়েছেন ব্যর্থতার কথা। বলেছেন, ‘‘এটা তো স্বাভাবিক দিদি অনেক কিছুই দিয়েছেন। তবে আমরা কেশিয়াড়ি ধরে রাখতে পারিনি। স্নেহ করেই শাসন করেছেন দিদি।’’ আর শ্রীকান্তের মন্তব্য, ‘‘দিদি মানুষের সঙ্গে থাকতে বলেছেন। আমি সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা মানুষের সঙ্গেই থাকি। আমি যত মিটিং করি, আর কেউ করে না।’’ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য দাবি, ‘‘এ সবই লোক দেখানো। বকাবকি আগেও করেছেন। কিছুই হয়নি। এ বারও হবে না।’’
আরও পড়ুন: ‘প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু লোক আর মাফিয়া এ সব করছে’
বিধায়কেরা নয়, এ দিন ধমকের শুরুটা হয়েছিল জেলা পরিষদ সদস্য অমূল্য মাইতিকে দিয়ে। তিনি জানান, মানসিক প্রতিবন্ধীরা শংসাপত্র পাচ্ছেন না। খোঁজ নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘কে বলেছে পাচ্ছে না? কারও কারও অভ্যাস হয়ে গিয়েছে শুধু চাওয়ার। টাকা কে দেবে, আকাশ, বাতাস না তোমার ভাষণ?’’ বৈঠকে শ্রীকান্ত বলেন, ‘‘হাতির হানায় যারা মারা গিয়েছে তাদের পরিবার টাকা পেয়েছে। কিন্তু এখনও কাজ পায়নি।’’ শুনেই মেজাজ হারান মমতা। বলেন, ‘‘পাকামো কম করো। যা দেওয়া হয়েছে সেগুলো দেখো। এই জন্য তোমাদের বলতে দিই না।’’ আর কেশিয়াড়ির বিধায়ক সেতুর আর্জি জানাতেই সুর সপ্তমে চড়ে মমতার। পঞ্চায়েত এই কেশিয়াড়িতেই এ বার দাপট দেখিয়েছে বিজেপি।
ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলইকেও এ দিন মমতা পরামর্শ দেন, ‘‘শুধু যোগাযোগ বাড়াও। আর কিছু লাগবে না এখন।’’ চন্দ্রকোনার বিধায়ক ছায়া দোলই বলতে শুরু করেছিলেন, ‘‘ক্ষীরপাইয়ে যদি একটা কলেজের ব্যবস্থা করা যায়।’’ তাঁকে থামিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখন নতুন কলেজ হবে না।’’
কিছু চাইলেই জুটেছে বকুনি। নতুন করে কিছু চানওনি সবংয়ের বিধায়ক গীতা ভুঁইয়া। উল্টে তিনি বলেন, ‘‘আপনি অনেক দিয়েছেন। আপনার আশীর্বাদ থাকলেই হবে।’’ এ বার হাসিমুখে মমতার মন্তব্য, ‘‘থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ। দেখো, শি ইজ সো সুইট!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy