লিয়োনেল মেসির ভারত সফরের আয়োজনে কয়লা পাচারের কালো টাকার ছায়া থাকতে পারে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে দাবি ইডির। এই সফরের অন্যতম আয়োজক সংস্থা ইতিমধ্যেই কয়লা কাণ্ডে ইডি-তদন্তের আওতায় রয়েছে। সে কারণে শনিবার যুবভারতী কাণ্ডে ইসিআইআর (এনফোর্সমেন্ট কেস ইনফরমেশন রিপোর্ট) দায়ের করে তদন্ত করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি। ইডি সূত্রে দাবি, বিধাননগর দক্ষিণ থানায় রাজ্য পুলিশের দু’টি এফআইআরের ভিত্তিতে কলকাতা জ়োনের অফিসে ইসিআইআর দায়ের করা হয়েছে।
যুবভারতীতে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি আনুমানিক ১০০ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। মূলত মেসিকে কেন্দ্র করে আয়োজক সংস্থা এবং সহযোগী আয়োজক সংস্থার কর্তারা বেআইনি ভাবে আর্থিক লেনদেন করেছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছিল। এর পরেই ইসিআইআর দায়ের হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক ইডি কর্তা। আয়োজক সংস্থার কর্তা শতদ্রু দত্ত বর্তমানে রাজ্যের মামলায় পুলিশি হেফাজতে। জেল হেফাজতে আসার পরে তাঁকে জেরা করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করা হবে।
সহযোগী আয়োজক সংস্থার কর্তাদের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন ইডির ওই কর্তা।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, কয়লা পাচারের কালো টাকা একাধিক সংস্থার মাধ্যমে মেসির ভারত ভ্রমণের আয়োজনে বিনিয়োগ করে সাদা করার চেষ্টা হয়েছে, পাশাপাশি মেসিকে কেন্দ্র করে মাত্র ১২-১৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭০-৮০ কোটি টাকা বেআইনি ভাবে লেনদেন করেছে আয়োজক সংস্থা এবং তার সহযোগীরা। তাঁদের আরও দাবি, মেসির ভারত ভ্রমণ বাবদ অগ্রিম প্রায় কয়েকশো কোটি টাকা বিনিয়োগের ব্যবস্থা করেছিল আয়োজক সংস্থা এবং এক সহযোগী সংস্থা। ওই সহযোগী সংস্থার বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন কয়লা পাচারের ২০২০ সালের মামলায় ইডির আতশকাচের নীচে রয়েছে। অতীতে সংস্থার কর্তাদের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে, করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ। ইডি সূত্রের দাবি, নামে-বেনামে বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থা এবং বিভিন্ন রাজ্যে ব্যবসা ও সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করেছে ওই সহযোগী সংস্থা।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, মেসির সঙ্গে এক-একটি ছবি তোলা বাবদ ন্যূনতম ১০ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা নেওয়া হলেও ওই লেনদেনের নথি নেই। ওই লেনদেনের পুরোটাই নগদ টাকা এবং তা হিসাবের বাইরে কালো টাকা বলেই বিবেচিত হচ্ছে।
ইডির এক কর্তা বলেন, প্রায় ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রির হিসাব রাখা হয়নি বলে মনে হচ্ছে। ওই স্টেডিয়ামে এক লক্ষের বেশি আসন রয়েছে। ইডি সূত্রে দাবি, আয়োজক সংস্থার আধিকারিকদের বক্তব্য, ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছে। বাকি টিকিট, পাস বিনামূল্যে বিলি করা হয়। যদি বিনামূল্যেই তা বিলি করা হয়, তা হলে আয়োজক সংস্থার বিপুল লোকসানের মুখে পড়ার কথা। যা কোনও সংস্থারই কাম্য নয়, স্বাভাবিকও নয়। এই কারণে টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা রাখা হয়েছে বলেও ইডি সূত্রের দাবি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)